বাংলাদেশ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলে সারা বিশ্বেই পরিচিত।প্রাচীন কাল থেকে এদেশের গ্রামবাংলার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছে বিশ্বের অগণিত পর্যটক।সুদুর চীন থেকে আসা ফা হিয়েন মুগ্ধ হয়েছেন এদেশের গ্রামের সৌন্দর্য দেখে। মুগ্ধ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন ইবনে বতুতা।এদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অপার সৌন্দর্য। সেই সব সৌন্দর্য ছাপিয়ে যায় বর্ষা কালে। বর্ষার আকাশে মেঘের আনাগোনা থাকে,সারাদিন চলতে থাকে অবিরাম বৃষ্টি।
টিনের চালে সেই বৃষ্টির ঝরে পড়ার শব্দ মনে হয় নৃত্যরত কোন কিশোরীর পায়ের নুপুরের শব্দ।বর্ষা কাল এদেশের মানুষের অতি প্রিয় একটা ঋতু।বর্ষা কালে গ্রামে গ্রামে চলে নানা রকম পিঠা পুলির আয়োজন।কোথাও কোথাও দেখা যায় জারিসারি গানের আসর বসানো হয়।ঘুম কাতুরেরা বর্ষার সময় কাথার গায়ে ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়।সারাদিন চলে বৃষ্টির অবিরাম বর্ষন।চারদিকে পানি আর পানি।
ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সেই বৃষ্টিতে ভিজে উল্লাসে মেতে ওঠে।অনেকেই বর্ষার মৌসুমে জাল বানাতে বসে যায় এবং যাদের জাল আছে তারা খাল বিলে মাছ ধরতে ছুটে যায়।বর্ষাকালে গ্রাম যেন ভিন্ন আঙিকে সাজে তার অপরুপ সৌন্দর্যে।কৃষকেরা বর্ষাকে ঘিরে তাদের ধানের জমি প্রস্তুত করে,আর বাড়ির মেয়েরা অনেকেই মনের মাধুরী মিশিয়ে নকশী কাথা সেলাইয়ের কাজে হাত দেয়।
গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা দাদা দাদিকে ঘিরে বসে গল্প শোনার জন্য।শহরের সাথে গ্রামের এখানেই পার্থক্য। শহরের কংক্রিটের দালানের মধ্যে থেকে কখন বৃষ্টি আসলো আর গেল সেটা আমাদের অনেকের চোখেই পড়েনা।অপর দিকে গ্রামে বর্ষার আকাশ ক্ষণে ক্ষণে গুড়ুম করে ডেকে ওঠে আর ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ভয় পেয়ে দৌড়ে মায়ের কোলে গিয়ে লুকায়।বৃষ্টির ছোয়া পেয়ে ঘাস থেকে শুরু করে সব কিছু সতেজ হয়ে ওঠে।
গ্রামে না গেলে তাই বর্ষার প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব নয়।খাল বিল পানিতে থৈ থৈ করতে থাকে আর দুরন্ত ছেলেরা সেখানে সাতার কাটতে থাকে।হাসেরা হাপুস হুপুস ডুব দেয়। হয়তো কোথাওবা পানকৌড়ি কিংবা মাছরাঙা ওৎ পেতে বসে সাথে মাছ ধরার আশায়।কিন্তু অনেকেই এখন আক্ষেপ করে বলে এখন গ্রাম পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগত ভাবে আধুনিকতার ছোয়া লেগে গ্রাম হয়ে উঠছে শহরের মত।গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে,পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। ফলে এখন গ্রামেও অনাবৃষ্টি দেখা দিচ্ছে।তবে সর্বপরি এই বাংলার রুপ রস গন্ধ সবতো গ্রামেই লুকিয়ে আছে।তাইতো শিল্পীর কন্ঠে ধ্বনিত হয় “যদি মন কাঁদে, তবে চলে এসো এক বরষায়। এসো ঝরো ঝরো বৃষ্টিতে,এসো জলে ভেজা দৃষ্টিতে”।
……………….
জাজাফী