খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাসটা বরাবরই ধরে রেখেছেন।৩০ ডিসেম্বর সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে ইজি চেয়ারে বসলেন।বয়স ৯৭ বছর হয়ে গেলেও মনের দিক থেকে তিনি যেমন এখনো জোয়ান তেমনি নিজ পায়েই দাড়াতে,হাটতে পারেন।চোখের চশমার পাওয়ার অবশ্য বেড়েছে বেশ।এক কাপ চা হাতে নিয়ে টেলিফোন করলেন তাজকে।বললেন তুমি সোজা আমার বাড়ীতে চলে আসো।একসাথে মিলে বের হবো।
নুরজাহান রোড থেকে নজরুলকেও সাথে নিও।টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে তাজ বললেন ঠিক আছে আমি আসছি।তাজ এক মুহুর্ত দেরি না করে নিজের ভক্সওয়াগন নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।নেতার কথা মত নুরহাজান রোড থেকে নজরুল সাহেবকে সাথে নিয়ে রওনা হলেন নেতার বাসার দিকে।নেতা তাদের দুজনকে দেখে বসতে বললেন।কাজের লোককে চা দিতে বলে তিনি উঠে দাড়ালেন।ওরা চা খেতে খেতে যেন রেডি হয়ে আসতে পারেন।মিনিট পাচেকের মধ্যেই নেতা ফিরে আসলেন।তার পর একসাথে বেরিয়ে পড়লেন।যেতে হবে শুক্রাবাদ উচ্চবিদ্যালয়ে।ভোট দিতে হবে।গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে প্রত্যেকের উচিত যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া।
গাড়ী চলাচল নিষিদ্ধ হলেও তাদের গাড়ি কেউ আটকালো না।এই গাড়ির নম্বরই আলাদা।গাড়ি যখন শুক্রাবাদ স্কুলের সামনে নামলো তখন নেতা ভীষণ অবাক হলেন।কোথাও ভোটারদের লম্বা লাইন নেই।তিনি গাড়ী থেকে বাকি দুজনকে সাথে নিয়ে নামলেন।হেটে হেটে ভিতরে ঢুকলেন।কয়েকবার বাধার সম্মুখীনও হলেন। তার পর যখন ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের কাছে নিজের ভোটার নাম্বার দিলেন তখন তারা জানালো আপনার ভোটতো আগেই দেওয়া হয়ে গেছে!এ কথা শুনে নেতার বিস্ময়ের সীমা থাকলো না।সাথে তাজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন এবং ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।তারাও তাদের ভোটার নাম্বার দিয়ে জানতে চাইলেন সেগুলোর কি খবর।
পোলিং এজেন্ট জানালো আপনাদের ভোটও দেওয়া হয়ে গেছে।তিন মহান নেতা হতাশ হয়ে বেরিয়ে আসলেন।নিজেদের ভক্সওয়াগনে চড়ে যেতে যেতে নেতা বললেন বুঝলে তাজ আমার স্বপ্ন সত্যি হলো না। সোনার বাংলা গড়বো বলে যে দেশ স্বাধীন করেছিলাম তা আর হলো না। নৌকার হাল বুঝি বেকে গেলো।নৌকার পরাজয় দেখবো ভাবতে পারিনি। অপশক্তিরা যেখানে জোর করে আমার ভোটটাও দিয়ে দিয়েছে সেখানে নৌকার জয় হবে কি করে।
তাজউদ্দিন আর সৈয়দ নজরুলও হতাশ হলেন।ধানমন্ডি ৩২ এ গিয়ে চিলেকোঠায় বসে থাকলেন নিরবে।সন্ধ্যার পরফলাফল ঘোষণা হলো।দেখা গেলো শুক্রাবাদ স্কুলে সব ভোট নৌকায় পড়েছে,অন্য দল একটাও ভোট পায়নি।নেতার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।তিনি শুনতে পেলেন বাইরে মিছিল হচ্ছে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চলেছি।বুকে হাত দিয়ে তিনি চেয়ারে বসে পড়লেন।তাজউদ্দিন আর সৈয়দ নজরুল এগিয়ে আসলে তিনি জানতে চাইলেন তাজ তুমিকি বলতে পারো ওরা আমার কোন আদর্শ বাস্তবায়ণ করছে?
তাজউদ্দিনের মুখে কোন কথা বের হলো না।সৈয়দ নজরুল নেতার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন।তারতো বলার মত ভাষা নেই।
২ জানুয়ারি ২০১৯