প্রিন্সিপাল স্যার ক্রিয়েটিভিটির খুব ভক্ত।ডিসিপ্লিন আর ক্রিয়েটিভিটি যদিও এক নয় তার পরও তিনি সব সময় এ দুটোকে বেশি পছন্দ করেন।আর কোন ক্যাডেটের মধ্যে যদি ক্রিয়েটিভিটি থাকে তবেতো কোন কথাই নেই।নিজের ক্রিয়েটিভিটির গুণে আমার বন্ধু ক্যাডেট কাইয়ুম জেপিশীপ পেয়ে গেল।
আমরা অভিবাদন জানালাম।প্রিন্সিপাল স্যার সবাইকে শুনিয়ে বললেন আজ তোমাদেরকে এমন একজন জেপি উপহার দিলাম যার মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি আছে।প্রিন্সিপাল স্যারের মুখে ক্রিয়েটিভিটির প্রশংসা শুনে ক্যাডেট কাইয়ুম সিদ্ধান্ত নিবে সে নিত্যনতুন ক্রিয়েটিভিটি দেখাবে। সে সিদ্ধান্ত নিল জুনিয়রেরা কেউ ভুল করলে ইডির ক্ষেত্রেও সে ক্রিয়েটিভিটি আনবে।অভিনবত্ব আনবে এবং নিজের স্টাইলে শাস্তী দেবে।
শেখ সাদীর একটা কথা ক্যাডেট কাইয়ুমের খুব পছন্দ।শেখ সাদী বলেছিলেন “মানুষের মুখের কিছু কিছু কথা বিষাক্ত তীরের আঘাতের চেয়েও বেদনা দায়ক”। সুতরাং কথার মাধ্যমে ঘায়েল করতে পারলেই সব থেকে আনন্দ।কারণ শরীরের শাস্তী একটু পর হারিয়ে যায় কিন্তু মনের শাস্তী দীর্ঘদিন মনে থাকে।
জেপিশীপ পাওয়ার মাত্র একদিন পরই সে ক্রিয়েটিভিটি দেখানোর মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গেল।ক্যাডেট জারিফ একাডেমিক ব্লক থেকে হাউসে ফিরছিল।তার দুই পকেটে দুই হাত আর উদাস উদাস ভাব।সে খেয়ালই করেনি সামনে কাইয়ুম দাড়িয়ে আছে।সে ফুটবল গ্রাউন্ডের দিকে তাকিয়ে হাটছিল বলেই হয়তো দেখতে পায়নি।কাইয়ুমকে যখন পেরিয়ে গেছে তখন মনে হলো কে যেন পাশ কাটিয়ে গেছে।সাথে সাথে ফিরে দেখলো জেপি কাইয়ুম ভাই।এটেনশান পজিশনে দাড়িয়ে জারিফ সাথে সাথে ওকে সালাম দিল।এবার তবে আসো ইদুড় বিড়াল খেলি বলে ক্যাডেট কাইয়ুম তার সামনে সিংহমুর্তি ধারণ করলো। ক্লাস সেভেনের জারিফের অবস্থা তখন যায় যায়।
সে নিশ্চিত আজ তার কপালে দুঃখ আছে। ক্যাডেটদের যত রকম পানিশমেন্ট আছে সব তাকে ভোগ করতে হবে। কিন্তু জেপি তাকে বললো নে আজ তোকে শাস্তি দেবার আগে একটু জ্ঞান বিতরণ করি। বলতো রবি ঠাকুরের আগের নাম কি? জারিফ কিছু না ভেবেই বললো ভাই রবী ঠাকুরের আগের নাম একটেল ঠাকুর। জেপির সামনে মশকরা হচ্ছে? বলে রুদ্র মুর্তি ধারণ করলো ক্যাডেট কাইয়ুম।জারিফ তখন আমতা আমতা করে বললো ভাই সত্যি বলছি আগে রবির নাম একটেল ছিল।কিন্তু সে ভুলে গেল জেপি তাকে রবীঠাকুরের নাম জিজ্ঞেস করেছে কোন ফোন কোম্পানীর নাম নয়।শেষে গতানুগতিক ধারায় শাস্তির ব্যবস্থা করা হলো।ফ্রগ জাম্প,সাইড রোল,ফ্রন্ড রোল কোন কিছুই বাদ রাখলো না।
ওইদিন বিকেলেই তাফসীর আর আলমকেও পাকড়াও হতে হলো জেপি ক্যাডেট কাইয়ুমের হাতে।তাফসিরকে প্রশ্ন করা হলো বলতো ফুটবল কোন লিঙ্গ? ক্যাডেট তাফসির ভয়েই উত্তর দিতে পারলো না।ক্যাডেট কাইয়ুম চোখ লাল করে আলমের দিকে তাকিয়ে বললো তুমি বলো উত্তর কি হবে?উত্তর দিতে পারলেই ছেড়ে দিব।নয়তো সারা মাঠে তোমাদের ক্রলিং করিয়ে ছাড়বো। আলম একটু কম ঘাবড়ালো এবং আমতা আমতা করে বললো ভাই ফুটবল স্ত্রী লিঙ্গ। ক্যাডেট কাইয়ুমের রাগ মাথায় উঠে গেল।ঠিক তখন আলমকে সাপোর্ট দিয়ে তাফসির বললো ভাই আলম ঠিকই বলছে ফুটবল স্ত্রী লিঙ্গ।দেখেন না কিভাবে ২২ জন প্লেয়ার ওটার পিছনে দৌড়াতে থাকে। মেয়ে না হলে কি আর দৌড়াতো?
একটু পরেই দেখা গেল একাডেমীক ব্লকের নিচেয় তাফসীর আর আলম একে অন্যের কান ধরে উঠবস করছে। জেপিশীপ পাওয়ার পর ক্যাডেট কাইয়ুম ভেবেছিলম ক্রিয়েটিভিটির শাস্তি দিবে কিন্তু তার আর হলো না।সে বুঝলো সোজা আঙ্গুলে যেমন ঘি ওঠেনা তেমনি ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে জুনিয়রদের শায়েস্ত করা যায়না।তাদের জন্য স্বয়ং শায়েস্তখানের মত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হয়।
শুধু শেখ সাদীর কথাই নয় ক্যাডেট কাইয়ুমের আরো একজনের কথা মনে পড়ে সে তার এক বড় ভাই।তিনি বলতেন মানুষকে বলে মারার চেয়ে কলে মারা ভাল।মানে বুদ্ধিতে ঘায়েল করলে সব থেকে ভাল হয়। ক্যাডেট কাইয়ুম তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কখনো জেপি হলে জুনিয়রদের ইডির ক্ষেত্রে একটু অভিনবত্ব আনবে।