শাহ সাহেব লেন ধরে হাটছিলাম।উদ্দেশ্য আহসান মঞ্জিল যাদুঘরের ওদিকে যাবো।হাতে টাকা ছিলনা বলেই হাটছি।রাশেদের কাছে যদি কিছু টাকা ধার পাই এই আশায়।তবে পুরান ঢাকার অলিগলি এতোটাই চিপাচাপা যে হাটতে ভালও লাগেনা।আর বিশেষত পুরোনো দালানের দিকে তাকাতে গেলেতো বিপত্তিতে পড়তে হয়।কোন পাশ থেকে কোন রিক্সা নয়তো সিএনজি এসে লাগিয়ে দেবে তা জানতেই পারবেন না।আমি তাই দালান কোঠার দিকে না তাকিয়ে হাটছি।মাদ্রাসা গলির পাশে আসতেই দেখলাম একজন মহিলা খুব উদ্বিঘ্ন ভাবে পায়চারি করছে।সে সম্ভবত কাউকে খুজছে অথবা কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে।তার উদ্বিঘ্নতা আমাকে ছুয়ে গেল।ইচ্ছে হলো তাকে জিজ্ঞেস করি আপনাকে এতো উদ্বিঘ্ন দেখাচ্ছে কেন?
যে কথাটি আমি ভেবেছি তা আমাকে করতে হয়নি।কাছাকাছি যেতেই মহিলা নিজে আমাকে বললেন বাবা বিপদে পড়েছি সাহায্য করো।এই ঢাকা শহর আজব শহর এবং এর রহস্যের সমাধান আমাদের কারো কাছেই নেই।কেউ বিপদে পড়ার কথা বলে আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে আবার কেউ সাহায্য করার কথা বলেও আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে।আমি তার মুখের দিকে তাকালাম।আমার মায়ের বয়সী কিংবা তার চেয়ে একটু বড় হবেন।তার মুখে বিষন্নতার স্পষ্ট চিহ্ন।মানুষকি অভিনয়ে এতোটাই দক্ষ হতে পেরেছে যে কাউকে ইচ্ছে করে বিপদে ফেলার জন্য ফাঁদ তৈরির সময় সত্যিকারের বিষন্নতার ছাপ নিজের মূখে ফেলতে পারে।
আমি তার মূখের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছিলাম।তিনি বললেন বাবা কি ভাবছো,আমি খুব বিপদে আছি তোমার সাহায্য চাই।আমি সম্বিত ফিরে পেয়ে জানতে চাইলাম কি হয়েছে।অল্প কথায় জানতে পারলাম তার মেয়ে সন্তান সম্ভাবা এবং তার প্রসব বেদনা উঠেছে।এখনি হাসপাতালে নিতে না পারলে সবর্নাশ হয়ে যাবে।বাড়িতে ছেলে মানুষ বলতে কেউ নেই।তিনি প্রসব বেদনায় কাতরানো মেয়েকে একা ফেলে রাস্তায় দাড়িয়ে আছেন একটা সিএনজির জন্য।অনেক ক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পরও কোন সিএনজি পাননি।যাদেরকেই থামিয়ে সাহায্য চেয়েছেন কেউ শোনেনি।
