মানুষ মুক্তি চেয়েছিল
ট্রাফিকজ্যাম,কল কারখানার ধোয়া,যানবাহনের বিরক্তিকর আওয়াজ
আর জনসভায় রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেওয়া ভাষণ থেকে।
মুক্তি চেয়েছিল সমাজ থেকে,দৈনন্দিন রুটিন থেকে
ক্যারিয়ার,স্বপ্ন,কর্পরেট জীবনের দৈনিক অকাল্পনিক পরিশ্রম করা
বাচ্চারা মুক্তি চেয়েছিল স্কুলের ভারি ব্যাগের বোঝা বহন করা থেকে,
নিজের সক্ষমতার অধিক হোমওয়ার্ক থেকে।
ট্রাফিক পুলিশ মুক্তি চেয়েছিল সারাদিন ধুলোবালির মাঝে দাড়িয়ে
অবিরাম বেখেয়ালে ছুটে চলা গাড়ির বিরক্তিকর হর্ণ
আর বেপরোয়া চালক ও পথচারি থেকে।
পরিচালক প্রযোজকদের চাপে শিডিউলে নাকাল হওয়া
শিল্পীরাও মুক্তি চেয়ে ছিলো
কিন্তু কেউ মুক্তি দেয়নি।
না কোন স্কুল শিক্ষার্থীদেরকে মুক্তি দিতে পেরেছে প্রাধন শিক্ষক
না কোন মানুষ মুক্তি দিতে পেরেছে
রাজনৈতিক নেতাদের কানফাটানো ভাষণ থেকে
করপরেট জীবনে খেটে খাওয়া মানুষটিকে
কখনো মুক্তি দেয়নি তার উধ্র্বতন কর্তৃপক্ষ।
ট্রাফিক পুলিশকে মুক্তি দিতে পারেনি বিভাগীয় কমিশনার
ঘুম ঘুম চোখে জীবীকার তাগিদে যে বাস চালক
নিজের সাথে সাথে আরও কিছু মানুষের জীবনের ঝুকি বাড়িয়ে রোজ গাড়ি চালাতো
সেও কখনো মুক্তি পায়নি।
রূপালী পর্দার নায়ককে মুক্তি দেয়নি তার ব্যাস্ত শিডিউল
দুনিয়া জোড়া খ্যাতি নিয়েও
এতটুকু অবসর যাপনের অবাকাশ পায়নি লিওনেল মেসি।
পৃথিবীর কেউ কাউকে মুক্তি দিতে পারেনি
বরং প্রতিনিয়ত আরও অগণিত জালে বেঁধে রেখেছে।
মুক্তি চেয়ে চেয়ে ক্লান্ত মানুষগুলো যখন মুক্তির আশা ছেড়ে দিয়েছিল
ঠিক তখন একই সাথে সবাই মুক্ত হয়ে গেলো
ফুটবল মাঠে দাপিয়ে বেড়ানো মেসিরা মুক্তি পেলো
উইলো হাতে প্রচন্ড রোদে দাড়িয়ে থাকা থেকে মুক্তি পেলো বিরাট কোহলি।
সারা সপ্তাহ কাজের চাপে সন্তানকে আদর করে যে বাবা কোলে নিতে পারেনি
আজ সেও মুক্ত
চাইলেই সকাল সন্ধ্যা সন্তানকে বুকে নিয়ে গল্প আড্ডায় দিন কাটাতে পারে
কাজের বুয়ার রান্না খেতে খেতে রাধতে ভুলে যাওয়া মানুষটিও
ইচ্ছে মত শখের রান্না খাওয়াতে পারে স্বামী সন্তানকে।
দৈনন্দিন জীবনের গৎবাধা নিয়মের বেড়ালজাল থেকে আজ মুক্তি মিললেও
কেউ মুক্ত স্বাধীন নয়।
এ মুক্তি মানে ইচ্ছেমত পাখির ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো নয়
এ মুক্তি মানে প্রিয়জনকে বাহুডোরে বেধে সিনেপ্লেক্সে যাওয়া নয়
রিওক্যাফেতে মুখোমুখি বসে ধুমায়িত কফি খাওয়ার নয়।
এ মুক্তি মানে পার্কের বেঞ্চিতে বসে বাদাম খেতে খেতে গল্প করা নয়
মুক্তির নামে এও এক বন্দীত্ব।
তবুও ভালো,ঘরে থাকি,প্রিয়জনকে সময় দেই,বই পড়ি আর সিনেমা দেখি
এমন সুযোগ একশো বছরেও একবার আসে না
শুধু মুক্তি মেলেনি সাদা অ্যাপ্রোনের,স্টেথেস্কোপের
কমলা রঙের পোষাক পরা মানুষগুলোর
মুক্তি মেলেনি জলপাই রঙা পোষাকের
সমস্ত পৃথিবীকে মুক্তির সাথে সাথে তারা বন্দীত্ব বরণ করেছে
আর সবাইকে ভালোরাখার আশা
তবে আপনি ঘরে থাকুন,তাদেরকে ভালো রাখুন।
25 মার্চ 2020