ভ্যাকেশানে বাড়িতে এসেছি।বন্ধুদের নিয়ে মাস্তি করে বেড়াচ্ছি।এক দিন আমার পিচ্চি বোনটা বললো ভাইয়া কালকে আমার ম্যাথ এক্সাম কিন্তু জ্যামিতি বক্সে সব ঠিক থাকলেও চাঁদাটা পাচ্ছিনা। তুই হারু কাকার দোকান থেকে আমার জন্য একটা চাঁদা এনে দিবি।আমি আবার আমার পিচ্চি বোনের মহা ভক্ত।তাকে বললাম তুইতো সামান্য একটা চাঁদা চেয়েছিস এ আর এমন কি, এক্ষুনি এনে দিচ্ছি।তুই যদি চাঁদার বদলে চাঁদ আনতে বলতি হয়তো পারলে তাও এনে দিতাম।আমার বোনটা জানে যে ভাইয়া একটুও বাড়িয়ে বলছেনা।
আমি সজলকে সাথে নিয়ে প্রথমে গেলাম আনাসদের বাড়িতে।একই এলাকায় সবার বাসা আবার একই সাথে পড়ি।ভ্যাকেশানে তাই আড্ডাও হয় চরম।ওদের দুজনকে সাথে নিয়ে সোজা চলে গেলাম হারু কাকার দোকানে।আসে পাশে আর কোন দোকান না থাকায় হারু কাকা বেশ জমিয়ে ব্যবসা করছে।হারু কাকা আমাকে আবার একটু অপছন্দ করে।এর কারণ কি হতে পারে তা আমি অনুমান করেছি।তার ছেলেটা আমার সাথে একই স্কুলে পড়তো।ছাত্র হিসেবেও বেশ ভাল ছিল এবং আমার সাথে সেও ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল।কিন্তু ভাগ্যের ফেরে সে চান্স পায়নি আর আমি পেয়েছি।এতেই হারুকাকার পিত্তি জ্বলে যাওয়ার মত অবস্থা।সেই থেকেই সম্ভবত হারু কাকা আমাকে দেখতেই পারেনা।
ভ্যাকেশানে এসে হারুকাকার মুখোমুখি হতে আমার বেশ ভালই লাগে।মনে হয় আমি কলেজেই আছি কারণ হারুকাকা যেন সিনিয়র ক্যাডেটর মত আমাকে ধরাশায়ী করতে চেষ্টা করছে আর আমি নানা ভাবে তাকে বোকা বানাচ্ছি কিংবা উল্টো ফাদে ফেলছি।সাপে নেউলে ব্যাপার বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে আমি আর হারু কাকার একই অবস্থা।অথচ আনাস বা সজলকে নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা নেই।
ছোট বোনের জন্য চাদা কেনার জন্য তার দোকানে গিয়ে দাড়ালাম।সে এমন ভাবে আমার দিকে তাকাল যেমন করে জুনিয়র ভয়ে ভয়ে সিনিয়রের দিকে তাকায়।আমি বললাম হারু কাকা চাদা দেন।আমার কথা শুনে হারু কাকার মুখ হা হয়ে গেল।কিছুটা সময় নিয়ে তিনি বললেন কিসের চাদা?তোকে চাদা দেব কেন?আমিও দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে গেলাম।বললাম আমার বোনের জন্য চাদা দিবেন।হারু কাকা বললেন কারো জন্যই কোন চাদা দেব না। এটা কি মগের মুল্লুক পাইছিস যে চাইবি আর চাদা দেব?কত্ত বড় সাহস তোর।
আমার রাগ চরমে উঠে গেছে।কলেজে থাকতে সিনিয়রদের যন্ত্রনায় অস্থির ছিলাম।ভ্যাকেশানে বাড়ি এসেও শান্তি নেই।ছোট বোনের জন্য আমি জান কোরবান করতে পারি আর এতো কোন হারু কাকা।আমি রেগে মেগে বললাম চাদা দিবেন না মানে?চাদা যদি নাই দিবেন তাহলে দোকান খুলে বসে আছেন কেন?আমি যখন হারু কাকার সাথে কথা বলছি আনাস আর সজল তখন দূরে দাড়িয়ে গল্প করছে।এদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে তাদের জানা নেই।আমি আরো হুমকি ধামকি দিলাম হারু কাকাও দমবার পাত্র নয়।সে কোন ভাবেই আমাকে চাদা দিল না।রাগে ফুলতে ফুলতে বললো এই টুকু দুই আঙ্গুলের ছেলে সে এসেছে আমার কাছে চাদা চাইতে। তাও আবার তার পুচকে বোনের জন্য।ক্লাস সেভেনে পড়া একটা ছেলে হারু কাকার মত একজনের সাথে পেরে উঠবে না এটাই স্বাভাবিক।আমি হার মেনে ফিরে গেলাম।কিন্তু আনাস বা সজলের কাছে নিজের হারের কথা কোন ভাবেই স্বীকারকরা যাবেনা।
