ডাইনিংএ দুটো চেয়ার ফাঁকা ছিল।খোঁজ নিয়ে দেখা গেল ও দুটোতে ক্লাস সেভেনের জনি আর বনির বসার কথা।ডিনার টাইম হয়ে যাওয়ার পরও ওরা আসেনি কেন?দুজনইকি মেডিকেলে ভর্তি?ক্যাডেট তাইমুরকে পাঠানো হলো হাউসে খোঁজ নিতে।সে রকেটের গতিতে ছুটে গিয়ে আবার সাথে সাথে ফিরে এসে জানালো হাউসের কোথাও ওরা নেই।কোন বাথরুমে নেই,মসজিদে নেই,কোথাও নেই।দ্রুত ডিনার শেষ হলো।সবাই বুঝতে পারলো ওরা কলেজ থেকে পালিয়েছে।
অ্যাডজুটেন্ট স্যারের নির্দেশে সাথে সাথে শহরে তল্লাশী চালানো হলো।বাস স্ট্যান্ডে ফোন করে জানানো হলো রেল স্টেশানেও জানিয়ে দেওয়া হলো দুজন ক্যাডেট কোন বাসে বা ট্রেনে উঠতে চাইলে তাদেরকে যেন উঠতে দেওয়া না হয়। ক্যাডেট মানেই যে খাকি পোশাকে থাকতে হবে তা নয়।বিশেষত খাকি দেখলে অনেকেই চিনে ফেলে তাই লুকোচুরির কিছু থাকলে সাধারণ কিছু পরতে হয়।জনি আর বনিও দুটো টিশার্ট পরে বেরিয়েছিল।তবে পোষাক বদলালেও চালচলন,চুলের বাটি ছাটতো আর বদলে ফেলা যায়না।ফলে বাসে ওঠার আগেই ওদেরকে ধরে নিয়ে আসা হলো।
অ্যাডজুটেন্ট স্যারের সামনে দুজন দাড়িয়ে আছে।তারা মনে মনে খুশি যে এই অপরাধে হলেও তাদেরকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হবে যেটা তারা মনে মনে চাচ্ছিল।কিন্তু তাদের সে আশা পুরণ হলোনা।অ্যাডজুটেন্ট স্যার জানতে চাইলেন তোমরা কলেজ থেকে পালিয়েছিলে কেন?জনি বললো স্যার কলেজের খাবার খুবই জঘন্য খাওয়াই যায়না।কখনো নরম ভ্যাড়ভেড়ে আবার কখনো লোহার মত শক্ত। অ্যাডজুটেন্ট স্যার কিছু একটা ভাবলেন তার পর আবার প্রশ্ন করলেন,আচ্ছা বুঝলাম খাবার খুব জঘন্য কিন্তু তোমরা কলেজের গেটের তালা ভাংলে কি করে? অ্যাডজুটেন্ট স্যারের প্রশ্ন শুনে বনি উত্তর দিল।স্যার সকালের নাস্তার রুটিটা এতো শক্ত ছিল যে ওটা দিয়ে বাড়ি দিতেই গেটের তালা ভেঙ্গে গেল।
ওদের কথা শুনে অ্যাডজুটেন্ট স্যার থ হয়ে গেলেন।বাইরে কলেজ বেয়ারা দাড়িয়ে ছিল।তাকে ডাক দিতেই সে ভিতরে গিয়ে দাড়ালো।বাচ্চা দুটোর জন্য তার খুব মায়া হলো।ওদেরকে না আবার সত্যি সত্যিই বের করে দেওয়া হয় তাই সে বললো স্যার সত্যি সত্যিই রুটি অনেক শক্ত হয়।এই দেখুন আমার একটা দাত ভেঙ্গে গেছে রুটি ছিড়তে গিয়ে।সে মুখ হা করে দেখাল তার একটা দাত ভাঙ্গা।(যদিও ক্যাডেটদের খাবার তার ভাগ্যে জোটেনা কখনো)
অ্যাডজুটেন্ট স্যার আর কথা না বাড়িয়ে জনি আর বনিকে বললেন এবারের মত ছেড়ে দিলাম।ভবিষ্যতে কলেজ পালাতে চেষ্টা করলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে বলে দিলাম।ক্যাডেটের কাছে কলেজ আউটের চেয়ে কঠিন শাস্তি আর কিছু হতে পারেনা।সেটা দিলেও জনি বনি মাথা পেতে নিত।কিন্তু অ্যাডজুটেন্ট স্যার যেভাবে বললেন তাতে নিশ্চই রেড বুকে আরো ভয়ংকর কিছুর কথা লেখা আছে।পরবর্তীতে আর কোন দিন তারা ভুলেও কলেজ পালানোর কথা মাথায় আনলো না। রুটি যত শক্তই হোকনা কেন তা তাদের হজম করতেই হলো।
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