সমাজ আপনাকে হাতি বানাতে চায়! আপনিকি সেই হাতি হবেন নাকি মানুষ হবেন সেটা একটু ভাবুন। আমার কথায় ঘাবড়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই। আসুন হাতির গল্পটি শুনি তার পর নিজেদের সাথে মিলিয়ে দেখি সত্যিই আমরা সেই হাতি হচ্ছি নাকি মানুষ হচ্ছি।
পাবত্য চট্টগ্রামের রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে এক লোক দেখলেন রাস্তায় বিশাল একটা হাতি একটা ছাগল বাধা রশি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছে।লোকটি অবাক হয়ে হাতির মালিককে বললেন আপনিতো মহা বোকার বোকা। এতো বিশাল একটা হাতিকে এই ছাগল বাধা রশি দিয়ে বেধেছেন কেন? ওতো ছিড়ে চলে যাবে। মালিক একটু হাসি দিয়ে বললেন ওই বিশাল হাতিটা এই সামান্য রশিটাও ছিড়তে পারবেনা। লোকটা অবাক হয়ে জানতে চাইলো কেন ছিড়তে পারবেনা। হাতির গায়েতো বিশাল শক্তি। সে এর চেয়ে দশগুন মোটা রশিও অনায়াসে ছিড়ে ফেলতে পারে। বিশাল বিশাল গাছ শুড় দিয়ে টেনে উপড়ে ফেলতে পারে। আর এ তো সামান্য ছাগল বাধা রশি।
তার কথা শুনে হাতির মালিক বললেন আপনার কথা ঠিক আছে তবে এই বিশাল হাতিটি এই সামান্য রশিটিও ছেড়ার ক্ষমতা রাখেনা। ও যখন খুব ছোট ছিল তখনও এই রশিটা দিয়েই ওকে বেধে রাখতাম আর ও তখন অনেক চেষ্টা করতো এটা ছিড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সেই সময়ে ও এতোটাই ছোট ছিল যে এই রশিটাও ছেড়া ওর পক্ষে অসম্ভব ছিল। ফলে দিনের পর দিন চেষ্টা করেও সে ছিড়তে পারেনি। এটা ওর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। ওর মনের মধ্যে গেথে গেছে যে রশিটা আমি ছোটবেলায় ছিড়তে পারিনি সেটা আর কোন দিনই ছিড়তে পারবো না।
ও ভেবেছে রশিটা ছেড়া ওর জন্য অসম্ভব ব্যাপার আর সেই বিশ্বাসের কারণে ও আর এখন চেষ্টাও করেনা। ওর মনোবল সেই ছোটবেলায় ভেঙ্গে গেছে। ও যদি জানতো যে ওকে যে রশি দিয়ে বাধা হয়েছিল সেটা ছোট বেলার জন্য যথেষ্ট শক্ত ছিল কিন্তু বড় বেলার জন্য তা নগন্য তুচ্ছ তাহলে ও ছিড়ে বেরিয়ে যেতে পারতো। লোকটা বুঝলো হাতির মনোবল সেই ছোটবেলায় এমন ভাবে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে যে সে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। তাই তার বাল্যকালে বেধে রাখা রশিটিও ছিড়তে পারবেনা বলে মনে করে চেষ্টাও করছেনা। অথচ যুগ বদলে গেছে,সে চেষ্টা করলেই কিন্তু রশিটা ছিড়ে মুক্ত হতে পারে।
এখন মিলিয়ে দেখুন এই গল্পটার সাথে আপনার জীবনের মিল আছে কিনা। প্রতিনিয়ত আপনি কিছু করতে চাইতেন আর আপনার আশেপাশের সবাই আপনাকে বলতো তুমি পারবেনা,এটা তোমার জন্য অসম্ভব কাজ,তুমি শুধু শুধু সময় নষ্ট করছো। যা পারবেনা তার পিছনে সময় দিয়ে লাভ কি। নানা জন এভাবে প্রতিনিয়ত আপনার উদ্যোগকে কটাখ্য করেছে,আপনার মনোবল ভেঙ্গে দিয়েছে,আপনাকে বুঝিয়েছে যে আপনি অক্ষম।
আপনাকে দিয়ে ওই কাজটা হবেনা।আর আপনি তাদের কথাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন নিজে একটিবারও চেষ্টা করে দেখেন নি।আপনার নিজের উপর কোন বিশ্বাস নেই আস্থা নেই কিন্তু ওই সব পাছে লোকে কিছু বলের উপর বিশ্বাস আছে।আপনি কি পারেন বা না পারেন সেটা আপনি ছাড়া পৃথিবীর আর কারোতো জানার কথা নয়। কি করে জানবে বলুন? নিজেকে একবার প্রশ্ন করে দেখুন।