কাছে যেতেই ওরা বললো কিরে এক চাদা আনতে এতো দেরি হয়?আমি বানিয়ে বললাম বলিসনা দোস্ত হারু কাকা আমাকে অনেক ভালবাসেতো তাই অনেক গল্প করলাম।তবে চাদা পাইনি।ওনার কাছেনেই। কি আর করা আনাস আর সজল বললো চল তাহলে কোথাও ঘুরতে যাই।এর পরতিন বন্ধু ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম।সারা বিকেল ঘুরে যখন সন্ধ্যা নামলো তখন বাড়ির উঠোনে পা দিতেই আৎকে উঠলাম।দেখি উঠোন ভর্তি মানুষ।মাতবর কাকা মেম্বার কাকা সবাই আছেন।কি হয়েছে বিষয়টা বুঝতে পারিনি।ভাল করে তাকিয়ে দেখি এক পাশে হারু কাকাও আছে আর অন্য পাশে বাবা বসে আছেন।বাবার মূখটা ভারভার। আমি কাছে গিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলাম বিষয়টা কি।সবার আগে চোখ পড়লো হারু কাকার।সে বললো ওইতো গুণধর ক্যাডেট ফিরে এসেছেন।এবার বিচার করেন। এইটুকু একটা পোলা তাও ক্লাস সেভেনে পড়ে।সে কিনা চাদাবাজ হচ্ছে। ক্যাডেট কলেজে পড়ে এই বয়সেই চাদাবাজি শুরুকরেছে বড় হলে না জানি ব্যাংক ডাকাতিও করবে।
আমার বোনটা তখন আসে পাশে ছিলনা।কেউ বোধহয় আমার কোনকথা শুনবে না বলে পণ করেছে।আমি বিষয়টা বলতে চাইলেও কেউ বলার সুযোগ দিলনা। বাবা আমাকে কাছে ডেকে পিঠে দু ঘা বসিয়ে দিলেন।দেখি হারু কাকার মুখে বিটকেলে হাসি ফুটেছে। সিনিয়রদের হাতে অপদস্থ হতে দেখলে আমার কোনকোন ক্লাসমেট যেমন আনন্দ পেতো ঠিকই একই ভাবে আমাকে মার খাওয়াতে পারলে হারু কাকারও আনন্দের সীমাথাকেনা।বাবা দু ঘা মারার পর মেম্বার কাকাকে বললেন এই ছেলের বিচার তুমিই করো মেম্বার।নিজের ছেলের বিচার নিজে করতে গেলে অন্যরা মনে করবে আমি শিথিলতা দেখিয়েছি।
মেম্বার কাকাও দেখি আমাকে কিছুই প্রশ্ন না করে শুধু হারু কাকাকে প্রশ্ন করলেন।হারু কাকা একটা কথাও বানিয়ে বলেনি।তিনি বললেন ও দুই বন্ধুকে দূরে দাড় করিয়ে রেখে সোজাআমার দোকানে এসে আমার কাছে চাদা চেয়েছে।তার পর আমি চাদা দেবনা বলেছি আর সে রেগে অনেক তর্ক করেছে। ক্যাডেট কলেজে গিয়ে এই ছেলে পুরোপুরি গোল্লায় গেছে। না হলে কেউ বাপের বয়সীর কাছে চাদা চায়?আর চাদার জন্য ওভাবে ঝগড়া করে?
সবশুনে মেম্বার কাকা যখন আমার শাস্তি দিবেন বলে ঠিক করেছেন ঠিক তখন আমার পিচ্চি বোন এসে হাজির।সে এতো মানুষ দেখেও ঘাবড়ে না গিয়ে সোজা আমার কাছে এসে বললো ভাইয়া আমার কালকে ম্যাথ এক্সাম। তোকে না বললাম হারু কাকার দোকান থেকে একটা চাদা কিনে আনতে।তুই যাস নি?দে আমার চাদাটা দে।ওর কথা শোনার পর উপস্থিত সবাই থ হয়ে গেল।আমাকে আর কিছু বলতে হলো না।তখন উল্টো সবাই হারু কাকাকেই কথা শোনাতে লাগলো।এই ঘটনাটা এলাকায় জানাজানি হলো।তবে সবাই হেসে হেসে সেদিন থেকে আমাকে চাদাবাজ ক্যাডেট নাম দিয়ে দিল। ঘটনাটা আনাস আর সজলও জানতে পেরেছিল।ওরা শেষে পিসিসিতে গিয়ে রটিয়ে দিল এমসিসিতে ক্লাস সেভেনে এক চাদাবাজ ক্যাডেট আছে।অবশ্য ওরা না বললেও হত।আমি নিজেই কলেজে গিয়ে এটা সবাইকে বলেছি।এমনকি এ কান ও কান করতে করতে আমাদের এডজুটেন্ট স্যারের কানেও চলে গিয়েছিল।অ্যাডজুটেন্ট স্যারে মুখে কোন দিন হাসি দেখা যায়নি।কিন্তু রফিক কায়সার স্যারের মুখে পরে শুনেছি সেদিন নাকি অ্যাডজুটেন্ট স্যারও এটা শুনে হেসে ছিলেন।তার হাসির কারণ কলেজে ক্লাস সেভেনে অনেক প্রতিভাধর ক্যাডেটের উত্থান পতন হয়েছে কিন্তু চাদাবাজ ক্যাডেট এবারই প্রথম পয়দা হলো।খাকি চত্ত্বরে আজীবনের মত আমার পরিচয় অমোচনীয় কালিতে লেখা হয়ে গেল “চাদাবাজ ক্যাডেট” বলে।
জাজাফী
৯ জানুয়ারি ২০১৭