সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে একজন মা পরিপুর্নতা লাভ করেন। তার জীবনের সব থেকে বড় পাওয়া হলো নিজ গর্ভে জন্মনেওয়া সন্তান। সন্তান যেমনই হোক মায়ের কাছে সে সাতরাজার ধন।সন্তানকে লালনপালন করতে গিয়ে,মানুষ করতে গিয়ে মায়েরা তাদের সুখ,স্বপ্ন সবটাই বিসর্জন দিয়ে থাকেন। সন্তানের জন্য মায়ের যে অবদান সেটা কোন কিছুর বিনিময়ে শোধ করা সম্ভব নয়। এ কারনেই ইসলামে মায়ের মর্যাদা অনেক বেশি।কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে সন্তানকে মা কষ্ট করে লালনপালন করেছেন বড় হয়ে সেই সন্তান মাকে সরিয়ে দিচ্ছে। বলা হয়ে থাকে একজন মা একা দশটি সন্তান লালন পালন করতে পারলেও অনেক সময় দশটি সন্তান একজন মা কে দেখেশুনে রাখতে পারে না।
আমরা সবাই প্রতিটি মায়ের অবদানের কথা কোন ভাবেই অস্বীকার করতে পারি না।বিশেষ করে গর্ভকালিন সময়ে এবং সন্তান প্রসবের পর অন্তত সেই সন্তানের বয়স দশ বছর না হওয়া অব্দি মায়ের কষ্টের সীমা নেই। যদিও দেখতে গেলে মা তার সন্তানের জন্য জীবনের শেষ দিন অব্দি চিন্তা করেন,ঘুম নষ্ট করেন।একটি সন্তান লালনপালন করতে মায়ের অনেক কষ্ট হয় কিন্তু একটির বদলে দুটি হলেতো কথাই নেই বিশেষ করে জমজ সন্তানের মায়েদের একই সাথে অনেক আনন্দ আবার অনেক কষ্ট।অম্ল মধুর সেই স্মৃতি মাকে ক্ষণে ক্ষণে আনন্দ দেয়। স্বভাবতই একটির বদলে দুটি সন্তানকে এক সাথে গর্ভে ধারণ করার ফলে গর্ভকালিন সময়েও মাকে অতিরিক্ত ভার বহন করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ঝুকি বহন করতে হয়।এর পর সন্তান জন্ম নেওয়ার পর দায়িত্ব দ্বিগুন হয়। এক সন্তানকে খাওয়াতে গেলে অন্য সন্তানকে অপেক্ষায় থাকতে হয়, কখনো কখনো কান্নাও শুরু করে দেয়। আবার দেখা যাচ্ছে এক সন্তানকে খাইয়ে মা দু মিনিটের জন্য কোন কাজে গেলেন এবং ফিরে এসে যে সন্তানকে খাইয়েছিলেন তাকেই আবার খাওয়ালেন এমন ভুল নিয়মিত হয়।তাসিন তাজিম নামে দুই জমজ সন্তানের মায়ের সাথে আলোচনা থেকে জানা গেলো জমজদের লালনপালন করতে গিয়ে অনেক কষ্টের এবং আনন্দের ঘটনা ঘটে।যেমন একবার তাজিমের অসুখ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। একদিন তাজিম হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে উঠে একটু দূরে খেলছিল আর তাসিন তখন বিছানায় বসে ছিলো। নার্স এসে কিছু না বলেই তাসিনকে ইনজেকশন দিতে শুরু করলো!! যখন সিরিঞ্জ তাসিনের হাতে দিতে যাবেন তখন তিনি বললেন নার্স কি করছেন! ওতো সুস্থ্য ওকে কেন ইনজেকশন দিবেন। নার্স আসলে জানতেন না যে ওরা জমজ। পরে তাজিম আসলে তাকে ইনজেকশন দেওয়া হলো।মজার ঘটনাই বেশি ঘটে। তাসিন তাজিম দুজনই অভিনয় করে,মডেলিং করে। একবার শুটিং সেটে খেলতে খেলতে তাসিনের শরীরে ময়লা লেগে গেলো। মেকাপ করতে সময় লাগবে দেখে তাসিনের বদলে তাজিমকে দিয়ে বাকি শুটিং করিয়ে নেওয়া হলো।
তবে অধিকাংশ সময় জমজদের মধ্যে ভীষণ ভাব থাকলেও মাঝে মাঝে খুব ঝগড়া,মারামারির ঘটনাও ঘটে। জমজ সন্তানের মায়েদের সে ক্ষেত্রে অনেক যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়। একই সময়ে একই বয়সী দুটি সন্তানকে সমান ভাবে লালনপালন করা কঠিন হয়ে পড়ে।গোলস করানো,খাওয়ানো,পোষাক পরানো এবং স্কুলে আনা নেওয়াতে খুবই কষ্ট হয়।এই সময়ে বাবা বা পরিবারের অন্য কারো সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।সন্তান গর্ভে আসার পর প্রাথমিক ভাবে জানা যায় না যে এক সন্তান জন্ম নিবে নাকি একাধিক। কোন কোন ক্ষেত্রে জমজ নয় বরং ট্রিপলেক্স বা তিনজন সন্তানও জন্ম নিয়ে থাকে। তবে সেটা খুব কম সংখ্যক।বর্তমান সময়ে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কারনে বেশ আগে থেকেই জানা যায় কয়জন সন্তান জন্ম নিবে বা ছেলে না মেয়ে হবে। সে ক্ষেত্রে যখন জমজ সন্তান হবে জানা যায় তখন মায়ের প্রতি আরও বেশি যত্নশীল হতে হবে।এক সন্তান হলে মাকে যতটুকু পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হতো জমজ সন্তান হলে তার চেয়ে বেশি গ্রহণ করতে হবে যেন দুজনের চাহিদা ঠিকভাবে পুরণ হয়।তবে আশার কথা হচ্ছে শতকরা নব্বই ভাগ জমজ সন্তান খুব মেধাবী হয়ে থাকে।তারা পরস্পর পরস্পরকে অনুসরণ,অনুকরণ করে এবং তাদের পছন্দ-অপছন্দ সব কিছুতেই মিল থাকে।যেমন তাজিম ছবি আকঁতে বসলে তাসিন ওকে আইডিয়া দেয়।একে অন্যকে পড়া করতে সাহায্য করে,পোষাক পরতে সাহায্য করে।জমজ সন্তান একটু বড় হলে তখন মায়ের কষ্ট অনেকটাই দূর হয়।তবে স্কুল ভর্তি থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রতিযোগিতায় মনখারাপের ঘটনাও ঘটে যা মাকে সামলাতে হয় খুব কষ্ট করে।একজন চান্স পেলে অন্যজনের মন খারাপ হয় তাই জমজরা চেষ্টা করে দুজনই একই সাথে একই স্কুলে পড়তে,দুজনেই চ্যাম্পিয়ন হতে নয়তো একজনও নয়।তবে হাজার কষ্ট হলেও জমজ সন্তানের মায়েরা তাদের সন্তানদের নিয়ে খুবই সুখী।জমজরা যেন দুই নয়নের দুটি মণি।
31 মে 2020