প্লুটো গ্রহ থেকে বলছি। যদিও পৃথিবীর মানুষ মনে করে প্লুটো তার গ্রহত্ব হারিয়েছে তাতে আমগো কিছু যায় আসে না। তোমরা মিয়া কইলা আর আমগো গ্রহত্ব হারায় গেল? এইডা কি মাইনষের যৌবন যে হারায় যাইবো? আমরা বহুত বালা আছি। হুনেন আমগো সুখের কতা কইয়ে যাই। তয় এমন আঞ্চুলিক বাষায় কইলি আমনেরা নাও বুঝবার পারেন তাই আপনেগো লাহান শুদ্দু বাষায় কইতেছি-
ঈদ আসতে বেশি দেরি নেই। ঈদের কেনাকাটা করতে হবে। কিন্তু বাবার কাছে টাকা চাইতে ভয় পাচ্ছি। এই সময়ে বাবার হাতেও তেমন টাকা নেই। একমাত্র উপায় বড় আপু। আপুকে বললে নিশ্চই একটা উপায় হবে। আমি দুরুদুরু বুকে আপুর রুমে সামনে গিয়ে দুবার নক করলাম। আপু বললো আয় ভেতরে আয়। আমি কাচুমাচু করে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার ভাবসাব দেখেই আপু বুঝলো আমি কিছু একটা ধান্দা করতে এসেছি। আপু বললো ভণিতা না করে কী বলবি বল। আমি খানিকটা সাহস পেয়ে বললাম আপু ঈদতো চলেই আসলো কিছু কেনাকাটা করবো । বাবার কাছে বলে কিছু টাকা ম্যানেজ করে দে না। আপু একগাল হেসে বললো এই সামান্য বিষয়ে বাবাকে বলতে হবে কেন? তোর যাকিছু কেনাকাটা করা দরকার সব টাকা আমি দেবো।
আপুর মুখে এমন কথা শুনে আমিতো থ। যা খুশি কিনতে পারবো আর সব টাকা আপু দেবে! আমি বললাম আমার প্লুটো সেরা বোন আছে বলেই আমি প্লুটোর সবচেয়ে সুখী মানুষ। কিন্তু আমার সুখটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। আপু যখন পার্স খুলে আমার দিকে টাকা এগিয়ে দিল তখন আমার মাথায় আসমান ভেঙ্গে পড়ার দশা। আমি আশা করেছিলাম হাজার বিশেক টাকা হয়তো আপু দিবে। কিন্তু কিসের কী? এ কেমন ঠাট্টা বুঝলাম না। নিজের ভাইয়ের সাথে কেউ এমন রসিকতা করে? তাও যদি ক্লাস টুতে পড়ুয়া ভাই হতো তাও একটা কথা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একটা ভাই তার সাথে এমন বাদরামো করা মোটেই ঠিক না। আমি আপুর হাত থেকে টাকাটা নিলাম। একটা দোয়েলের ছবি ওয়ালা নোট। মানে দুইটাকা। আমি বললাম আপু এই টাকাটা কি আমি অ্যালবামে ঢুকিয়ে রাখবো?
