বাম হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে ক্লাসে ঢুকলো মাহি।বন্ধুরা ওকে ঘিরে ধরে জানতে চাইলো তোর কি হয়েছে?হাতে ব্যান্ডেজ কেন?গত কালকেওতো তুই ভাল ছিলি আজ এ অবস্থা হলো কি করে?এক সাথে এতো গুলো প্রশ্ন করলে ছোট্ট মাহি কি করে উত্তর দিবে?মাহি এবার গবর্ণমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়ে।বন্ধুরা ওকে খুবই ভালবাসে এবং ও নিজেও বন্ধুদের ভালবাসে।সে শান্ত হয়ে একটা সিটে বসলো এবং বললো তোদের সব প্রশ্নের উত্তরতো আমি একসাথে দিতে পারবোনা।
বন্ধুরাও ওকে ঘিরে দাড়িয়ে থাকলো।মাহি তখন বললো সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসায় কেউ নেই।আম্মু নেই,আব্বু নেই,আপুও নেই।সারা বাড়ি নিরব।যেন ভুতুড়ে বাড়ি।মাহির কথা শুনে সবার গা শিরশির করতে লাগলো।যেন মাহি কোন একটা ভুতের গল্প বলছে।এর পর ভাবলাম ভাইয়া নিশ্চই আছে।আমার ভাইয়া আবার অনেক বড় বিজ্ঞানী।নটরডেম কলেজে পড়েতো তাই সে বিজ্ঞানের অনেক কিছু জানে।ভাইয়াকে নিশ্চই ওর রুমে পাওয়া যাবে।আমি স্কুল ড্রেস পরে ব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে ভাইয়ার রুমে গেলাম।যদি ভাইয়া থাকে তবে ওকে বলবো আমাকে স্কুলে পৌছে দিতে।
আমি খুব সাবধানে ওর রুমে ঢুকলাম।ঘন অন্ধকার চারদিকে।দিনের বেলায় একটা রুম এতো অন্ধকার থাকে ভাবাই যায়না।কোথাও কেউ নেই।আমি ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকলাম কেউ কোন সাড়া দিলনা।ভাইয়ার রুমে ঢুকতে এমনিতেই ভয় লাগে।টেবিলে নানা রকম কেমিকেল রাখা।কোনটাতে যে কি হয় জানা নেই।একটু অসাবধান হলেই সবর্নাশ।মাহির কথা শুনে সবাই নিরব হয়ে গেল।সবাই ভয়ে ভয়ে আছে,যেন সত্যি সত্যিই তখন মাহির মত তারাও ওরকম পরিস্থিতিতে আছে।
মাহি আবার বলতে শুরু করলো।যখন কয়েকবার ডেকেও ভাইয়ার কোন সাড়া পেলাম না তখন ভয়ে আমার শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।আম্মু,আব্বু,আপু কেউ নেই,এমনকি ভাইয়াও নেই? সবাই গেল কোথায়?সবাই কি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল?ভাবতে ভাবতে ভাইয়ার রুম থেকে বের হবো বলে যখন ঘুরেছি ঠিক তখনই ঘটলো ভয়ংকর ঘটনাটি।মাহির কথা শুনে ক্লাসের সবাই ভয়ে চিৎকার করে উঠলো।কি ঘটলো কি ঘটলো?ভুত ছিল?নাকি দৈত্য?কামড়ে দিয়েছিল?আচ্ছা দৈত্যের কয়টা দাত ছিল?শিং ছিল?
মাহি বললো আরে থামতো তোরা। ভুত,প্রেত,দৈত্য দানো কিছু না।আসল কথা শোন।আমি যখন সেই অন্ধকারেই ঘুরে ভাইয়ার রুম থেকে বের হতে যাবো তখন অসাবধানতায় ভাইয়ার টেবিলের উপরে রাখা অনেক অনেক কেমিক্যালের শিশির একটিতে ধাক্কা লেগে আমার বাম হাতে পড়লো।আমার মনে হলো সাথে সাথে হাতটা অবাশ হয়ে যাচ্ছে।আমি দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে বেসিনে গিয়ে ভাল করে পানি দিয়ে হাত ধুয়ে তার পর একাএকাই ব্যান্ডেজ করেছি।না জানি কোন এসিড ফ্যাসিড হবে হয়তো। তা না হলে ওটা পড়ার সাথে সাথে আমার হাত ওভাবে অবাশ হয়ে যাবে কেন?
