9 মার্চ 2020
প্রতিদিন কী এক অস্থিরতা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।আমি সেই সময়টা ধরতে চেষ্টা করছি যে সময় চলে গেছে।আমি সেই স্মৃতিগুলো নিয়ে পড়ে আছি যে স্মৃতি ক্ষণিকের জন্য আমাকে আনন্দের সাগরে ভাসিয়ে রেখেছিলো আর আজ তা বিষাদে পরিণত হয়েছে। কুড়িয়ে পাওয়া বাসের একটি টিকেট হাতে আমি অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু আমার অগোচরে বাস আমাকে ফেলে রেখে চলে গেছে তবুও আমি অপেক্ষায় আছি যদি ফিরে এসে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। হায়! এটাতো বোকারাও বোঝে যে স্টপেজ ছেড়ে যাওয়া বাস ফেলে যাওয়া যাত্রীকে নিতে কখনো ফিরে আসে না।হারানো সময়, হারানো স্মৃতি কখনো কি ফিরে আসে।প্যানাল্টিশ্যুট একবার মিস করে ফেললে রেফারির হাতে পায়ে ধরলেও দ্বিতীয়বার সে সুযোগ দিবে না।আমিও হয়তো শ্যুট মিস করেছি তার পর অনেক অনুনয় করেছি কিন্তু রেফারির মন গলেনি।ভাঙা ডিঙি নৌকা নিয়ে আমি বৃথাই সাগর পাড়ি দিতে চেষ্টা করছি।আমি জানি সাগরের ওপারে আমাকে অভ্যার্থনা জানানোর জন্য কেউ অপেক্ষায় নেই তার পরও কেন যে আমি সেই উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে চাই আমি নিজেও জানি না।
মৃত্যু কাছে নাকি সে? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে গেলে বলতে হয় মৃত্যুই বেশি সন্নিকটে যাকে হাত বাড়ালেই ছোয়া যায়।যেন সে ওৎপেতে আছে আমাকে গ্রাস করবে বলে।এখন এই মুহুর্তে সে আমাকে ছোবল দিলেও আমার কিছু করার থাকবে না।সৃষ্টিকর্তা এভাবেই নিয়তি ঠিক করে দিয়েছেন। আর সে? কতটুকু কাছে?কতটুকু দূরে? বার মাইল? না ভুল বলেছি, আরেকটু বেশি হবে। বড়জোর বিশ মাইল দূরে তার অবস্থান।গতি যানে গেলে সেখানে পৌছাতে সময় লাগবে বিশ মিনিট বা তার কিছু কম।রাস্তায় জ্যাম থাকলে সেটা ঘন্টাখানেক হতে পারে।কিন্তু এই সামান্য পথ আমি পাড়ি দিতে পারছি না। যাত্রা শুরু করেছি সেই নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে।তার পর কেটে গেছে এক আলোঝলমল লাল সবুজের পতাকায় রঙ্গীন ডিসেম্বর, নতুন বছরের বার্তা নিয়ে আসা জানুয়ারি এমনকি একটি অধিবর্ষের ফেব্রুয়ারির উনত্রিশটি দিন।আমি এখনো অবিরাম ছুটে চলেছি কিন্তু নাগাল পাচ্ছিনা। কার নাগাল পাবো? সে তো আকাশের চাদের মত। আমার হাতে যে মই আছে তা দিয়ে আকাশ ছোয়ার সাধ্য কী!