আহ কী নিদারুন কষ্ট তার বুকের মধ্যে।বিপদের কথা জেনেও কেউ তার পাশে দাড়ায়নি,টাকা পয়সাতো চাননি তিনি।কেবল মাত্র একটা সিএনজি ডেকে এনে দিতে বলেছেন হয়তো।আমি তাকে আশ্বস্থ করে জানালাম এখনি একটা সিএনজি নিয়ে আসতেছি।ওনাকে সেখানে রেখেই চলে গেলাম।আমি জানিনা ওনার মেয়ের তখন কি অবস্থা।হয়তো তিনিও জানেন না মেয়ে বেচে আছে না মরে গেছে।প্রসব বেদনায় যন্ত্রনাকাতর মেয়েকে একা ফেলে রেখে তিনি ঘন্টাখানেক দাড়িয়ে আছেন ব্যস্ত রাস্তায়।এতো মানুষ কিন্তু কেউ মানবতা দেখিয়ে এগিয়ে আসেনি।এতো সিএনজি কিন্তু একটাও ফাঁকা নেই।আজ যেন সবাই ব্যস্ত।অন্য সময় ডাক না দিতেই ডজন ডজন খালি সিএনজি অটো রিক্সা চলে আসে আর আজ খুজেও পাওয়া যাচ্ছেনা।
পকেটে পয়সা নেই বলেই হাটছিলাম তাই সিএনজি আনতে যাওয়ার জন্য রিক্সায় উঠতে পারিনি। বিপদগ্রস্থ ভদ্র মহিলাকে কি তখন বলা যেত যে আমাকে রিক্সা ভাড়া দিন আমি সিএনজি ভাড়া করে নিয়ে আসি।এই পাথরের মত কঠিন শহরে আমি অতটা জড় হতে পারিনি।সময় লাগলেও একটা সিএনজি ঠিক করে ফেললাম।মিডফোর্ডের দিকে যাবো কিনা ভাবতে ভাবতে মনে হলো ওদিকে প্রচন্ড জ্যাম।তাই ঢাকা মেডিকেলই সব থেকে ভাল হবে।মগবাজারে আদ দীন হাসপাতালটি মা ও শিশুদের জন্য দেশ সেরা হাসপাতাল বলে জানি।আমি নিজে একবার রক্ত দিতে গিয়ে সেটা প্রত্যক্ষ করেছি।কিন্তু সেটা বেশ দূরে হওয়াও ওদিকে যাওয়া যাবেনা।আমার ওসব ভেবে লাভ নেই।আমার দায়িত্ব শুধু সিএনজি ভাড়া করে দেওয়া।
সিএনজিওয়ালাকে ঢাকা মেডিকেলের কথা বলেই ঠিক করে উঠে বসলাম সিএনজিতে।ভদ্র মহিলা উদ্বিঘ্ন চোখে সেখানেই দাড়িয়ে ছিলেন।আমার চলে আসার পর তিনিকি ভেবেছিলেন অন্যদের মত আমিও তাকে সাহায্য করবো না বরং তার হাত থেকে বাচার জন্য ওখান থেকে মিথ্যে অভিনয় করে পালিয়ে এসেছি।সিএনজি তার সামনে গিয়ে থামলো।তিনি কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে।তার চেহারার উপর থেকে উদ্বিঘ্নতা পুরোপুরি না গেলেও আগের তুলনায় কমে গেছে সেটা দেখেই বুঝা গেল।
তিনি সিএনজিতে উঠে বসলেন।এই প্রথম কেন যেন মনে হলো আমি সম্ভবত ফাদে পা দিয়েছি।ভদ্র মহিলা কেন সিএনজিতে উঠে বসবেন।তবে ভয়ের কিছু নেই।আমার বলতেতো আমি ছাড়া আর কিছু নেই।পকেটে ফুটো পয়সাটিও নেই,হাতে ঘড়ি নেই আছে শুধু সামান্য পুরোনো মডেলের একটা মোবাইল।তা বেচলে পাঁচশো টাকাও হবেকিনা সন্দেহ।এটার জন্য নিশ্চই কেউ সিএনজি ভাড়া করবেনা।পরক্ষণেই আমার মনের ভুল ভেঙ্গে দিলেন ভদ্রমহিলা।তার বাসাটা একটু ভিতরে।সেটা সিএনজি নিয়ে ঢুকেই বুঝতে পারলাম।সিএনজি ঠিক করে দিয়েছি তার পরও আমি কেন যাচ্ছি এরকম প্রশ্ন আমার মনে জাগেনি কারণ মহিলা বলেছিলেন বাসায় আর কেউ নেই।তাহলে প্রসব বেদনায় জর্জরিত মেয়েটিকে সিএনজিতে কে উঠিয়ে দিবে।বাসার আসেপাশে কি কোন মানুষ নেই?তারাকি ওনাকে সহযোগিতা করতে পারেনা?