ওর কথা শুনে সব বন্ধুরা একসাথে বলে উঠলো সবর্নাশ! শুধু রাহুল চুপ করে ছিল।সে এবার জানতে চাইলো আচ্ছা মাহি তুই ব্যান্ডেজ করার পর ভাইয়ার রুমে গিয়ে চেক করে দেখিসনি যে ওই কেমিক্যালের শিশির গায়ে কি নাম লেখা ছিল?মাহি বললো হ্যা আমি ব্যান্ডেজ করে ভাইয়ার রুমে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে চেক করেছি।যে শিশির কেমিক্যাল আমার হাতে পড়েছিল সেটার গায়ে লেখা H2O ! মাহির কথা শুনে অন্যরা যখন বলছে সবর্নাশ,ওটা নিশ্চই ভয়ংকর কোন কেমিক্যাল,তুই একটুর জন্য বেঁচে গেছিস তখন রাহুল হো হো করে হেসে উঠলো।
মাহি ওর হাসি দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বললো তুই আমার বন্ধু নাকি শত্রু? আমার এতো বড় বিপদের কথা শুনেও তুই হাসতেছিস?ক্লাসের অন্যরা তখন মাহির পক্ষ নিয়ে রাহুলকে একই কথা বললো। রাহুল তখন শান্ত হয়ে মাহিকে প্রশ্ন করলো তুই ডিসকভারি চ্যানেল দেখিস?মাহি জানালো সে কাটুর্ন নেটওয়ার্ক ছাড়া অন্য চ্যানেল দেখেনা।রাহুল আবার প্রশ্ন করলো তুই কিশোর আলো পড়িস?মাহি জানালো না কিশোর আলোওতো পড়িনা,রাহুল আবার প্রশ্ন করলো তুই বিজ্ঞান চিন্তা পড়িস?এবারও মাহি জানালো সে বিজ্ঞান চিন্তা কি জিনিস তাই তো জানেনা।অন্য বন্ধুরা বললো মাহির হাতে কেমিক্যাল পড়ার সাথে ওসবের কি সম্পর্ক?রাহুল বললো তোরাও সবাই নিশ্চই মাহির মতই ডিসকভারি চ্যানেলও দেখিসনা আবার কিশোর আলো কিংবা বিজ্ঞান চিন্তাও পড়িস না।
যদি পড়তি তাহলে বুঝতি।ক্লাসের কেউ রাহুলের কথার কিছুই বুঝলোনা। রাহুল তখন বললো আরে বোকা মাহির হাতে যেটা পড়েছে আর ও ঘাবড়ে গিয়ে পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলেছে ওটাও ছিল পানি!মানে মাহি পানি দিয়ে পানিই ধুয়েছে!রাহুলের কথা শুনে অন্যরা চমকে উঠলো।মাহি শুধু বললো তুই গুল মারিস না!ওটা পানি হতে যাবে কোন দুঃখে?ওটার গায়ে স্পষ্ট লেখা আছে H2O ! রাহুল আবার হো হো করে হেসে উঠলো।তার পর বললো এ জন্যইতো বললাম যে তোরা যদি কিশোর আলো কিংবা বিজ্ঞান চিন্তা পড়তি তাহলে এরকম বোকামী করতিনা।
পানির সংকেত হলো H2O ! মানে বিজ্ঞানের ভাষায় পানিকে H2O দিয়ে বোঝানো হয়! রাহুলের কথা কেউ বিশ্বাস করলোনা।তখন রাহুল ব্যাগ থেকে একটা বিজ্ঞান চিন্তা ম্যাগাজিন বের করে দেখালো যে সত্যি সত্যিই পানিকেই H2O বলা হয়! সবাই তখন খুবই অবাক হয়ে গেল।সবাই কাড়াকাড়ি করে বিজ্ঞান চিন্তা ম্যাগাজিনটা দেখতে লাগলো।রাহুল তখন সবাইকে বললো একটা মজার ঘটনা শুনবি?ওর কথা শুনে সবাই বিজ্ঞানচিন্তা ম্যাগাজিনটা রেখে ওর দিকে তাকাল।ও বলতে শুরু করলো
