চারদিকে হতাশার গ্লানি নিয়ে কোন মতে বেঁচে আছে অনেকেই।যাদের অধিকাংশই মনে করে জীবন বুঝি শেষ হয়ে গেল।কিংবা যারা এখনো মনে করছে তারা হয়তো জীবনে কিছুই করতে পারবে না তাদের জন্য ছোট্ট একটা গল্প বলতে চাই। গল্প হলেও সত্য। আমাদের এক বড় ভাই তার নাম রাকিন।রাকিন ভাই শাহজালাল ইউনিভার্সিটিতে কোন একটা বিষয়ে পড়াশোনা করতো।বিষয়টা ছিল অপেক্ষাকৃত কম মুল্যের।তিনি কোন টিউশনীও করতেন না।সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকতেন।
পাশাপাশি রাকিন ভাইয়ের এক বন্ধু ছিল সে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিল ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। পাশাপশি সে দেশ সেরা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেওয়া এবং টিউশনীর মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় করতো।রাকিন ভাইয়ের বুয়েট পড়ুয়া ওই বন্ধুর নাম ছিল মুহিন। তো মুহিন ভাইয়ার আয় দেখে সবার খুবই ঈর্ষা হতো। ছাত্র জীবনে মুহিন ভাই এতো এতো আয় করছে সেখানে অন্যরা বাবার কাছ থেকে টাকা এনে পড়াশোনা করছে। কিন্তু ঈর্ষা করতো না শুধু রাকিন ভাই। সে মুচকি হাসি দিত।তবে রাকিন ভাই যেহেতু কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকতো তাই তার সামান্য কিছু আয় হতো।
এর পর বছর গড়িয়ে গড়িয়ে একদিন রাকিন ভাই বিএসসি শেষ করলেন। তার আর এমএসসি করা হলোনা। অন্যদিকে রাকিন ভাইয়ের বুয়েট পড়ুয়া বন্ধু মুহিন ভাই এমএসসি শেষ করে চাকরির আবেদন করতেই দেশের বড় একটা কোম্পানীতে চাকরি পেয়ে গেলেন। মাসিক বেতন ৩৫ হাজার টাকা। তিনি যদিও তার ছাত্র জীবনের চেয়ে কম বেতনে চাকরি শুরু করছেন তার পরও সবাই খুবই জেলাস। দেশ সেরা প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাচ্ছে বেতনও একেবারে কম নয়। আড্ডায় মুহিন ভাই তার চাকরি ও বেতনের কথা বলতেই কেউ কেউ ঈর্ষান্বিত হলো।শুধু ঈর্ষান্বিত হলোনা রাকিন ভাই। এটা দেখে মুহিন ভাই বললেন কিরে তুই কিছু বলছিস না যে।
শুনলাম এমএসসিটাও করতে পারিসনি। রাকিন ভাই বললেন আসলে একটা বিষয় নিয়ে ভাবছি আর তা হলো তুই ছাত্র থাকতে ৫০ হাজার টাকা আয় করতি আর এখন মাত্র ৩৫ হাজার। তোর স্ট্যাটাসতো কিছুটা কমে গেল। তুই এক কাজ কর তুই ওই কোম্পানীতে জয়েন করিস না। এটা শুনে সবাইতো থ হয়ে গেল। চাকরিতে জয়েন না করে তবেকি রাকিনের মত বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াবে? কথাটা মুহিন ভাই নিজেই বললেন যে চাকরিতে জয়েন না করে তবেকি তোর মত ভবঘুরে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াব? রাকিন ভাই এবার আরো একটা প্রশস্ত হাসি দিয়ে বললেন দোস্ত তুই তাহলে এক কাজ কর আমি তোকে প্রতি মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতন দেব,তুই আমার কোম্পানীতে জয়েন কর। ওনার কথা শুনে সবাই থ হয়ে গেল। সবাই ভাবলো রাকিন ভাই মজা করছে এবং তার যদি কোন কোম্পানী থাকে তবে সেটা হবে টোটো কোম্পানী।
রাকিন ভাই আর কিছু বললেন না অন্যদিকে মুহিন ভাই সেই বিখ্যাত কোম্পানীতে জয়েন করলেন। কোম্পানীর এমডির সাথে তখনো তার দেখা হয়নি কথাও হয়নি। ঠিক একমাস পর মুহিন ভাই কোম্পানীর এমডির সাথে দেখা করতে গেলেন জরুরী কাজে। তিনি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সিরিয়াল নিয়ে এমডির রুমে ঢুকলেন। এমডি স্যার তখন অন্যদিকে মুখ করে ছিলেন। মুহিন ভাইকে বসতে বলে তার দিকে ঘুরে তাকালেন। মুহিন ভাই থ হয়ে গেল। যে কোম্পানীতে সে চাকরি করে এবং যে এমডির সাথে দেখা করতে এসেছেন তিনি তারই সেই ভবঘুরে বন্ধু রাকিন ভাই।
