একাডেমিক ব্লকের নিচেয় দাড়িয়ে আছি আমি ওয়ালিউর আর অপার। ক্যাডেট ওয়ালিউর শের ই বাংলা হাউসের আর ক্যাডেট অপার সোহরাওয়ার্দী হাউজের।আমাদের মধ্যে দারুন বন্ধুত্ব।প্রায় কোন কথাতেই আমাদের মধ্যে কোন দ্বিমত হয়না।কথা হচ্ছিল সাহস নিয়ে।মুসা ইব্রাহীম কিংবা নিশাত মজুমদার অনেক সাহসী বলেইনা তারা এভারেষ্ট বিজয় করেছে।পৃথিবীর সব থেকে সাহসীদের কথা বলতে গিয়ে আমি বললাম বেয়ার গ্রিলসের কথা।ওরা দুজনও মেনে নিল যে বেয়ার গ্রিলস অনেক সাহসী।
হঠাৎ ওয়ালিউর বললো জানিস বিসিসিতে আমার হাউসের জুনিয়রেরা সব থেকে সাহসী ক্যাডেট।ওয়ালিউরের কথা শেষ হতে না হতেই দেখি অপার জীবনে প্রথম বারের মত ওর মতের সাথে এক মত হতে পারলো না।সে বললো নাহ মোটেই তোর হাউজের জুনিয়র বেশি সাহসী নয় বরং আমার হাউসের জুনিয়রেরা বেশি সাহসী।ওরা দুজন যখন এটা নিয়ে কথা আর থামাতেই চাইছেনা তখন দেখি এদিকেই আসছে শের ই বাংলা হাউসের জুনিয়র মোষ্ট ক্যাডেট জাহিদ আর সোহরাওয়ার্দী হাউসের জুনিয়র মোষ্ট ক্যাডেট মুহতাসিম।
অপার আর ওয়ালিউরকে থামিয়ে বললাম তোরা থামবি একটু।কথা বাড়িয়ে লাভ কি?প্রমান হয়ে যাক কার হাউসের জুনিয়র বেশি সাহসী।কিভাবে প্রমান হবে ওরা জানতে চাইলে বললাম ওই দেখ দুইটা আসতেছে।কাছে এসে ওরা যখন সালাম দিল তখন আমি বললাম ওয়ালিউর তুই তোর জুনিয়র যে সাহসী তা প্রমান করে দেখা।ওয়ালিউর তার হাউজের জুনিয়র ক্যাডেট জাহিদকে বললো এই যাও এখনি ওই নারকেল গাছটাতে উঠে দেখাও।ক্যাডেট জাহিদ সাথে সাথে গাছে উঠে দেখাতেই ওয়ালিউরের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সে অপারকে বললো দেখলি আমার জুনিয়র কত সাহসী।
এবার অপারকে বললাম তুই তোর জুনিয়র যে সাহসী সেটা প্রমান করে দেখা।অপার তখন তার হাউজের জুনিয়রকে নিদের্শ দিলো যা ওই নারকেল গাছ থেকে একটা ডাব পেড়ে নিয়ে আয়।সাথে সাথে তার হাউসের জুনিয়র মুহতাসিম একটা ডাব পেড়ে আনলো।সেও ওয়ালিউরের মতই বললো দেখলি আমার হাউসের জুনিয়র কত সাহসী।আমি দুজনকেই থামিয়ে বললাম ঠিক আছে এ নিয়ে কথা বাড়িয়ে আর লাভ নেই।তোদের দুই হাউজের জুনিয়রই বেশ সাহসী।আমরা জুনিয়র দুইটাকে ছেড়ে দিলাম।
এবার ওয়ালিউর বললো তা দোস্ত তুইতো তোর হাউসের কথা কিছু বললি না।নিশ্চই তোর হাউসের জুনিয়রেরা খুব ভীতু।আমি বললাম না রে।তারা ভীতু হবে কেন?তারা মহা সাহসী।এবার অপার আর ওয়ালিউর প্রমান চাইলো।মোক্ষম সুযোগ এসে গেল সাথে সাথে।আমি শরিয়তুল্লাহ হাউসের।তাকিয়ে দেখি বেশ জোর কদমে এগিয়ে আসছে ক্যাডেট ইলহাম।সে আমার হাউজের।ইলহামকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি।ও যে আমার সম্মান ডুবাবে না সেটা আমি বিশ্বাস করি।ওকে দিয়েই প্রমান করবো যে আমার হাউজের জুনিয়র বেশি সাহসী।
কাছে এসে সালাম দিতেই ওকে থামালাম। বললাম ইলহাম কথা হলো আমরা বাজি ধরেছি কার হাউজের জুনিয়রেরা বেশি সাহসী।সোহরাওয়ার্দী আর শের ই বাংলা হাউজের জুনিয়রদের সাহসের প্রমান নিয়েছি।এবার আমাদের হাউজের পালা।তুমি কি সাহসের প্রমান দেখাতে প্রস্তুত?ইলহাম সাথে সাথে বললো জ্বি ভাই প্রস্তুত।আমি বললাম যাও ওই নারকেল গাছ থেকে একটা ডাব পেড়ে এনে দাও।আমার কথা শুনে অপার আর ওয়ালিউর বললো আগের দুজনতো ওই একই কাজ করছে তাতে কিভাবে প্রমান হবে যে তোর হাউজের জুনিয়র বেশি সাহসী?
ওদের প্রশ্নের উত্তর আমাকে দিতে হলো না।ওরা এমনিতেই পেয়ে গেল।আমার হাউজের জুনিয়র ইলহাম একটুও নড়েনি। আমি আবার বললাম যাও ডাব পেড়ে নিয়ে আসো।এবার ইলহাম বললো ভাই ডাব পাড়তে পারবো না।দরকার হয় আপনি নিজে পেড়ে খান বলে সে হনহন করে হাটা শুরু করলো।আমি তখন বিজয়ীর হাসি হেসে বললাম দেখলি আমার হাউজের জুনিয়রেরা কত বেশি সাহসী? তারা এমনকি সিনিয়রের মুখের উপরও কথা বলার মত সাহস রাখে।এবার সত্যি সত্যি অপার আর ওয়ালিউর মেনে নিল যে শরিয়তুল্লাহ হাউসের জুনিয়রেরাই বেশি সাহসী।
কিন্তু অপার বা ওয়ালিউর জানেনা যে ওদের অগচরেই আমি ইলহামকে চোখের ইশারায় সব বুঝিয়ে দিয়েছিলাম কি করতে হবে।অপার এবারও আইসিসিএলএলএম এ ফাস্ট হয়েছে।ওকে হারানোর এই একটা পথই আমার জানা ছিল।যদিও পথটা একটু বাকা।ইলহাম ঠিকঠাক অভিনয়টা করতে না পারলে বিসিসিতে শরিয়তুল্লাহ হাউজের জুনিয়রদেরকে সব থেকে সাহসী প্রমান করা হত কিনা সন্দেহ।
৫ জানুয়ারি ২০১৬