খাবার নিয়ে আমি কোনোদিন আপত্তি করিনি। ছোট বলা থেকেই আমার যতদূর মনে পড়ে যখন যা জুটেছে তাই খেয়েছি এবং তৃপ্তির সাথে খেয়েছি। আর এখনতো বুঝতে শিখেছি তাই আমি শুধু হালাল হারাম বাছাই করা ছাড়া খেতে কেমন হলো না হলো কিংবা কি খেলাম না খেলাম, কতটুকু খেলাম তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। খাবার হালাল হলেই আমি খুশি। যতটুকু জুটেছে তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকি। এই কথাটিতে বিন্দুমাত্র বাড়িয়ে বলিনি আমি। আমিতো জানি আল্লাহ আমাকে কিছু না কিছু খাওয়ার তৌফিক দিয়েছেন। আর এই ঢাকা শহরে,এই দেশে এই পৃথিবীতে প্রতিদিন অগণিত মানুষ অভুক্ত থাকে। এক বেলা খাবারও জোটে না ঠিকমত। সেসব ভাবলেই আমার মধ্যে কখনো কোনো হতাশা কাজ করে না।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা বিশ্বে অন্তত ৮২ কোটি মানুষ রাতে না খেয়েই ঘুমাতে যায়। এমন নয় যে তারা ডাক্তারের পরামর্শমত না খেয়ে ঘুমায়। আসলে তারা খাবার জুটাতে পারে না বলেই না খেয়ে ঘুমায়।
বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ অতিরিক্ত খাবার খেয়ে খুব মোটা হয়ে গেছে।
যেখানে ৮২ কোটি মানুষ একবেলা কোনো খাবার পায় না, সেখানে সারা বিশ্বে প্রতি বছর অন্তত ২২ কোটি ২০ লাখ টন খাবার নষ্ট বা অপচয় করা হয়।
ইউরোপ এবং পূর্ব আমেরিকার মানুষ গড়ে প্রতি বছর ৯৫ থেকে ১১৫ কিলোগ্রাম খাবার না খেয়ে ফেলে দেয়। সাব সাহারান আফ্রিকা এবং এশিয়া অঞ্চলে খাবার ফেলে দেয়ার প্রবণতা সেই তুলনায় অনেক কম। এই দুই অঞ্চলের মানুষ গড়ে প্রতি বছর ছয় থেকে ১১ কেজি খাবার ফেলে দেয়।
আপনি যখন কোনো একটি খাবার স্বাদ হয়নি বলে অবজ্ঞা করছেন,কটুক্তি করছেন ঠিক সেই সময়ে এই ঢাকা শহরে,এই দেশে,এই পৃথিবীতে ৮২ কোটি মানুষ না খেয়ে থাকছে। খাবারই জুটছে না। যদি এই তথ্যটি মাথায় রাখেন এবং নিজেকে সেই মানুষদের কাতারে রেখে বিচার করেন তাহলে দেখবেন যে কোনো খাবারই আপনার কাছে অমৃত লাগবে। আপনিকি জানেন পৃথিবীতে এমনও দেশ আছে যেখানে কাদা দিয়ে বিস্কুট তৈরি করে সেটাই খায়! বলছিলাম হাইতির কথা।
ক্ষুধার জ্বালা কতটুকু হলে মাটি খাওয়া যায়?
আমরা যারা এই মুহূর্তে কম্পিউটার, মোবাইল বা যে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের স্ক্রিনে চোখ রেখে এই লেখা পড়ছি তাদের কারোরই সম্ভবত বিষয়টি নিয়ে ধারণা নেই।
এমনই এক পৃথিবী আমরা তৈরি করেছি যেখানে পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষ যখন শত শত খাবার নষ্ট করছে, তখন আরেক প্রান্তের মানুষ ক্ষুধা নিবারনের জন্য আয়োজন করে মাটির সঙ্গে লবন মিশিয়ে তা রোদে শুকিয়ে বিস্কিট বানিয়ে সংরক্ষণ করছে। প্রচণ্ড ক্ষুধায় সেই মাটির তৈরি অস্বাস্থ্যকর বিস্কুটই তাদের পেট ভরাচ্ছে।যে দেশটির বেশিরভাগ মানুষের দৈনিক মাথাপিছু আয় দুই ডলারেরও কম। সেই দেশের মানুষের কাছে ফল-মূলসহ যে কোনো পুষ্টিকর খাবার স্রেফ স্বপ্ন। পেট ভরানোই যেখানে কষ্টকর সেখানে পুষ্টির জোগান আসবে কোথা থেকে?
সেই দেশের একটা শ্রেণির মানুষ তাই পেট ভরাতে খান মাটির বিস্কুট। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই পেট ভরাচ্ছে বিশেষভাবে তৈরি এই বিস্কুট। হাইতিতে বেশ সহজলভ্যও এটি। বাজারের অন্য সব সামগ্রীর মতো এই বিস্কুটও বিক্রি হয় ঝুড়িভরে।
এখন একবার ভেবে দেখুন আপনি যা খেতে গিয়ে থুথু করে ফেলে দিচ্ছেন আর বলছেন স্বাদ হয়নি, এই খাবার কি খাওয়া যায়? তাহলে একবার ভাবুন ওদের মত হলে আপনি কী করতেন?
খাবার নিয়ে যখনই আপনার মনের মধ্যে খুতখুতানি জমবে তখনই এই ছবিটির কথা মনে করবেন। মনে করতে চেষ্টা করবেন জাজাফী নামে এক লোক কথা প্রসঙ্গে হাইতির লোকদের কথা তুলেছিল। রাস্তায় ঘুমানো মানুষের কথা বলেছিল। আর ইন্টারনেট থাকায় আপনি অনায়াসে নিজেই খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন কত মানুষ না খেয়ে থাকে। খাবারই জোটাতে পারে না। আসুন সন্তুষ্টচিত্তে খাদ্য গ্রহণ করি।
২৮ মার্চ ২০২৩