Thursday, November 21, 2024
Homeনিবন্ধউন্নত রাষ্ট্র গড়তে চাই ইতিবাচক পরিবর্তন

উন্নত রাষ্ট্র গড়তে চাই ইতিবাচক পরিবর্তন

বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশে রাজনীতি গণতন্ত্রের অস্ত্র হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু রাজনীতি এখন অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। নানাক্ষেত্রে দলীয়করণ, একে অন্যের দোষারোপ করা এখন নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। দুই সমান্তরাল রেখার মতন চলে রাজনৈতিক প্রধান দুই দল, অথচ এদের একই সরলরেখায় চলার কথা ছিলো। ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ও তার নেতাকর্মীরা মনে করে ক্ষমতা যাদের হাতে সেই আওয়ামীলীগের সাথে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে ক্ষমতাশীনরা মনে করে বিএনপিকে জনগণ ত্যাগ করেছে। এই গ্যাপ পুরণের দুই দলের কোনো ইচ্ছা বা প্রচেষ্টা নেই।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় হয়েছিল একটি স্বপ্ন নিয়ে। যে স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তে সমুজ্জ্বল সম্ভাবনাময় একটি রাষ্ট্র । স্বাধীনতার ঊনপঞ্চাশ বছরে ক্ষমতার পালাবদলে এদেশের সফলতা ও ব্যর্থতা দুটোই বেশ আলোচিত। রাষ্ট্রের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত রাজনীতি।রাষ্ট্রের ছোট থেকে বড় সব বিষয়ের সাথে এটি জড়িত। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সিংহভাগ তরুণ এখন রাজনীতি বিমুখ।তরুণ সমাজ দেশের মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশ । যারা দেশ, সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি নিয়ে নতুন চিন্তা করে, সমাজকে, সুখী সমৃদ্ধ বৈষম্যহীন করে গড়ে তুলতে চায়। যেখানে দূর্নীতি, অপসংস্কৃতির বদলে সৎ এবং ঝঞ্ঝামুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

তরুণ প্রজন্মই পারে আধুনিক চিন্তা, মনন শক্তি দিয়ে কাজের প্রসার ঘটানো, বেকারত্ব ও গোঁড়ামি মুক্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠন। আর তাই প্রয়োজন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা। উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এক দুরন্ত গতির সময় পার করছে, সেই সময়কে আরো এগিয়ে নিতে সবক্ষেত্রে সবধরণের মানুষের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ খুবই জরুরি, সেখানে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে তরুণরাই। বর্তমান বাঙালি তরুণ প্রজন্মের সামনে দেশের কিছু লজ্জাজনক সামাজিক সমস্যা, সাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য, বেকারত্ব যা একবিংশ শতাব্দীর সভ্যতা, আধুনিকতার সম্পূর্ণ বিপরীতে।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় যে ভিতের ওপর হয়েছিলো, যেই সংস্কৃতির চর্চাকে প্রতিষ্ঠিত করতে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো সেই চর্চা থেকে যোজন যোজন দূরে গিয়ে ব্যাক্তি এবং গোষ্ঠী স্বার্থ বড় হয়ে ওঠায় রাষ্ট্রের উন্নয়নের গতি শ্লথ হয়েছে, সেই সাথে বারবার থমকে গিয়েছে গণতান্ত্রিক চর্চার পথ।  তরুণরা সৃষ্টিশীল, দেশপ্রেমিক। এই তরুণরাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে তুলেছিলো গণজাগরণ মঞ্চ, এছাড়াও সামাজিক, অর্থনৈতিক, গবেষণা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেখানেই তরুণরা নেতৃত্ব দিয়েছে সেসব কাজে সফলতার হার বেড়েছে।

বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে দ্বিদলীয় বৃত্ত দেখা যায়, যাদের রাজনৈতিক অদুর্দর্শিতার কারণে কখনো ভোটারবিহীন নির্বাচন, কখনো সামরিক শাসকদের ক্ষমতাদখল, কখনো পেছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পায়তারা, এসব রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নও থমকে গিয়েছে বারবার, তবুও শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ যেটুকু এগিয়েছে সেটুকুতে তরুণদেরই একটা বড় অবদান আছে।

তরুণদের সরাসরি রাজনীতিবিমুখতাই সকলের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের চর্চা ব্যহত হয়ে, অগণতান্ত্রিক গোষ্ঠী রাষ্ট্রক্ষমতা দখল নিতে পারার অন্যতম কারণ । এক পক্ষ বলছে দেশে কোন রাজনৈতিক সংকট নেই অন্যদল বলছে রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই দুইয়ের মাঝে যে সাধারণ জনগণ আছে তারা কি মনে করছে তা কেউ কখনো ভেবে দেখছে না। আমজনতা বলে কথা।এই মুহূর্তে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক যে সংকট বিরাজ করছে তা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হতে পারে রাজনীতিতে তরুণদের আরো অংশহগ্রহণ বাড়িয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় তরুণদের অংশ নেবার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অসাম্প্রদায়িক বাঙালির মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন হয়েছিল মূর্খতা ও রাজনৈতিক অসচেতনতা থেকে। তরুণ সমাজ রাজনীতির মোড় ঘুরিয়েছে সবসময়। বিপ্লব এসেছে তাদের হাত ধরেই। কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়টিকে ফ্রেমে ধারণ করলে সেটা খানিকটা আলাদাই মনে হয়। কখনো কখনো দ্বিধায় পড়ে যেতে হয়। মনে হয় ক্ষমতাশীল ও দায়িত্বশীল পদে অবস্থানকারী লোকদের ব্যবহারে পুরনো সামন্তীয় দম্ভ ফুটে উঠছে।

