Thursday, November 21, 2024
Homeগল্পপথে পথে হিমু পরিবহণ

পথে পথে হিমু পরিবহণ

শ্রাবণের শেষ বিকেলে আমি দাড়িয়ে আছি শাহবাগে। আকাশে কোন মেঘ নেই,পড়ন্ত বিকেলে সূর্য তার যত টুকু তেজ তা পৃথিবীতে নিংড়ে দিচ্ছে। সেলিমের আসার কথা। ও এলে ওকে সাথে নিয়ে যাব রুপার বাসায়।রুপাকে পাব কিনা জানিনা অবশ্য সেলিমের কাছে নিশ্চই ফোন আছে ওর ফোন থেকে না হয় রুপাকে একটা ফোন করে বাসায় থাকতে বলে দেব। সেলিম ছেলেটা বেশ করিৎকর্মা। ইদানিং বেশ সামাজিক দায়িত্ব সচেতন হয়ে এটা ওটা করার চেষ্টা করছে। মাজেদা খালা জানেনা যে ইতমধ্যে বাদলের মত সেলিমও আমার ভীষণ ভক্ত হয়ে উঠেছে।

প্রথম যেদিন আমি সেলিমকে দেখলাম নিজেই থ হয়ে গেলাম। হলুদ পাঞ্জাবী,উস্কোখুস্কো চুল চেহারায় দার্শনিক ভাব। আমার সামনে এসে মাথা নিচু করে লাজুক ভঙ্গিতে বললো হিমু দা আমি আপনার ভীষণ ভক্ত। আমি স্বভাবসুলভ ভাবে বললাম তুমি যে আমার ভক্ত তাতো তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু তুমিতো খালি পায়ে না। আমার কথা শুনে সেলিম একটু খুকখুক করে কাশি দিয়ে বললো হিমু দা আমিতো আপনার ভক্ত মাত্র সরাসরি হিমুতোনা। খালি পায়ে থাকতে পারিনা। সেই থেকে সে আমার পিছনে লেগে আছে। আমার পিছনে লেগে আছে বলতে আমার সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছে। ও আরো অনেক অনেক হিমু ভক্তদের নিয়ে একটা বিশাল দায়িত্ব হাতে নিয়েছে। হুমায়ুন আহমেদের নামে ক্যান্সার হাসপাতাল বানাবে।

এ জন্য ওর রুপার সাহায্য দরকার। রুপার সাথে যেহেতু আমার ভাল জানাশোনা আছে তাই সেলিমের ধারনা হিমুদা সাথে থাকলে রুপাদির সাথে বিষয়টা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।বাবা বলেছেন সব সময় মহাপুরুষরা ভাল কাজের সাথে যুক্ত থাকে। আমিও বাবার কথা রাখার চেষ্টা করছি। ছেলেটা বলেছিল আজ শাহবাগে এসে আমার সাথে দেখা করে রুপাদের বাসায় যাবে। সে জন্য বিশ মিনিট হলো এখানে অপেক্ষা করছি। শাহবাগ এখন আর আগের মত নেই। এখন কোন বিশেষ কিছু হলেই তরুনেরা শাহবাগে এসে জমা হয়। মিছিল করে,গলা ফাটিয়ে শ্লোগান দেয়। এই বিশ মিনিটেই অনেক কিছু চোখে পড়লো। আমি দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় হঠাৎ দেখি নীল ক্ষেত থানার ওসি আকরাম সাহেব মটর সাইকেলে করে যাচ্ছেন। আমাকে দেখেই থামলেন।

হিমু ভাই এখানে দাড়িয়ে কেন? ওঠেন থানায় গিয়ে এক কাপ গরম চা খেয়ে আসবেন। ভাবলাম যাই এতো করে যখন বলছে। আমি হাটছি আর ওসি সাহেব আস্তে আস্তে মোটর সাইকেল চালাচ্ছেন।ঘন্টা দুই তার সাথে আড্ডা দিলাম,তিন চার কাপ চা খেলাম তার পর মনে হলো এখন ওঠা দরকার। সেলিম নিশ্চই শাহবাগে এসে আমাকে না পেয়ে চিন্তা করছে। সত্যি সত্যিই দেখি সেলিম এসে দাড়িয়ে আছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আমাকেই খুজঁছে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। হঠাৎ আমার দিকে চোখ পড়তেই ওর মুখ উজ্জল হয়ে উঠলো। উচ্ছ্বাস দমিয়ে না রেখে বললো হিমু দা আপনি সত্যিই দেখা করার কথা মনে রেখেছেন।

কোন কথা না বলে ওকে নিয়ে রুপাদের বাসার দিকে রওনা হলাম। রুপাকে একটা ফোন করা দরকার এ কথা বলতেই সেলিম ফোনটা বের করে দিল। রুপাকে সাথে সাথেই পাওয়া গেল তবে সে বাসায় নেই। সে আছে কাটাবনে। শাহবাগ থেকে কাটাবন খুব বেশি দূরে নয়। বললাম ওখানেই তোমার সাথে দেখা হচ্ছে। রুপার সাথে সেলিম বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো। জয়নালের সাথে দেখা করার দরকার ছিল বলে আমি সদর ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পরে জানতে পারলাম রুপা সেদিন সেলিমকে নিয়ে এমন কয়েকজনের সাথে দেখা করেছিল যারা ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য প্রায় ১৯ লাখ টাকা দিয়েছে। আমি রুপার পরিচিতি আর পরিধি দেখে অবাক হই।

কত সহজেই সে এতো গুলো টাকা জোগাড় করে ফেললো।ইদানিং শুনছি ফেসবুকে হিমু পরিবহন নামে একটা পেজও তৈরি করা হয়েছে। যতই লুকিয়ে থাকতে চাই হিমু ভক্তরা ততোই আমাকে বাইরে নিয়ে আসে। রাতে স্বপ্নে বাবা এসে ধমকে গেলেন হিমালয় তুমি বেশি মানুষের সাথে মিশছো এটা ঠিক হচ্ছেনা। আমি কি করবো? যে মানুষগুলো ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য আমার নামে হিমু পরিবহন খুলে এতো কষ্ট করছে তাদের সাথে আমি না থেকে পারিনা। আমি হিমু খালি পায়ে হেটে চেষ্টা করছি ক্যান্সার হাসপাতালের কাছে পৌছাতে। যেখানে আগে থেকেই হিমু পরিবহন পৌছে গেছে।

 

200 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Most Popular