রাকিন ভাইকে কোম্পানীর এমডি দেখে বুয়েট থেকে পাশ করা মুহিন ভাই থ হয়ে গেলেন। তখন রাকিন ভাই বললেন আমার কথা তোরা কেউ বিশ্বাস করিসনি।আমি যখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে ছিলাম তখনই ছোট্ট করে কোম্পানীটা শুরু করেছিলাম। তখন আমার হয়ে কাজ করতো মাত্র পাঁচজন মানুষ। তাদেরকে আমি ছয় থেকে আট হাজার টাকা করে বেতন দিতাম। আর এখন আমার কোম্পানীতে কাজ করে সাড়ে তিনশোজন মানুষ। যাদের মধ্যে তোর আমার মত অনেক ইঞ্জিনিয়ার আছে যাদের আমি বেতন দেই ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পযর্ন্ত।
তোরা যখন টিউশনী থেকে অনেক টাকা আয় করতি আমি তখন অল্প আয় করেও এমন একটা কিছুর স্বপ্ন দেখতাম যেটা ভবিষ্যতের পাথেয় হবে। টিউশনী থেকে সাময়িক অনেক টাকা পেলেও সেটা ভবিষ্যত নয় ভেবেই আমি ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করেছি। দেশের বাইরের মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদেরকে সার্ভিস দিয়েছি।মুহিন ভাই আর কোন কথা বলতে পারলেন না। তার কেবলই মনে হতে লাগলো সে বুঝি থ্রি ইডিয়টস সিনেমার একজন কুশীলব।
উদ্যোক্তা হতে টাকা লাগে এমন কথা মনে করে কেউ উদ্যোক্তা হওয়ার পথে থমকে দাড়লে সে এগোতে পারবেনা এটাই স্বাভাবিক। আপনি খোজ নিয়ে দেখুন বাজারে কোন কোন পন্য কোথায় কোথায় পাইকারি রেটে পাওয়া যায়। সেগুলো কোন কোন এরিয়াতে সহজলভ্য নয় সেটা জেনে সাপ্লাই দিন। এ জন্য আপনাকে টাকাপয়সার মালিক হতে হবে এমন কোন কথা নেই। ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে পাইকারী বিক্রেতা আপনাকে এমনিতেই পন্য দিবে। তার সাথে চুক্তি করবেন পন্য বিক্রির পর টাকা দিবেন। সে ক্ষেত্রে তাকে কিছু টাকা বেশি দিতে হলে তাও দেওয়া যাবে।
আজকে ইন্টারনেটের এই যুগে ইউটিউব থেকে অনেক কিছুই শেখা যায়। শিখে ফেলুন দুই চারটা ভাষা। তার পর লেগে পড়ুন প্রফেশনাল ট্যুরগাইডের কাজে। কোন কোম্পানীর হয়ে কাজ করতে হবে এমন নয়। আপনি এয়ারপোর্টে গেলেই বিদেশী ট্যুরিষ্ট পেতে পারেন। পাশাপাশি ফেসবুক ইন্টারনেটে বাইরের দেশ থেকে আগত ট্যুরিষ্টদের সাথে কথা বলুন। যোগাযোগ করুন। দেখবেন তারা যখন দেশে আসবে নিজেরাই আপনাকে খুঁজে নেবে। তখন তাদের সাথে ঘন্টা কিংবা দিন হিসেবে পারিশ্রমিক ধার্য করুন।
বিখ্যাত ডাক্তার এম আর খান যখন বিদেশে এমআরসিপি ডিগ্রি নেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন তখন রেল স্টেশানে একজন তার লাগেজ ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছিল।তাকে দেখে শিক্ষিত মনে হওয়ায় এম আর খান জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির ছাত্র। কাজকে কখনো ছোট মনে করা যাবেনা। পাছে লোকে কিছু বলে এটা ভেবে থমকে দাড়ালে লসটাতো আপনারই হবে। শুরু করুন। শুরু করলে তবেইনা কোন না কোন ফল পাবেন। গাছ না লাগিয়েতো ফলের আশা করা যায়না। আগে গাছ লাগান তার পর অপেক্ষা করে দেখুন,ফল না পেলেও সেই গাছ বিক্রি করেই আপনি লাভবান হবেন।
—-#জাজাফী
৯ এপ্রিল ২০১৭