এই বিপদের দিনে তাকে কি এই প্রশ্নটি করা ঠিক হবে?তবুও প্রশ্নটা করলাম।তিনি বললেন সিএনজি থেকে নামলেই তুমি বাবা কিছুটা বুঝতে পারবে।আবারও মনের মধ্যে খটকা কাজ করতে শুরু করলো।সিএনজি থেকে নেমে কেন বুঝতে পারবো?আমাকে কি তবে অপহরণ করা হচ্ছে?অপহরণ করে লাভ কি?আমিতো বড়লোকের সন্তান নই যে বাবা মায়ের কাছে চাঁদা চাইবে।আমিতো সরকারী দলের নেতা নই যে বিরোধী পক্ষের কেউ আমাকে আটকে রেখে কোন ফায়দা লুটবে।আমিতো এমন কোন ব্যক্তি নই যাকে আটকে রেখে সন্ত্রাসীরা তাদের লিডার টাইপের কারো মুক্তি দাবি করবে।আবার মনে হলো অপহরণের জন্য অতো সব শর্ত লাগেনা।আমাকে অপহরণ করে শরীরের থেকে একটা একটা অংশ কেটে বিক্রি করলেওতো কিছু লাভ হবে।
লাভ যে হবে এটা আমি বুঝতে পারি।সিগারেট খাইনা,মদ গাজার নামতো দূরে থাকুক।কালে ভদ্রে চা হয়তো খাই যদি কেউ খাওয়ায়।পেট পুরে দুবেলা ভাতই খাওয়া হয়না প্রতিদিন সেখানে চা মানেতো বিলাসীতা।অন্যরা যখন খাওয়ায় তখনই শুধু খাওয়া হয়।অতনুদা মাঝে মাঝে চা খাওয়ায় বলেই চায়ের যে একটা স্বাদ আছে তা বুঝতে পারি।আমার এই ছন্নছাড়া জীবনেও অতনুদা আমাকে পছন্দ করেন,স্নেহ করেন।অবশ্য তিনি কবি বলেই হয়তো আমার প্রতি তার স্নেহ।কারণ আমি কবিতা ভালবাসি,বিশেষ করে তার কবিতা আমাকে টানে।
সিএনজি থেকে নেমে চারদিকে তাকাই।কোথাও যেন কোন সাড়াশব্দ নেই।যেন পাকিস্তানী হানাদারেরা এসে চারদিকে সব মানুষকে মেরে ফেলেছে বলে কারো কোন সাড়া নেই।নাহ এটা যদি ১৯৭১ সাল হতো তাহলে হয়তো সেরকম হতে পারতো।কিন্তু আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি।পুরোন ঢাকার ব্যস্ত এলাকায় এমন শুনসান নিরবতা আমাকে আরো বেশি অবাক করে দিল।আমি সেই ভদ্রমহিলাকে কথাটি বলতেই তিনি বললেন সবাই উরষ খেতে গেছে।কাক পক্ষীটিও নেই এলাকায়।আর এমন সময়ে আমার মেয়ের এই অবস্থা।
আমরা আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম।মনের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে যে দ্বিধাদন্দ্ব কাজ করছিল তা ছুড়ে ফেলে দিলাম।বুঝলাম আমি অমূলক সন্দেহ করেছি এতোক্ষণ।বাড়ি বলতে যা বুঝায় ঠিক সেরকম কিছু নয়।আমি পার্কের বেঞ্চিতে ঘুমিয়ে যতটা আরাম পাই এরা হয়তো বাড়ি নামের এই খুপরিতে ঘুমিয়ে ঠিক ততোটাই অস্বস্থি বোধ করে।ঘরে ঢুকার আগেই মেয়েটির কাতরানো শুনতে পেলাম।দ্রুত পায়ে তার বিছানার পাশে গিয়ে দেখলাম তার অবস্থা খুবই শোচনীয়।মেয়ের অবস্থা আরো খারাপ দেখে মাও ভেঙ্গে পড়লেন।
একমাত্র মেয়ে তার।নিজের আপন বলতে এই মেয়েটি ছাড়া আর কেউ নেই।জামাই সাথে থাকেন তবে চাকরির জন্য তাকে রোজ সকালে বেরিয়ে যেতে হয়।প্রসব বেদনা ওঠার সাথে সাথে তাকে ফোন করা হয়েছিল কিন্তু ফোনে পাওয়া যায়নি।আমি আর সময় ক্ষেপন না করে ভদ্র মহিলাকে বললাম এখনই ওকে হাসপাতালে না নিলে কি হবে বলা যাচ্ছেনা।ওই মুহুর্তে ভদ্রমহিলার পক্ষে সম্ভব ছিলনা মেয়েকে কোলে করে সিএনজিতে নেওয়ার।নিজের বড় আপার কথা মনে করে আমাকেই কোলে তুলে নিতে হলো।বড় আপা হলেও নিশ্চই আমি এভাবেই নিতাম।তাকে সিএনজিতে বসিয়ে ভদ্রমহিলাকে উঠতে বললাম।তিনি ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।সেই চোখে ছিল কৃতজ্ঞতা।কি মনে হলো আমিও সিএনজিতে উঠে বসলাম।আমি জানি ওনাকে একা যেতে দেওয়া ঠিক হবেনা।মেয়ের অবস্থা দেখে তিনি ভেঙ্গে পড়েছেন।মেয়েকে সিএনজি থেকে কে নামাবে,ডাক্তারের কাছে কে দৌড়াবে সেটা ভেবে আমিও সাথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
