Saturday, April 20, 2024
Homeগল্পউজবেক কবি ও আমি

উজবেক কবি ও আমি

কথা বলতে গিয়ে আমি একটি প্রশ্নের মূখোমুখি হলাম।তিনি জানতে চাইলেন আপনিকি কবিতা লেখেন? আমি বললাম কবিতা লিখি না।তিনি তখন আমাকে দ্বিতীয় প্রশ্নটি করলেন। অবাক হয়ে বললেন আপনি কবিতা লেখেন না অথচ আপনার নাম মতিন উদ্দিন? তার কথা শুনে আমিও ভীষণ অবাক হলাম।কবিতা লেখা না লেখার সাথে মতিন উদ্দিনের কি আসে যায়?মতিন উদ্দিন নাম হলেই কি কবিতা লিখতে হবে? নাকি জগতের সব মতিন উদ্দিনই কবিতা লেখে।আর তা ছাড়া এই নামে যে কোন বিখ্যাত কবি আছেন তাওতো শুনিনি কখনো।আমি বিস্ময় গোপন না রেখেই তাকে প্রশ্ন করলাম কবিতা না লিখলে কি আমার নাম মতিন উদ্দিন হতে পারে না? কিংবা মতিন উদ্দিন নাম হলেইকি তাকে কবিতা লিখতে হবে? তিনি খানিকটা চুপ থাকলেন।

ঘটনার শুরুটা বেশ অন্যরকম।বইমেলায় ঘুরছি হঠাৎ একটি মূখের দিকে তাকিয়ে খুব চেনা চেনা মনে হলো।একটু ভাবতেই মনে পড়লো সেই মুখটি।আরে এই মুখটিতো আমার পরিচিত।কখনো কথা বলার সুযোগ হয়নি।আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম।শুদ্ধস্বরের স্টল পেরিয়ে শিশু চত্বরের কাছাকাছি পৌছে তাকে খুব কাছ থেকে দেখলাম। তার পর নিশ্চিত হয়ে পাশ কাটিয়ে সামনে গিয়ে দাড়ালাম।অনেকটা পথ আগলে দাড়াবার মত।আমি বললাম তোমাকে খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে।আচ্ছা তুমিকি মেঘদূত যাকে দেখেছিলাম কলাবাগান খেলার মাঠে কর্ডলেস হাতে সুন্দর করে উপস্থাপনা করতে? সে মিষ্টি করে হাসলো।তার মনে তখন আনন্দ নিশ্চই খেলা করছিল।তার উপস্থাপনা এতোটাই মুগ্ধকর ছিলো যে এই বইমেলার ভীড়েও অনায়াসে তাকে কেউ চিনে ফেলছে। তার ভক্ত তৈরি হয়েছে দেখেও সে নিশ্চই খুশি হয়েছে।সে বললো হ্যা আমিই মেঘদূত।

Image may contain: 3 people, including Asadul Islam, people smiling, beard and glasses
মেঘদূত ও তার পরিবার

হঠাৎ খেয়াল হলো তার সাথে আরো দুজন মানুষ আছেন।আমি তাদের সালাম দিলাম।তারা জানালো তারা মেঘদূতের বাবা এবং মা।আমি তখন জানতে চাইলাম আচ্ছা মেঘদূত তোমাকে আমি তুমি করে বলবো নাকি আপনি করে? সে বললো আমিতো ছোট মানুষ আমাকে তুমি করে বললেইতো বেশি ভালো হয়।আমি বললাম বেশ তাই হবে।আচ্ছা তোমার কি কোন বই বেরিয়েছে? বই বের হলে সেটি কিনবো এবং তোমার অটোগ্রাফ নেবো। সে মিষ্টি করে হেসে উঠলো। বললো নাহ আমার কোন বই বের হয়নি।আমিতো ছোট মানুষ বই কি করে লিখবো এখনতো আমার অন্যের লেখা বই পড়ার সময়।