আমার বুশরা আপু সায়েন্স নিয়ে পড়ে।মাহির ভাইয়ার মতই তার ঘরেও অনেক কিছু আছে।আমি আপুর থেকে অনেক কিছু শিখেছি পাশাপাশি বিজ্ঞান চিন্তা আর কিশোর আলো পড়েও অনেক কিছু শিখেছি।একদিন আপু বাসায় নেই।আম্মু রান্না করছে।আমি ডাইনিং টেবিলে পানি খেতে গিয়ে দেখি আম্মু বেশ চিন্তিত।আমি বললাম আম্মু কি হয়েছে,কি নিয়ে চিন্তা করছো?আম্মু বললো দেখতো কি যন্ত্রনা।রান্না বসিয়েছি এখন দেখি খাবার লবন নেই।এখন লবন ছাড়া রান্না করি কি করে?আমার মনে পড়লো আপুর রুমে আমি লবন দেখেছি।সাথে সাথে আপুর রুমে গিয়ে কাচের একটা ছোট বোতল নিয়ে আসলাম।সেটা নিয়ে আসলাম। এসে দেখি আম্মু নেই।
আমি সেই বোতল থেকে বেশ খানিকটা তরকারির মধ্যে ঢেলে দিলাম।একটু পরেই আম্মু ফিরে এলে আমি বললাম আম্মু তোমার তরকারিতে আমি খাবার লবন দিয়ে দিয়েছি আর কোন চিন্তা নেই।আম্মু চোখ কপালে তুলে বললেন তুই খাবার লবন কোথায় পেলি?আমি আপুর রুম থেকে আনা শিশিটা আম্মুর হাতে দিয়ে বললাম এই দেখ আরো অনেক খানি আছে।আম্মু শিশিটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে দেখে বললেন তুইতো সবর্নাশ করেছিস।সবাইকে কি মেরে ফেলবি নাকি?তরকারিতেতো তুই বিষ মিশিয়ে দিয়েছিস।আমি অবাক হয়ে বললাম কি বলছো আম্মু?বিষ মেশাবো কেন?আমিতো লবন দিয়েছি।আম্মু শিশিটা দেখিয়ে বললেন এই দেখ এই বোতলে লেখা আছে সোডিয়াম ক্লোরাইড।এটা নির্ঘাত বিষ না হয়ে যায়না।
আমি তখন হো হোক করে হেসে উঠলাম।আমার হাসি দেখে আম্মু রাগ করলেন আর বললেন তুই হাসছিস কেন?আমি দ্রুত রুমে গিয়ে একটা বিজ্ঞান চিন্তা আর একটা কিশোর আলো নিয়ে আসলাম।তার পর বললাম আম্মু ওটা বিষ না ওটাই লবন। এই দেখ।তার পর আম্মু দেখলেন সত্যি সত্যিই বিজ্ঞান চিন্তাতে লেখা আছে লবনের রাসায়নিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড!আম্মু আসলে বিজ্ঞানের ছাত্রী না বলেই বুঝতে পারেনি।আম্মু তখন আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন ওহ আমার লক্ষ্মী বাচ্চাটা কত্ত সুইট।
রাহুলের কথা শুনে সবাই খুবই আশ্চর্য হলো।তারা সবাই বিজ্ঞান চিন্তা ম্যাগাজিনটা বাসায় নিয়ে যাওয়ার আবদার করলো।রাহুল বললো আরে একটা ম্যাগাজিন সবাই কি করে বাসায় নিবি।তার চেয়ে লাইব্রেরীতে গেলেইতো কিনতে পারবি।ক্লাসের সবাই হুররে বলে চিৎকার করে উঠলো।এমন সময় সুষমা মিস ক্লাসে ঢুকলেন।বাচ্চাদেরকে এতো আনন্দিত দেখে জানতে চাইলেন তোমরা আজ এতো খুশি কেন? তখন রাকিন বলে উঠলো মিস আপনি কিশোর আলো পড়েন?মিস বললেন নাতো।রাহুল বললো মিস আপনি বিজ্ঞান চিন্তা পড়েন?মিস বললেন নাতো।মাহি বললো মিস আপনি ডিসকভারি চ্যানেল দেখেন?মিস বললেন নাতো,আমিশুধু স্টার প্লাস দেখি।মিসের কথা শুনে সারা ক্লাস আবার হাসিতে ফেটে পড়লো।মিস বুঝতেই পারলেন না মাহি ও তার বন্ধুদের হঠাৎ কি হলো।
২০ নভেম্বর ২০১৬
ইমেইলঃ [email protected]