সিএনজিওয়ালাকে বললাম যতটা সম্ভব সাবধানে অথচ দ্রুত গতিতে ঢাকা মেডিকেলে যেতে।তিনি আস্বস্থ করলেন।শাহ সাহেব লেন পেরিয়ে গুলিস্থান হয়ে চানখার পুলের দিকে ছুটছিল আমাদের সিএনজি।সিএনজির ভিতরে বড় আপা সমতুল্য এক বোন প্রসব বেদনায় মুর্ছা যাচ্ছিল আর পাশে তার দুই কূল হারা মা।কেন যেন মনে হচ্ছিল আমরা মেডিকেলে পৌছাতে পৌছাতে কিছু একটা হয়ে যাবে।মোড় পেরোতেই গাড়ি থেমে গেল।সামনে রাস্তা বন্ধ।না জ্যাম ছিল ওখানে।পিছনে ঘুরিয়ে অন্য পথে যাওয়ার মত অবস্থাও ছিলনা।পিছনেও ততক্ষনে ব্লক হয়ে গেছে।আমি গাড়ি থেকে নেমে জানতে চেষ্টা করছি কি কারণে এ সময় এই রাস্তা এভাবে জ্যাম লাগলো।জানতে পারলাম কোন একজন ভিআইপি যাবেন বলে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
ভিআইপিরা কালো কাচ দিয়ে ঘেরা গাড়িতে চলাফেরা করে।খুব ইচ্ছে করে তাদেরকে দেখতে।তারা কিরকম মানুষ যে তারা ভিআইপি আর অন্যরা আমজনতা।তাদের একজনের জন্য হাজারজনকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।এই জ্যাম কখন ছাড়বে তা কারো জানা নেই।ওদিকে প্রসব বেদনায় মৃতপ্রায় একজন সিএনজিতে গা এলিয়ে দিয়েছে।আমি দ্রুত গিয়ে সিএনজিতে বসলাম।ভদ্রমহিলা তখন আল্লাহর নাম নিচ্ছেন আর বিলাপ করছেন।বেদনায় জর্জরিত মেয়েটিও মুখে আল্লাহর নাম নিচ্ছেন।তার বেদনায় সিএনজিওয়ালাও ব্যথিত।তিনিও নিশ্চই সৃষ্টিকর্তার নাম নিচ্ছিলেন।
জগতে অনেক অজানা রহস্য থাকে যার সমাধান আমরা পাইনা।জীবনে প্রথমবারের মত আমিও সেরকম এক রহস্যের সামনে পড়ে গেলাম।এর পিছনে কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি দাড় করাতে পারলাম না কিংবা অন্য কোন যুক্তিও নয়।কথাটা কারো বিশ্বাসই হবেনা।কিন্তু অনেক কিছু আছে যা বিশ্বাস করা না করায় কিছু যায় আসেনা।আমাদের চোখে রাজ্যের বিস্ময় এনে দিয়ে আমাদের সিএনজিটি শুন্যে ভেসে উঠলো।মুহুর্তেই সে যেন হাওয়াই জাহাজ হয়ে গেল।দাড়িয়ে থাকা সিএনজি,রিক্সা,প্রাইভেট কার থেকে অগণিত মানুষ বেরিয়ে সেই দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে গেল।ড্রাইভার কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাই করে বেলুনের মত ভাসতে ভাসতে সিএনজি জ্যাম পেরিয়ে অন্য পাশের রাস্তায় গিয়ে নামলো।কেন হলো কিভাবে হলো তার কিছুই আর কোন দিন জানতে পারিনি।ড্রাইভারও জানতে পারেনি।আর সন্তান সম্ভবা মেয়েটি কিংবা তাকে নিয়ে উদ্বিঘ্ন মাও কিছু বুঝতে পারেনি।
সিএনজি কি করে আকাশে উড়তে পারে এবং সেটা সোজা গন্তব্য পযর্ন্ত উড়ে না গিয়ে ওইটুকু পথ কেন শুন্যে ভেসেছিল তার রহস্যও আমাদের জানা হয়নি।ঢাকা মেডিকেলের অভিজ্ঞ ডাক্তারদের সহযোগিতায় একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হলো।জন্মের পর মা ও শিশু দুজনই ভাল ছিল।আমি চলে আসার পর পেরিয়ে গেছে অনেক বছর।তাদের সাথে আমার যোগাযোগ করা হয়নি কখনো।জানা হয়নি যে শিশুটির জন্ম হয়েছিল তার নাম কি রাখা হয়েছিল এবং কিভাবে তারা বাড়িতে ফিরে গিয়েছিল।জানা হয়নি শিশুটির বাবা কি পরে ফোন পেয়ে মেডিকেলে ছুটে এসেছিল।
সেই সিএনজি চালকের সাথেও আমার কোন দিন দেখা হয়নি।আমার মত সেওকি ওই ঘটনার কথা কোন দিন ভুলতে পেরেছে?
