Thursday, November 21, 2024
Homeরিভিউস্বপ্নযাত্রা ১৯৭১

স্বপ্নযাত্রা ১৯৭১

মুক্তিযুদ্ধ কোন গল্প বা কবিতা নয় যে একবার দুবার পড়ার পর তার আবেদন ফুরিয়ে যাবে। যতদিন বাঙ্গালী ও বাংলা থাকবে ততোদিন মুক্তিযুদ্ধ সমান ভাবে সমাদৃত হবে কিংবা বলা যায় দিন পেরোবে আর মু্ক্তিযুদ্ধের আবেদন বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের অধিকাংশই তাদের প্রিয় দেশের জন্ম এবং জন্মের প্রকৃত ইতিহাসতো দূরে থাকুক স্বাধীনতা দিবস বিজয় দিবসটাও ঠিকমত মনে রাখতে পারেনা। জাতীয় সঙ্গীতটাও ঠিকমত গাইতে পারেনা। তাই বাঙ্গালীর জাতির সব থেকে আলোচিত অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যত বেশি সম্ভব কাজ করা উচিত।

যুদ্ধ পরবর্তী সময় এমনকি যুদ্ধ চলাকালীন সময় থেকেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশ কাজ হচ্ছে। রচিত হয়েছে গল্প,কবিতা এবং উপন্যাস। সেই পথে আছেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক থেকে শুরু করে হাসান হাফিজুর রহমান,আনিসুল হক এবং নির্মলেন্দু গুণের পাশ কাটিয়ে স্বয়ং হুমায়ুন আহমেদ এবং মুহাম্মদ জাফর ইকবাল পযর্ন্ত।

এর বাইরেও অনেকেই মুক্তিযুদ্ধকে নানা ভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন। সেলুলয়েডের ফিতাতেও তা উঠে এসেছে সমান ভাবে। হুমায়ুন আহমেদ তার দেয়াল উপন্যাসকে আমাদের সামনে মুক্তিযুদ্ধকে জীবন্ত করে তুলে ধরেছেন বললে অত্তুক্তি হবেনা। আর বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও মুক্তিযুদ্ধ সমান ভাবে উঠে এসেছে।

বিগত দশকে যারা মুক্তিযুদ্ধ,স্বদেশ প্রেম এবং জাতীয় চেতনার পাশাপাশি ছোটদের জন্য কিছু করতে চেয়েছেন বা চেষ্টা করেছেন তাদের মধ্যে দীপু মাহমুদ অন্যতম। সুলেখক হিসেবে ইতমধ্যে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষন যেমন করেছেন তেমনি ছোটদের জন্য বই লিখে যে দায়িত্বের পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই অতুলনীয়।

ব্যক্তি দীপু মাহমুদ যেমন এককাঠি সরেস এবং বন্ধুভাবাপন্ন ঠিক তার থেকেও এগিয়ে তার লেখা এবং লেখনী।
সুনিপুন শব্দকারীগর হিসেবে তিনি একের পর এক তথ্য জুড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে আমাদের চেতনার মধ্যে এমন ভাবে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছেন যেন এক একটা উপন্যাসের চরিত্রকে আমার নিজেদের চরিত্র হিসেবে খুজে পাই।

মুক্তি যুদ্ধ একটা শক্তিশালী বিষয় এবং বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনের সব থেকে আলোচিত ঘটনা। ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মদানে অর্জিত দেশে সেই সব শহীদের কথা সকলের কাছে পৌছে দেওয়া সকলের নৈতিক দায়িত্ব। হুমায়ুন আহমেদদের সাথে একই পথে হেটে অনেকটা এগিয়ে গেলেন সুলেখক দীপু মাহমুদ।

দীপু মাহমুদ যথেষ্ট দায়িত্বশীল মানুষ এবং শব্দসৈনিক সেটা তার রচিত স্বপ্ন যাত্রা ১৯৭১ বইটি পড়লেই বুঝা যায়।

বইটির সুচনা বাক্য থেকে শেষ অবধী পাঠক নিজেই ক্রমাগত ভাবে হারিয়ে যাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে।

মুক্তিযুদ্ধর মত একটা প্রেক্ষাপটকে উপজীব্য করে উপন্যাস রচনা করা যথেষ্ট কঠিন কাজ। কিন্তু অভিজ্ঞ স্বর্ণকারের কাছে যেমন যে কোন ডিজfইনেই গহনা তৈরি করা যায় তেমনি এক অভিজ্ঞ কলম সৈনিক হিসেবে অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অসাধারণ বইটি লিখতে পেরেছেন দীপু মাহমুদ।

মুক্তি যুদ্ধ নিয়ে এ যাবৎকাল যা কিছু ঘটেছে যা করা হয়েছে তার তুলনায় এটি কোন অংশেই কম নয়।
বোদ্ধা পাঠকের কাছে দীপু মাহমুদের “স্বপ্ন যাত্রা ১৯৭১” বইটি সত্যি সবাইকে স্বপ্ন যাত্রার মাধ্যমে যুদ্ধ দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং এক একজনকে বীরের বেশে দাড় করাবে এটাতে কোন সন্দেহ নেই।

সাহিত্য রস থেকে শুরু করে শব্দচয়নে লেখক নিপুণ কারীগরের ভূমিকায় উপস্থিত হয়েছেন। দু একটা বানানে ভুল থাকা অস্বাভাবিক নয় কম্পিউটার কম্পোজের কারণে ওটা হতে পারে বাকি সব ঠিক ছিল। প্রচ্ছদটিও ছিল চমৎকার।

একুশে বইমেলাতে প্রতি বছর পাঁচ থেকে ছয় হাজার বই প্রকাশ পায়। এবার নিশ্চই সেই সংখ্যাটা যথেষ্টই বেশি। কিন্তু অগণিত সংখ্যক বইয়ের ভীড়েও নির্ভাবনায় বেছে নেওয়ার মতই একটি বই “স্বপ্ন যাত্রা ১৯৭১”। তবে আসুন দীপু মাহমুদের চিত্রায়িত চরিত্র গুলোর সাথে আরো একবার ফিরে যাই একাত্তরে। সে যাত্রা হোক স্বপ্ন যাত্রা।

…………………..

জাজাফী

ইমেইলঃ [email protected]

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

 

Most Popular