আমি বললাম কিন্তু জানো এই মেলাতেও ছোটদের অনেকের বই বেরিয়েছে।তারা কেউ কেউ তোমার চেয়েও অনেক ছোট আর কেউ কেউ একটু বড়। এই যেমন (Meem Noshin Nawal Khan) মীম নোশিন নাওয়াল খানের “টুপিটুন” নামে একটি বই বেরিয়েছে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে। সে তোমার চেয়ে বড় আর যেমন ধরো অলীন বাশারের বই বেরিয়েছে সে তো অনেক ছোট। মেঘদূত হাসলো। বললো আমিও তাহলে পরে লিখতে চেষ্টা করবো। আমি বললাম তুমি যে সুন্দর উপস্থাপনা করো তাতে তুমি লিখলে নিশ্চই সেটা দারুন হবে।আমি এখন তোমার অটোগ্রাফ নিবো কি করে বলোতো? তোমার তো কোন বই নেই! সে অবাক বিস্ময়ের সাথে বললো আমার অটোগ্রাফ নিবে তুমি?কিন্তু কেন? আমিতো বিখ্যাত কেউ নই যে আমার অটোগ্রাফ নিবে।

আমি মেঘদূতের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম বিখ্যাতরা কি নিজেরা বুঝতে পারে সে বিখ্যাত না অখ্যাত।মানুষের ভক্ত যে কোন সময় তৈরি হতে পারে। আমি না হয় একটু আগেই হয়েছি।মেঘদূত তখন হাসলো।বললো আচ্ছা ঠিক আছে তুমি একটা কাজ করতে পারো আমার বাবাওতো লেখে। তার বই বেরিয়েছে তুমি সেটা নিতে পারো তাহলে সেই বইয়ে আমি তোমাকে অটোগ্রাফ দিবো।

আমি বললাম তোমার বাবার বইয়ের নাম কি? সে তখন বললো বাবার বইয়ের নাম “নীরবতার বাঁশিতে তৃষ্ণার ফেরিওয়ালা” আমি একটি বই কিনলাম।তার পর মেঘদূতের সামনে মেলে ধরলাম অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য। মেঘদূত তখন জানতে চাইলো আচ্ছা তোমার নাম কি? অটোগ্রাফ দিতে হলেতো তোমার নাম লাগবে। আমি তখন বললাম আমার নাম মতিন উদ্দিন।

আমার নাম বলার সাথে সাথে পাশে দাড়িয়ে থাকা ওর বাবা এবং মা হো হো করে হেসে উঠলো।মেঘদূত নিজেও হাসলো।ওদের হাসির কারণ বুঝতে পারলাম না। একজনের নাম কি কোন ভাবে মতিন উদ্দিন হতে পারে না? আর এই নামটাকি সত্যিই হাস্যকর? প্রশ্নটা করেই ফেললাম যে তারা কেন আমার নাম শুনে হাসছে? এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তারা বরং উল্টো প্রশ্ন করলো আমি কবিতা লিখি কি না।তার পর কত কথা হলো। শেষে মেঘদূত বললো তোমার হাতে মোবাইল নাও এবং ইন্টারনেটে মতিন উদ্দিন নাম দিয়ে সার্চ দাও।

আমি সাথে সাথে সার্চ দিয়ে দেখি সত্যিই এ নামে একজন উজবেক কবি আছেন যিনি নিজের নাম উল্টো করে নদ্দিউ নতিম লিখে বিখ্যাত হয়েছেন।গুগলে ফটো নামে যে অপশন আছে সেটিতে ক্লিক করে সেই মতিন উদ্দিনের ছবি দেখার আগ্রহ হলো। যখনই ছবিতে ক্লিক করলাম তখন অসংখ্য ছবি দেখতে পেলাম। ছবির মানুষটা চেনা চেনা লাগছিলো। কোথায় যেন দেখেছি কোথায় যেন দেখেছি।এটা ভাবতে ভাবতে পাশের দুজনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম আরে এই মতিন উদ্দিনতো আমার পাশেই দাড়ানো! তখন জানতে পারলাম নদ্দিউ নতিম নামে অসাধারণ একটি নাটক করেছেন এই লোকটা।এই লোকটা মানে মেঘদূতের বাবা।মেঘদূত আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে জানালো জানো ওই নাটকের একটি গুরুত্বপুর্ন চরিত্রে আমি নিজেও অভিনয় করেছি।

মেঘদূতের অটোগ্রাফ নিয়ে মেলা থেকে ফিরলাম।ও বলেছে আগামী শো তে যেন আমি উপস্থিত থাকি।কিন্তু আমি থাকবো না এটা নিশ্চিত।আমি মতিন উদ্দিন হলেও কবিতা লিখি না।একজন উজবেক কবির আয়োজনে অকবি হয়ে আমি কি করে থাকি।

–জাজাফী
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আরো পড়তে পারেনঃ

Most Popular