আমার কথা শুনে আপু বললো মারবো এক থাপ্পড়। এতো টাকা কেউ এলবামে ঢুকিয়ে রাখে? আমার আপুর মাথাটা গেছে। তা না হলে মাত্র দুই টাকার একটা নোটকে এতো টাকা বলে? আমি কিছু না বলে তার দিকে তাকালাম। সে বললো আরে গাধা এখন জিনিসপত্রের দাম যে হারে কমেছে তুই সেটা খোঁজ রাখিস? এই দুইটাকা নিয়ে তুই বাজারে গিয়েই দেখ। আমি বললাম আপু এমন ইয়ার্কি করলে কিন্তুভালো হবে না বলে দিচ্ছি। আপু বললো দেখ আমি মোটেও ইয়ার্কি করছি না। শুধু তুই কেন অনেক মানুষেরই এটা বিশ্বাস হবে না যে জিনিসপত্রের দাম কমতে কমতে একেবারে তলানিতে নেমে এসেছে। তোকে একটা মন্ত্র শিখিয়ে দিচ্ছি। যে কোনো দোকানে গিয়ে তুই সেই মন্ত্রটা বলবি আর এই টাকাটা দিবি। দেখবি যা কিনতে চাইবি তাই কিনতে পারবি।
আমি আপুর কাছ থেকে সেই মন্ত্রটা শিখে নিয়ে খুব দ্বিধাগ্রস্থের মত লজ্জার মাথা খেয়ে প্রথমে অ্যাপেক্সের শোরুমে গেলাম। পছন্দমত একজোড়া জুতা নিলাম। জুতার উপর কোনো দাম লেখা নেই। কাউন্টারে গিয়ে আপুর দেওয়া দুইটাকার নোটটা দিলাম। কাউন্টারের ভদ্রলোক চোখ কপালে তুললো। আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। এইরে মানসম্মান সব গেলো। নিশ্চই এবার পিন্ডিদিবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে কাউন্টার থেকে বললো স্যার এতো বড় নোটতো ভাংতি হবে না। আপনি মাত্র এক জোড়া জুতো নিয়ে দুইটাকার নোট দিলে কিভাবে হবে? আমি তার কথা বুঝতে পারলাম না। সেও কি তবে আমার সাথে ইয়ার্কি করতেছে? আমি আরো বেশি বিব্রত হয়ে বললাম আসলে হয়েছে কি আপু আমার সাথে ইয়ার্কি করে এই নোটটা দিয়েছে। এর জন্য আমি লজ্জিত।
দোকানদার বললো স্যার আপনার লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই বরং আমরাই লজ্জিত যে এতো বড় নোট আমরা ভাংতি দিতে পারছি না। এবার কিছুটা সাহস পেয়ে জানতে চাইলাম জুতার দাম কত হয়েছে? দোকানদার বললো তিন টয়সা হয়েছে। আমি এই শব্দটা আগে শুনেছি বলে মনে পড়ছে না। জিজ্ঞেস করলাম তা এই টয়সা জিনিসটা কী? তিনি বললেন স্যার দশ হাজার টয়সা মিলে হয় এক পয়সা। তার মানে হলো আপনি যে দুই টাকা দিয়েছেন তার মূল্য ২০ লাখ টয়সা। এতো টাকা কি কেউ দোকানে রাখে? আমি সাথে সাথে জোরে জোরে সেই মন্ত্রটা পড়ে ফেললাম। আপুর কথা তাহলে সত্যি!
বাজার সম্পর্কে আমারতো দেখি কোনো ধারণাই ছিল না। তারপর একে একে আইফোন সিক্সটি নাইন কিনলাম। একটা স্বর্ণের তৈরি ঘড়ি কিনলাম। পারফিউম কিনলাম। অনেকগুলো টিশার্ট কিনলাম,জিন্স কিনলাম। শেষে বাড়ি ফেরার সময় দেখলাম আপু যে দুই টাকার নোটটা দিয়েছি তা এখনো পকেটেই আছে। আসলে এতো বড় নোট কেউ ভাংতি দিতে পারেনি। সবাই বলেছে স্যার নিয়ে যান পরে দিয়েন। আমরা অন্তত বলতে পারবো আমাদের দোকানে এমন এক মহান তালেবর এসেছিলেন যার পকেটে দুই টাকার একটা চকচকে নোট থাকে! এতো টাকার মালিক হয়েও তিনি কত সাধাসিধে। একথা শুনে আমার মনে পড়ে গেল মার্ক টোয়েনের লেখা মিলিয়ন পাউন্ড ব্যাংক নোট গল্পটির কথা।
আমি বাসায় ফিরে আপ্লুত কন্ঠে আপুকে বললাম আপু তোমার কথাতো সত্যি। জিনিসপত্রের দাম এতো কমলো কিভাবে? তখন আপু বললো সব ওই মন্ত্রের যাদুরে সব ওই মন্ত্রের যাদু। কদিন পর দেখবি সব ফ্রিতে পাওয়া যাচ্ছে। আমি আপুকে তার দেওয়া দুই টাকার নোটটা ফিরিয়ে দিলাম। এতো বড় নোট নিয়ে আমার ঘুম আসবে না।
২৭ মার্চ ২০২৩