কার্জন হল থেকে ফিরছি শহীদুল্লাহ হলে।আমি তখন শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট।এমন সময় পিছন থেকে মেয়ে কন্ঠে কারো ডাক শুনতে পেলাম।পিছনে ফিরতেই সম্পুর্ন অপরিচিত কোন একটা মেয়েকে দেখলাম।আমার স্মৃতি শক্তি অতটা দুবর্ল নয় যে আমার বিভাগের ছাত্র ছাত্রীদের আমি চিনতে পারবো না।নতুন হলেও বেশ মনে থাকে আমার।নাম মনে না থাকলেও চেহারা মনে থাকে।কিন্তু এই মেয়েটিকে চিনতে পারলাম না।
মেয়েটি কাছে এসে সালাম দিল।সালামের উত্তর দিতে না দিতেই সে প্রশ্ন করলো স্যার বলুনতো আমি কে?আমি বললাম মা তোমাকেতো আমি চিনতে পারছিনা।তুমি নিশ্চই আমার ডিপার্টমেন্টের নও।আমি ফিজিক্স পড়াই বিগত ১৭ বছর ধরে।মেয়েটি জানলো সে ফিজিক্সের নয়।সে ম্যাথম্যাটিকস এ। এ বছর ভর্তি হয়েছে।ম্যাথের ক্লাস কার্জন হলে হয়না বলে আরো বেশি অপরিচিত লেগেছে।
মেয়েটি আমাকে চমকে দিয়ে বললো স্যার চলুন ফিরে যাই উনিশ বছর আগে পুরোন ঢাকার শাহ সাহেব লেনে।যেখানে মোড়ে দাড়িয়ে ছিলেন এক উদ্বিঘ্ন মধ্য বয়স্ক নারী।অতটুকু বলার সাথে সাথে ঘটনাটা মনে পড়লো।সেই সিএনজির ঘটনা আমি ভুলে যাবো এটা কোন ভাবেই সম্ভব নয়।স্মৃতি বড় প্রতারক হলেও ওই স্মৃতি কখনো আমার সাথে প্রতারণা করবেনা বলেই মনে হয়েছিল।কিন্তু এই মেয়েটির সেসব জানার কথা নয়।
আমি বললাম ওই ঘটনাটা তুমি কিভাবে জানলে?দ্বিতীয়বারের মত আমি চমকে উঠলাম।ওর নাম সায়িদা নাজনিন।সায়িদা মানে সৌভাগ্যবতী আর নাজনিন ওর মায়ের নাম।সেদিন ঢাকা মেডিকেলে জন্ম নেওয়া সৌভাগ্যবতী শিশুটিই সে।
হাটতে হাটতে শহীদুল্লাহ হলের গেট পেরিয়েছি।পাশে পাশে হাটছে সায়িদা।সে জানতে চায় সেদিনের সেই সিএনজি রহস্য যা তার নানি তাকে বলেছিল।ওকে আমি কি বলবো। যেখানে আমি নিজেই রহস্যের কোন কুল কিনারা পাইনি।আর এতো বছর পর ও আমাকে চিনলো কিভাবে সেটার রহস্যও সে নিজেই বলতে পারেনি।
জাজাফী
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
উত্তরা,ঢাকা-১২৩০