আজকাল রাস্তাঘাটে চলার উপায় নেই। যেদিকে তাকাই দেখি তিনদিনে ইংরেজী শিখুন, পাঁচ দিনে রকমারি রান্না শিখুন, এক ঘন্টায় ত্রিশটা যাদু শিখুন,ড্রাইভিং শিখুন (গাড়ির স্টিয়ারিং ধরা লাগবেনা!) আরো কত কিছু যে শর্টকোর্সের মাধ্যমে শেখানো হচ্ছে তার প্রমানতো পাচ্ছেন আমাদের কোমলমতি শিশু কিশোর তরুণ শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের পরীক্ষা দেখে। এভাবে আর কত?
আসুন একটা শোনা গল্প আবার শুনি নতুন করে
বিলগেটস লাইবেরিয়াতে নতুন অফিস নিয়েছে সেখানে দক্ষ একজন লোক নিয়োগ করা হবে। সারা দুনিয়ার অগণিত মানুষ আবেদন করেছে। কেউ কারো থেকে কম না। বিল গেটস চাইছিলেন সব প্রার্থী উপস্থিত থাকুক। সে জন্য তিনি টিএডিএর ব্যবস্থাও করেছিলেন। তো সে নিয়মে সবাই উপস্থিত হলো।
প্রথমে মাইকে ঘোষণা করা হলো যারা ওরাকল পারেন না তারা চলে যান। দেখা গেল অর্ধেকই ওরাকল পারে না।সেখানে একজন বাঙ্গালীও ছিল। সে মনে করলো এ আর এমন কি,শর্ট কোর্স করে শিখে নেব! তাই সে থেকে গেল। এর পর বলা হলো যারা সি++ এ কাজ করেন নি তারা চলে যান। তখন দেখা গেল আরো অর্ধেকের বেশি উঠে চলে গেল। বাঙ্গালী নিজেই নিজেকে বললো এ আর এমন কি শর্ট কোর্স করে শিখে নেব। একে একে বিলগেটস নানা অ্যাপলিকেশানের বিষয়ে জানতে চাইলে দেখা গেল আস্তে আস্তে প্রার্থী কমতে কমতে মাত্র অল্প কয়েকজন বাকি আছে।
বিলগেটস তখন বললেন যারা লাইবেরিয়ার ভাষায় কথা বলতে পারেন তারা বাদে বাকিরা চলে যান। দেখা গেল দুজন বাদে সবাই চলে গেছে। সেই দুজনের মধ্যে প্রিয় বাঙ্গালী ভাইটাও ছিল। সে মনে মনে আগের মতই ভেবেছিল এ আর এমন কি শর্ট কোর্স করে শিখে নেব।
বিলগেটস যখন দেখলেন দুজন প্রার্থী আছে এবং দুজনই সব যোগ্যতার অধিকারী অথচ তার মাত্র একজন লোক দরকার তখন তিনি ঘোষণা করলেন আপনারা দুজন লাইবেরিয়ার ভাষায় কথা বলুন।
বাঙ্গালী দমবার পাত্র নয়। পার্ট যখন নিয়েছি পার্ট আরো নেব তবুও চাকরির আগা মাথা দেখেই ছাড়বো ভেবে সে খাটি বাংলায় বলে উঠলো ভাই আমার নাম সবজান্তা শমশের,আপনি ভাল আছেনতো? আমাদের বাঙ্গালী সাহসী ভাইকে অবাক করে দিয়ে ওপাশ থেকে দ্বিতীয় ব্যক্তি বললো হ্যা ভাই ভাল আছি। আমার নাম শাফিক খান,আমি ভাল আছি। এর পর তারা দুই বাঙ্গালী অনর্গল কথা বলতেই থাকলো। বিলগেটস লাইবেরিয়ার ভাষা বুঝতো না,বাংলা ভাষাও বুঝতো না। তাই সে মনে করলো বাহ তারা দুজনেই কত সাবলিল ভাবে লাইবেরিয়ার ভাষায় কথা বলছে। শেষে সিদ্ধান্ত পাল্টে দুজনকেই নিয়োগ দিলেন।
এটা একটা কল্পিত গল্প। এখন গুগল ট্রান্সলেটরতো আছেই সাথে দোভাষীও আছে। বাঙ্গালীরা শুধু কল্পনায়ই সেরা নয় সত্যিকার অর্থেও তারা যে সেরা তার প্রমান তারা বিভিন্ন ভাবে রাখছে। তালিকা করলে সেটা বিশাল লম্বা হবে। তবে শিক্ষা ব্যবস্থার যে বেহাল দশা দেখছি তাতে আমাদের ভবিষ্যত যে কোন দিকে যাচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। সবাই ছুটছে শর্টকোর্সের পিছনে। এভাবে শর্ট করতে করতে না জানি আমাদের শর্টসার্কিট হয়ে যায়।
১৭ জুলাই ২০১৬,দৈনিক ইত্তেফাক।