পাহাড়ের ঢাল বরাবর শহর থেকে একটি রাস্তা উত্তর দিকে চলে গেছে।দুই পাশে সবুজ চা বাগান চোখ জুড়িয়ে দেয়।এই পথ দিয়েই বিমানবন্দরে যেতে হয়।মালনিছড়া চা বাগান পেরোতেই হাতের ডান পাশে এক দেয়াল ঘেরা সবুজ চত্ত্বর।সেই চত্বরে প্রবেশের প্রধান ফটকের বুকে শোভা পাচ্ছে একটি লোগো আর উপরে লেখা চত্বরের নাম।এখানে যারা থাকে তাদেরকে আলোকের অভিসারী বলা হয়।সারা দেশে এমন বারটা সবুজ চত্বর আছে।চত্বরের অধিবাসীরা ওটাকে খাকি চত্বর বলতেই বেশি ভালোবাসে।২০১৮ সালের শেষ দিকে চা বাগানের শোভায় রাঙা আলোকের অভিসারীদের সেই চত্বরে বসেছিল ICCLMM। ইন্টার ক্যাডেট কলেজ লিটেরারি এন্ড মিউজিক মিট।অন্যান্য কলেজের ক্যাডেটরা এসেছিল নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করতে।দেখতে দেখতে পুরো আয়োজন শেষ হয়ে গেলো।বিজয়ী হলো আলোকের অভিসারীরাই।
ক্যাডেটরা সবাই সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে।এই আয়োজনে এসে বরিশাল ক্যাডেট কলেজের সৌরভের অনেক কিছুই ভালো লেগেছে তার মধ্যে সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে এক জয়পুরিয়ানকে! জয়পুরহাট ক্যাডেট কলেজের সেজুতিকে তার মনে ধরেছে।মাঝে বেশ কবার কথাও হয়েছে দুজনের মধ্যে।সৌরভ ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি সেজুতি তার প্রতি ঠিক তারই মত আকৃষ্ট কি না।বিদায়ের আগে সৌরভ সেজুতির সামনে গিয়ে দাড়ালো। সেজুতি বুঝলো সৌরভ কিছু একটা বলতে চায় তাকে।সে আমতা আমতা করছিল দ্বিধান্বিত ছিলো।সেজুতিই তাকে সাহস জুগিয়ে বললো কিছু বলবি?এবার সাহস পেয়ে সৌরভ বললো তোর অ্যাপুলেট আর নেমপ্লেটটা আমাকে দিবি?
এ কথা শুনে সেজুতি জানতে চাইলো আমার অ্যাপুলেট আর নেমপ্লেট নিয়ে তুই কি করবি? সৌরভ বললো না মানে ওগুলো আমার কাছে থাকলে তোর কথা মনে পড়বে।সেজুতি হাসলো।বুঝলো সৌরভ ওর প্রেমে পড়ে গেছে। কিন্তু ওরতো কিছু করার নেই ও যে আগেই অন্য কারো প্রেমে ডুবে আছে।সেজুতি ওকে বললো না দিলে আমার কথা তোর আরো বেশি বেশি মনে পড়বে। সৌরভ বুঝতে না পেরে জানতে চাইলো সেটা কিরকম? সেজুতি মিষ্টি করে একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো তখন তোর বার বার মনে পড়বে সেজুতির কাছে ওর অ্যাপুলেট আর নেমপ্লেট চেয়েছিলাম দিলো না!!
সেজুতি যখন কলেজ গেট দিয়ে বের হলো সৌরভও পিছু পিছু বের হলো। তার পর ওর সামনে গিয়ে বললো সেজুতি I Love You!! তুমি সব থেকে সুন্দরী ক্যাডেট! এ কথা শুনে সেজুতি খুব খুশি হলো তবে সে সেটা বুঝতে না দিয়ে বললো কিন্তু আমার চেয়েও সুন্দরী ক্যাডেটতো তোর পিছনেই দাড়িয়ে আছে! সৌরভ ওকে তুই থেকে তুমি করে সম্মোধন করলেও ও সেটা করলো না। সেজুতি যখন বললো তার চেয়েও সুন্দরী ক্যাডেট পিছনে দাড়িয়ে আছে তখন সৌরভ পিছন ফিরে তাকালো। না সেখানে কেউ ছিলো না।সে সেজুতির দিকে তাকিয়ে বললো কই কেউতো নেই! সুযোগ পেয়ে সেজুতি বললো সৌরভ তুই যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসতি তাহলে আমার চেয়েও সুন্দরীর কথা শুনে পিছন ফিরে তাকাতি না। I Cant Love you এটুকু বলে হাটতে শুর করলো। এবার সৌরভ আর সামনে গিয়ে দাড়ালো না।সেজুতিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো তোকে দেবো বলে বন্ধুর মাধ্যমে একটা স্বর্ণের আংটি এনেছিলাম তোকে আর দেওয়া হলো না!
স্বর্ণের আংটির কথা শুনে সেজুতি ফিরে আসলো। বললো জানপাখি একটু কি দুষ্টুমীও করা যাবে না? আমিতো দুষ্টুমী করেছি তোমার সাথে।সেজুতি যেন মোমের মত গলে গেলো।সে সৌরভের সামনে গিয়ে দাড়ালো। ওর হাত থেকে আংটিটা নিয়ে মধ্যমাতে পরে নিলো। তার পর চারদিকে তাকিয়ে যখন দেখলো ওদেরকে কেউ খুব একটা দেখছেনা তখন সে সৌরভকে একটা উষ্ণ আলিঙন দিলো এবং মুখে আলতো করে একটা চুমু দিলো।তার পর খুশি মনে ফিরে গেলো বাসে।
কলেজ বাস ছাড়তে তখনো খানিকটা দেরি। সৌরভ দাড়িয়ে আছে একাকী।কিছুক্ষণ আগের সব কথা ভাবছে। ওদিকে সেজুতি হাতে আংটি নিয়ে বাসে গিয়ে উঠলো। ক্লাসমেটদের দেখালো।এর কিছুক্ষন পরই সেজুতিকে দেখা গেলো হনহন করে হাটতে হাটতে সৌরভের সামনে এসে দাড়ালো। তার পর বললো সৌরভ এটাতো স্বর্ণের আংটি না! তোমার বন্ধুতো তোমাকে ঠকিয়েছে!! সৌরভ বললো তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসতে তবে এটা স্বর্ণ কি না তা যাচাই করে দেখতে না। সুতরাং I cant Love You!!
কিছুক্ষণ নিরবতার পর কেউ কোন কথা না বলে নিজ নিজ বাসে গিয়ে বসলো।দুজনই জানালার বাইরে অনন্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে দুজনকে মনে করতে থাকলো।বুঝলো ভালোবাসা হোক বা না হোক তবুও মনে থাকবে।
১০ জুন ২০১৯
তবুও মনে থাকবে
—জাজাফী
#ICCLMM
#SCC