রশনি দৃতির খুব ভালো বন্ধু।পুরো ক্লাসের মধ্যেই রশনি খুব ভালো।ক্লাসে কেউ কারো সাথে ঝগড়া করলে রশনি এগিয়ে আসে এবং সেই ঝগড়া থামিয়ে দেয়।পড়াশোনা,খেলাধুলা সব কিছুতেই সে খুব ভালো,তার মনটাও খুব ভালো। আর এ কারণে সব্বাই তাকে খুব ভালোবাসে।সে খুব সহজ সরল। তার অনেক অনেক রকম শখ আছে তার মধ্যে একটি হলো কয়েন সংগ্রহ করা। একবার ক্লাসপার্টির দিন সে তার কয়েন সংগ্রহের বক্স নিয়ে এসেছিল। সেখানে যে কত দেশের কত রকম কয়েন আছে।ওর দেখাদেখি এর পর থেকে অনেকেই কয়েন সংগ্রহ করতে শুরু করলো।পরস্পর কয়েন বদলও করে।দৃতি মাঝে মাঝে রশনির কাছ থেকে বিভিন্ন দেশের কয়েন নেয়। দৃতি চাইলেই রশনি সেটা দিয়ে দেয়।
একদিন দৃতি জানতে পারলো রশনির কাছে একশো টাকার কয়েন আছে,দুইশো টাকার কয়েন আছে ,তিনশো টাকার কয়েন আছে এমনকি এক হাজার টাকারও কয়েন আছে।দৃতির বাবা ওকে টিফিনের জন্য যে টাকা দেয় দৃতি সেটা থেকে কিছু কিছু টাকা জমিয়ে রাখে। সে গুনে দেখলো তার কাছে প্রায় এক হাজার টাকা জমা হয়েছে,সামান্য কিছু বাকি। আম্মুকে বলে সে কিছু টাকা নিয়ে এক হাজার টাকা বানিয়ে ফেললো। প্রথমে সে ভেবেছিল রশনির কাছ থেকে একশো টাকার কয়েন নিবে পরে মনে হলো এখনতো হাতে এক হাজার টাকাই আছে তাই রশনির কাছ থেকে বরং এক হাজার টাকার কয়েনই নেই। যে ভাবা সেই কাজ। রশনিকে ফোন করলো।ওপাশ থেকে রশনির একমাত্র ভাইয়া জাজাফী ফোন রিসিভ করলো। জাজাফী ভাইয়া আবার দৃতিকে খুব ভালো করেই চেনে। কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারলো। জানতে চাইলো কি খবর রাজকন্যা কেমন আছ? দৃতি জানালো সে খুব খুব ভালো আছে। তার পর সে বললো ভাইয়া রশনিকে একটু দাওতো জরুরী কথা আছে। ভাইয়া রশনিকে ডাক দিলো। রশনিতখন পাশের রুমে বসে টিভি দেখছিলো।
ভাইয়ার ডাক শুনে রশনি চলে আসলো এবং ফোন ধরলো। দৃতি খুব এক্সাইটেড ছিলো। সে বললো রশনি শুনলাম তোমার কাছে এক হাজার টাকার কয়েন আছে?রশনি বললো হ্যা আছে। আমি জমিয়ে রেখেছি। দৃতি বললো আমাকে কালকে দিবা একহাজার টাকার কয়েন? প্রিয় বান্ধবী চেয়েছে রশনি কি আর না করতে পারে। সে বললো ঠিক আছে কালকেই স্কুলে নিয়ে আসবো। সেদিন রাতে দৃতির যেন আর ঘুমই আসতে চাইলো না। সে মনে মনে এক হাজার টাকার কয়েনের চিন্তা করতে লাগলো।পরদিন ক্লাসে গেলে দৃতি রশনিকে এক হাজার টাকা দিলো আর বললো আমার জন্য একহাজার টাকার কয়েন এনেছ? রশনি সুন্দর একটা বক্স ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো এটার মধ্যে তোমার জন্য এক হাজার টাকার কয়েন এনেছি।দৃতি হাতে নিয়ে দেখলো বেশভারি। বুঝলো এক হাজার টাকার কয়েন বলে কথা,একটু ভারিতো হবেই। সে তখনই খুলে দেখতে চাইছিলো কিন্তু মিস চলে আসায় আর খুলতে পারলো না। সারাদিন ক্লাসে বিজি থাকায় আর খোলার সুযোগ হলো না।
রাতে খাবার শেষ করে নিজের বিছানায় বসে রশনির দেওয়া বক্সটা খুব আগ্রহ নিয়ে খুললো। না জানি এক হাজার টাকার কয়েন কেমন হবে! সে যেই না ডালা খুলেছে অমনি ঝনঝনকরে অনেএএএএএকগুলো একটাকা দুইটাকা পাচটাকার কয়েন বিছানার উপর গড়িয়ে পড়লো।দৃতিতো অবাক। থাকার কথা এক হাজার টাকার কয়েন আর এখানে আছে একটাকা দুই টাকার কয়েন! সে কপট অভিমান নিয়ে রশনিকে ফোন করলো। বললো তোমার না আমাকে এক হাজার টাকার কয়েন দেওয়ার কথা তুমি এটা কি দিয়েছ? রশনির সরল জবাব কেন? ওখানে কি এক হাজার টাকার কয়েন নেই? কিছু কম আছে? তাহলে ভাইয়াকে আচ্ছা বকে দিবো। সেইতো গুনে গুনে এক হাজার টাকার কয়েন দিয়েছে বক্সে। দৃতি বুঝলো আসলে রশনির কোন দোষ নেই! দৃতি বুঝতে ভুল করেছিল। দৃতি ঘুমিয়েছে কিনা দেখতে এসে আমমু দেখলো দৃতির বিছানা জুড়ে অনেক অনেক কয়েন। এতো কয়েন কিভাবে এলো জানতে চাইলে দৃতি সব ঘটনা খুলে বললো। দৃতির আম্মু হাসিতে ফেটে পড়লেন।পরে বাসায় যে কোন মেহমান আসলেই একহাজার টাকার কয়েনের গল্প বলতেন আর দৃতি লজ্জায় লাল হয়ে যেতো।
গল্পঃ এক হাজার টাকার কয়েন
–জাজাফী
২৪ নভেম্বর ২০১৯