সে যেন মরিচিকার মত দূরে সরে যেতে যেতে আরো দূরে দিগন্ত রেখার খুব কাছে চলে যাচ্ছে। আমি যতই তার সন্নিকটে যাই সে ততোই সরে যায়।এভাবে সরে যেতে যেতে একদিন সে রংধনুর মত মিলিয়ে যাবে।তবে কি তাকে আমি জীবনের রংধনু বলবো।ক্ষণিকের জন্য সে উদয় হয়েছিল আমার হৃদয় আকাশে তার পর রংধনুর মতই মিলিয়ে গেছে। মনের মধ্যে রেখে গেছে কিছু রং যা আবছা হতে হতে একদিন নাই হয়ে যাবে। বাগান থেকে সদ্য তুলে আনা গোলাপ রাত পেরোতেই শুকিয়ে যাবে।শুকনো পাপড়ি গুলো জানিয়ে দিবে একদিন সে সুবাশ ছড়াতো।তার রেখে যাওয়া স্মৃতিও তেমন জানান দেয় একদিন এই ভুবন আলোয় ভরা ছিলো। আলোর মেলায় সে হাসতো,কথা বলতো।তার পর বিরানভুমিতে পরিনত হলো আলোর মেলা।অন্ধকারে তলিয়ে গেলো।প্রত্নতাত্নিকেরা খনন করলে হয়তো হৃদয় ভুমিতে খুজে পেতে পারে সেই সব সোনালী অতীত যেখানে পরতে পরতে আছে আশৈশব লালন করা মধুর স্মৃতি এক মোহময়ীকে ঘিরে।
মেরিলিন মনরো নয় ,ক্লিওপেট্রা নয় এমনকি প্রিন্সেস ডায়নাও নয় সে খুব সাধারণ।এতো সাধারণ যে তার চেয়ে সাধারণ কেউ হতে পারে না।তবুও সে অসাধারণ।সে অনায়াসে খুন করতে পারে হাসি মুখে।উপেক্ষা করে।আমি তাকে কোন ভাবেই দোষ দিতে পারিনা যে সে আমাকে উপেক্ষা করেছে।সে যদি কখনো আমাকে প্রশ্রয় দিতো তবেই না উপেক্ষার প্রশ্ন উঠতো।যে সুর্য কখনো উদিত হয়নি তা কি করে অস্ত যাবে? যে কখনো প্রশ্রয় দেয়নি সে কি করে উপেক্ষা করবে? এ এক আশ্চর্য গোলক ধাধা।আমি সেই ধাধায় পড়ে ঘুরছি অবিরাম। আমাকে কেউ ঘুরতে বলেনি, আমাকে কেউ প্রবোধ দেয়নি গোলক ধাধায় পড়তে। কেউ বলেনি তুমি এভাবে ঘুরতে থাকো যতদিন মন চায়।বরং আমাকে মুক্ত স্বাধীন ভাবে ঘোরার কথা বলা হয়েছে। তবুও আমি পঙ্গপালের মত আগুনের চারপাশে উড়ছি যতক্ষণ না সেই আগুনে দাহ হতে হতে ভষ্মিভুত হচ্ছি।
এ এক আশ্চর্য অনুভুতি।পাওয়া না পাওয়ার হিসেবের চেয়েও অন্য কিছু যেন বড় হয়ে উঠছে। অবিরাম বৃষ্টির দিনে রিকশার হুড তুলে পাশাপাশি ঘুরিনি কখনো,বৃষ্টিতে ভিজে মেতে উঠিনি আনন্দে।সিনেমা থিয়েটারে পাশাপাশি সিটে বসে উপভোগ করিনি ভয়ংকর কোন সিনেমা কিংবা রোমান্টিক সিনেমা।আমি যখন তাকে উত্তর মেরুতে খুজি সে তখন দক্ষিণ মেরুতে বাস করে।আমি যখন দক্ষিণ মেরুতে যাই তাকে দেখবো বলে সে তখন অজান্তেই উত্তর মেরুর বাসিন্দা হয়।আমি বুঝি এ কোন লুকোচুরি খেলা নয়।মুখে বিদায় বলতে খারাপ লাগবে ভেবে এটা করা। ভালোবাসতে না পারলেও সে ভালোবাসার মূল্য বোঝে বলেই নাকি এমন করে।
শেষ কবে আমার সাথে তার কথা হয়েছিল তা তার মনে নেই থাকার কথাও নয়।আর শেষ কবে দেখা হয়েছিল সেটা মনে পড়ারতো কথাই নয়। এসব মনে রাখার দায়িত্ব নিয়ে সে পৃথিবীতে আসেনি।কবে কোথায় কোন আকাশ থেকে কোন তারা খসে পড়লো তা জেনে তার লাভ কি! ওসব ভাববে আমার মত জ্যোর্তিবিদরা।দিন তারিখ মনে রাখবে আমার মত ইতিহাসবিদরা।তার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহুর্তই নিজের জীবনের এক একটি ইতিহাস বলে লিখে রেখেছি।