লেখকঃ নুসরাত জাহান মুনিরা
বিকেলটা খুব সুন্দর ছিলো।ফুরফুরে হিমেল হাওয়ায় খোলা চুল উড়ছিলো।আম্মু বলার পরও সেদিন আমি দুই বেণী করিনি।কেউ কেউ আছে যারা চুলে দুটো বেণী দেখলে পাগল হয়ে যায়।এমনই একজনকে আমি দেখেছি ভার্সুয়াল জগতে।যে ক্ষণে ক্ষণে হাসে,হাসায় কিন্কু কখনো কাউকে কাদায় না।বিকালে মেসেঞ্জারের লিস্ট দেখতে যেয়ে জাজাফী নামে একটি আইডি দেখে এড দিয়েছিলাম।ছবিতে যে বাচ্চাটিকে দেখেছি খুব মায়াবি চেহারা।মুখে সুন্দর করে যে আল্পনাটি আকা তা আমাদের হৃদয়ের কথা বলে।ওখানে লেখা অমর একুশে।এক জীবনে এর চেয়ে মিষ্টি আর কি কথা থাকতে পারে।কিন্তু ওর চুলগুলো,ওর চেহারা কোন কিছুর সাথেই অমর একুশে কথাটি মেলে না।ওকে দেখলেতো কোন ভাবেই মনে হয়না ও বাঙ্গালী।আমার বান্ধবী আনুশকা বললো এমনওতো হতে পারে ওই দেশে যখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় তখন সে অন্যদের দেখাদেখি অমর একুশে লিখেছে।
আমারও তাই মনে হলো।কিন্তু কোন ভাবেই কথা হচ্ছিলো না।কয়েকদিন পর তার সাথে আমার কথা হলো।এই ছেলেটিকে আমার খুব জিনিয়াস মনে হলো।তার কথা বলা,তার চিন্তা চেতনা সবই জিনিয়াসদের মত।কিন্তু সে নিজে মানতেই চায় না যে সে অনেক জিনিয়াস।চৈমনি নামে একটি রাজ্য আছে।সে হলো সেই রাজ্যের রাজপুত্র।আমাকে সে নিজে বলেছে এটা।আমি অবাক হইনি।তবে আমি ওয়ার্ল্ড ম্যাপ খুজে কোথাও চৈমনি রাজ্যের অস্তিত্ব পাইনি।এটা যখন তাকে বললাম তখন সে হেসে দিয়ে বললো তুমি কি করে চৈমনি রাজ্যের কথা জানবে সেটাতো পাতালপুরীতে।পাতালপুরী কথাটা আমার জানা আছে।সাগরের নিচে থাকে রুপকথার গল্পে পড়েছি।আমি বললাম আচ্ছা জাজাফী তুমিকি তবে রুপকথার গল্পের রাজপুত্র?সে মাথা নেড়ে বললো হ্যা আমি রুপকথার রাজপুত্র তবে আমাকে ছুয়ে দেখা যায় কিন্তু রুপকথার রাজপুত্রদের ছুয়ে দেখা যায় না।
ম্যানহাটনের এক নিরিবিলি রাস্তায় হাটছিলো এক নারী।তার কালো চুল বাতাসে উড়ছিলো।সে পথ চিনছিলো না এমন সময় এক ছেলে তার পাশে পাশে হাটতে শুরু করলো আর জানতে চাইলো তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি দূর বিদেশ থেকে এখানে এসেছ এবং কিছু চিনতে পারছো না। তুমি চাইলে আমি তোমাকে হেল্প করতে পারি।মেয়েটি জানালো আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে ইকোনমিক্স এর উপর পোষ্ট ডক্টরাল করতে।ছেলেটি জানালো সেও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিমার সায়েন্স নিয়ে পিএইচডি করছে।তার পর শুরু হলো গল্প আড্ডা জানাশোনা এবং একদিন সেই ঘরে আলোর রোশনাই হয়ে আবির্ভাব হলো এক রাজপুত্রর যে নিজেকে চৈমনি রাজ্যের রাজপুত্র বলে।
আমি শুনে অবাক হলাম।তুমি আমেরিকান!অথচ কি সুন্দর বাংলায় কথা বলো।ধুর বিশ্বাসই হয় না। তুমি নিশ্চই ঢপ মারছো।সে হাসে আর হাসে।তার হাসিটাও সুন্দর।আমি বলি পিচ্চি এতো হাসো কেন? সত্যিটা বলো।তখন জানা গেলো সে যখন গ্রেড ফোরে পড়ে তখন বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারে,একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে জানতে পারে তার পর মাকে বলে বাংলাদেশে ঘুরতে আসে।এই দেশের আলো বাতাস তাকে মায়াডোরে বেধে ফেলে তাই সে আর যেতে পারে না।যদি সত্যি সত্যিই জাজাফী আবার কোন দিন চৈমনি রাজ্যে ফিরে যায় তবে আমরা জানিনা আর কখনো রাজপুত্রটিকে দেখবো কিনা।চৈমনি রাজ্যের রাজপুত্রকে আমরা এখানেই রেখে দিতে চাই যদি সে থাকে তবে আকাশ থেকে তারার মত ফুলঝুরি নামবে তাকে স্বাগত জানাতে।
আমি যখন এসব কথা তাকে লিখছি সে তখন চুপটি করে পড়ছে।জিনিয়াসরা বুঝি না পড়ে থাকতে পারে? এটা বলতেই তার পড়াশোনা স্টপ। সে বললো সে জিনিয়াস না কিন্তু আমরাতো তা বিশ্বাস করি না।আমি অবশেষে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে তার নিকনেম সেট করলাম জাজাফী জিনিয়াস।