রাসেলের বাবা এক্স ক্যাডেট। এক প্যারেন্টস ডেতে তিনি আসলেন আমাদের কলেজে।এর আগে কোন প্যারেন্টস ডে তে তিনি আসতে পারেননি। দেশের বাইরে থাকার কারণে সব সময় রাসেলের আম্মুই প্যারেন্টস ডে গুলোতে কলেজে আসতেন ছেলের সাথে সময় কাটাতে। সেবার ছুটিতে দেশে থাকায় রাসেলের বাবা এলেন।রাসেল আগেই আমাকে বলেছিল ওর বাবা এক্স ক্যাডেট। আমাদের অন্য বন্ধুদের অনেকেই এই তথ্যটা জানতো না।একসময় রাসেল অন্য এক আংকেলের সাথে কথা বলছিলেন আর আমি ওর বাবার সাথে গল্প করছিলাম। এমন সময় কোথা থেকে যেন মাহবুব ছুটে আসলো।আমার পাশে রাসেলের বাবাকে দেখে মনে করলো তিনি সম্ভবত আমার বাবা। সে বললো কিরে তোর বাবা নাকি? কথাটা রাসেলের বাবা শুনলো কিনা জানিনা। আমি বললাম না উনি রাসেলের বাবা। আর জানিস উনি এক্স ক্যাডেট।
মাহবুব হাত এগিয়ে দিয়ে সালাম জানিয়ে বললো ভাই শুনলাম আপনি এক্স ক্যাডেট। তা কোন কলেজ ছিল আপনার? তিনি কিছু একটা বলতে গেলেন আমি মাহবুবের হাত ধরে টানতে টানতে দূরে সরিয়ে নিয়ে বললাম গাধা তোর ক্লাসমেট রাসেল ও তোর ভাই আবার তার বাপও তোর ভাই হয় কি করে? মাহবুব বললো তুই আকাশের দিকে তাকিয়েছিস কখনো? আমি বললাম তাকাবো না কেন? প্রতি পুর্নিমাতেইতো আমি হাউসের ছাদে গিয়ে ভরা জোছনায় ভেসে যাই,চাঁদ দেখি,সেটাতো তুইও জানিস। মাহবুব বললো চাঁদকে তুই ছোট বেলা কি ডাকতি? আমি মনে করে বললাম চাঁদকে আমি মামা ডাকতাম। সে বললো তোর আম্মু চাঁদকে কি ডাকে?ভেবে দেখলাম আম্মুও চাঁদকে মামা ডাকে। সে বললো তোর ভাই কিংবা কাকা কিংবা দাদা তারা চাঁদকে কি বলে ডাকে? আমি বললাম গাধা সবাইতো কমন ভাবে চাঁদকে চাঁদমামা বলেই ডাকে।
মাহবুব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো আমিতো তোকে এটাই বুঝাতে চাইছিলাম যে চাঁদ যেমন কমনলি সবার মামা তেমনি যে কোন এক্স ক্যাডেটই কমনলি অন্য ক্যাডেটদের ভাই।এমনকি সে যদি নিজের বাপও হয় তবে তাকেও ভাই বলা যায়।আমি আর কি বলবো। এতো বড় যুক্তিবাদির সাথেতো যুক্তিতে পারা যাবেনা তাই বললাম ঠিক আছে তোর ছেলে মেয়ে যখন ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হবে তখন তাদেরকে বলবো তোকে এক্স ক্যাডেট হিসেবে ভাই বলে ডাকতে।এটা শুনে মাহবুবের মুখটা চুপসে গেল। বললো কিসের মধ্যে কি টেনে আনছিস। আমি আর কোন কথা না বাড়িয়ে রাসেলের বাবার দিকে হাটতে লাগলাম। ততোক্ষণে রাসেল চলে এসেছে। এবার রাসেল মাহবুবের সাথে তার বাবাকে পরিচয় করিয়ে দিলো এবং বললো আমার বাবা কিন্তু এক্স ক্যাডেট। আমি ভেবেছিলাম মাহবুব না আবার ভাই বলে ডাকে। এবার দেখি সে সালাম দিয়ে বললো তা আংকেল আপনি কোন কলেজে ছিলেন? আমার খুব হাসি পাচ্ছিল।
রাতে ঘুমানোর আগে রাসেলকে ঘটনাটা বলতেই সে মাহবুবের উপর চড়াও হলো। বললো শালা তুই আজকে থেকে আমার কাকা।আমার বাপ তোর কোন জন্মের ভাই সেটা দেখিয়ে দেব।পরীক্ষার আগে ফিজিক্স আর ম্যাথে এক কানাকড়িও দেখাবো না।এই শুনে মাহবুবের মুখের যে অবস্থা হলো তা দেখার মত। মাহবুব ওই দুটো বিষয়ে খুবই দুবর্ল ছিল এবং বরাবরই রাসেলের কাছে হেল্প নিত। এবার সে বিছানা ছেড়ে উঠে বললো দোস্ত মাফ চাইছি। তোর বাপ কোন জন্মেও আমার ভাই ছিলনা। দরকার হলে আজ থেকে তোর বাপ আমারও বাপ তার পরও তুই তোর সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নে।আমার সবর্নাশ করিস না।ওর এহেন অবস্থা দেখে আমি হেসে উঠলাম আর রাসেল বললো ভাতিজা তাহলে বুঝেছ সেরের উপরেও সোয়া সের আছে।
জাজাফী
১২ মার্চ ২০১৭