যদি কোন কিছু আপনি পেরে থাকেন সেটাও সবার আগে আপনারই জানার কথা আর যদি কোন কিছু না পেরে থাকেন সেটাও সবার আগে আপনারই জানার কথা। কিন্তু আপনি নিজে সেসব জানেন না বরং জানে অন্য কেউ।এই অন্য কেউরাই আপনাকে সেই হাতি বানিয়ে রেখেছে যে হাতি ছোটবেলার সেই বিশ্বাসটাতেই অটুট থেকেছে। আপনি কি হাতি? আপনি কি মানুষ নন? তাহলে হাতিটার মত সেই বিশ্বাসে অটুট থাকবেন কেন? অন্য লোকে বলবে আপনি পারবেন না আপনাকে দিয়ে এটা হবেনা আপনি শুধু শুধু সময় নষ্ট করছেন এই সব কথা কেন আপনি বিশ্বাস করে বসে থাকবেন?আপনার ক্ষমতা আছে কিছু করে দেখানোর কেবল মাত্র সাহস নিয়ে শুরু করুন। তার পর দেখিয়ে দিন আপনার শক্তি।
আপনি হয়তো চল্লিশ কেজি ওজনের একটা পাথর ওঠাতে পারবেন না তার মানেতো এই নয় যে আপনি পাথরই ওঠাতে পারেন না। আপনি দুই কেজি ওজনের একটা পাথরতো ওঠাতে পারেন।
আমি বলেছি সমাজ আপনাকে আমাকে সেই হাতি বানাতে চায় আর আমরা সেই বোকা হাতির মত সমাজের কথা শুনে বোকা হয়ে বসে থাকি।কান নিয়েছে চিলে শুনে চিলের পিছনে ছুটি কানে হাত দিয়ে দেখিনা। আইকারুস আর দাইদালুস নামের দুই ভাই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন নিয়ে কতবার যে গাছের উপর থেকে ঝাপিয়ে পড়েছিল তার হিসেব নেই। তার পরই না তারা আকাশে উড়েছিল।পাখির মত ডানা মেলেছিল। আর একবার চিন্তা করে দেখুন এ কালের সেরা বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর কথা। ডাক্তার যাকে বলে দিয়েছিল তিন থেকে পাচ বছরের মধ্যে মারা যাবে তিনি কিন্তু চল্লিশ বছরের অধিক সময় ধরে সেই সব বিশ্ব বিখ্যাত ডাক্তারদের কথাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বেচে আছেন এবং সারা বিশ্ব যার দিকে তাকিয়ে আছে।
আপনার আমার ঘাড়ের উপরে কি একটা মাথা নেই? সেই মাথায় কি চিন্তা করার কোনই ক্ষমতা নেই? যদি থেকে থাকে তাহলে অন্যের কথা শুনে বসে থাকবেন কেন? নিজে চিন্তা করে দেখুন। তার পর শুরু করুন।অন্ধকার সরে গিয়ে ঠিকই আলো আসে। লোডশেডিং বেশিক্ষণ থাকেনা। আলো আসবেই। শুধু সময়ের ব্যবধান মাত্র। বঙ্গবন্ধু তার সাত মার্চের ভাষণে বলেছিলেন তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। আমরা যে স্বাধীন একটা পতাকা পেয়েছি,দেশ পেয়েছি তা কিন্তু ওই যা কিছু নিয়ে প্রস্তুত থাকার কারণে। সুতরাং অন্যে আপনাকে হাতি বানিয়ে রাখতে চাইলে আপনি থাকবেন কেন? আপনিও আপনার যা কিছু আছে তাই নিয়েই ঝাপিয়ে পড়ুন। সাফল্য একদিনে আসেনা।বিশ্ব বিখ্যাত কেএফসির প্রতিষ্ঠাতা স্যান্ডার্সের কথা চিন্তা করে দেখুন। তিনি হতাশ হতে হতে ৬০ বছর বয়স পার হওয়ার পর সফল হলেন। আপনার বয়সতো এখনো ষাট হয়নি তাহলে আপনার ভেঙে পড়ারতো কিছু নেই।
শুরু করুন এবং দেখুন ফলাফল পাবেনই। একটা গর্ত খুড়ে একটা আমের আটি সেখানে রেখে দিলে একদিন না একদিন সেটা থেকে চারা গাছ বের হবেই। হয়তো সেই আটিটা নষ্ট হলে চারাগাছ বের হবেনা তাহলে আপনি আরো কয়েকটা গর্ত খুড়ে সেখানেও কয়েকটা আটি রাখুন।মনে রাখবেন সব গুলো আটি কিন্তু নষ্ট নয়। আপনি একবার কোন কিছুতে ফেইলিওর হয়েছেন মানে এই নয় সারা জীবনে আর কোন দিন বিজয়ী হবেন না।সুতরাং সমাজ আপনাকে সেই হাতি হতে বললে আপনি চাইলে হাতি হয়ে থাকতে পারেন নতুবা আজই এখনি শুরু করুন। খাতা কলম নিয়ে বসে যান এবং পরিকল্পনা করুন আপনি ঠিক কোন কাজটি নিয়ে এগোতে চান।সফলতা আসবেই। ঠিক যেমন মেঘ কেটে গেলে সুর্য উকি দেয়।
—– #জাজাফী
৯ এপ্রিল ২০১৭