বারবার রাজনীতির মাঠে বর্ষিয়ানদের পালাবদল উন্নয়নের ধারায় কতটা গতি আনতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন করার কিছু নেই।বিগত বছর গুলোতে তাদের কার্যক্রম সবাই দেখেছে। সুতরাং তরুণদের কাঁধে সেই একই দায়িত্ব দিতে পারলে তারা তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রের কতটা উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক ধারা আরো সমু্ন্নত করতে পারবে সেটা দেখার সুযোগ তৈরি করা উচিৎ।

রাজনীতি শব্দটা আজকাল অনেকের জন্য একটা লাভজনক ব্যবসার নাম হয়ে উঠেছে। অথচ বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন সেই  স্বপ্নে কোথা্ও এরকম হওয়ার কথা ছিল না। মানুষের অধিকার, ন্যূনতম চাহিদা মেটাবার ব্যবস্থা, সামাজিক ন্যায়, মানবিক মর্যাদা এসবের জন্য ব্রিটিশ শাসন থেকে পাকিস্তানের শৃঙ্খল ভেঙে বাংলাদেশের জন্ম। কিন্তু সেখানেও কেবল খাবার, বাসস্থান, স্বাস্থ্য আর শিক্ষার সংস্থান করতে মানুষের নাভিশ্বাস যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে মানুষের টাকা অকল্পনীয় উন্নয়ন ব্যয় ও দুর্নীতি, ব্যঙ্ক, শেয়ার কেলেঙ্কারি নানাভাবে লোপাট অব্যাহত আছে।

তরুণ প্রজন্মের অংশীদার হিসেবে ঐতিহাসিক পরাম্পরায় এ দেশের তরুণরা যা করে এসেছে তা অব্যাহত রাখা; এই রোগ, স্বপ্নের বাংলাদেশ থেকে যে বিচ্যুতি তা চিন্তায়, কাজে, ঘরে, আড্ডা-অবসরে, রাজপথে প্রতিরোধ করা; নয়ত আমাদেরই হয়ত পচে যাওয়া একটা দেশ ও সমাজের ভার বইতে হবে।

টিএসসিতে কিংবা চারুকলায় গেলে দেখা যায় তরুণ প্রজন্মের ব্যাগে, ক্যাপে, নোটবুকে চে গুয়েভারা, ফিদেল ক্যাস্ট্রো সহ অন্যান্য বিপ্লবী নেতাদের ছবি বা ট্যাটু। অথচ সেই তরুণদের মধ্যে সরাসরি রাজনীতির প্রতি তেমন কোন আগ্রহ দেখতে পাওয়া যায় না।ফলশ্রুতিতে স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষে ছেয়ে যাচ্ছে ছাত্র রাজনীতির বড় একটা অংশ।শুধু মাত্র একা শেখ হাসিনার পক্ষে সেসব সামলে ওঠা সম্ভব নয়।

তরুণদের সুস্থ রাজনীতির চর্চার জন্যে সবচেয়ে বেশি জরুরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবাধ রাজনৈতিক চর্চা, নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক তথা গণতান্ত্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রীতি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও সেটা চালু হয়েছে কিছুদিন হলো তবে তা মানুষের মধ্যে আশা জাগাতে পারেনি। সেখানেও ক্ষমতার প্রভাব দেখানোর রীতি চোখে পড়ছে। 

ভোটের রাজনীতিতে যেখানে তরুণরা একটা বড় প্রভাব রাখতে পারে, সেখানে সরকার পরিচালনায় তরুণদের অংশগ্রহন একেবারেই হতাশাজনক। নির্বাচন পদ্ধতি,সরকার পদ্ধতিসহ রাষ্ট্রের বিভীন্ন বিভাগ নিয়ে তরুণদের মতামত ও অংশগ্রহণেরর  ভিত্তিতে সরকার পরিচালিত হলে সে সরকার আরো গতিশীল এবং কার্যকরি হয়ে উঠতো। উন্নত রাষ্ট্র গড়তে হলে এই সব ইতিবাচক পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরী।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকেও সংশোধন করতে হবে এবং আমাদেরকে যুক্তিযুক্ত কথা বলতে দিতে হবে যেন তার আলোকে সরকার সময়োপযোগি সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে।যেটা হয়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সত্যিকারের সোনার বাংলা।যেখানে কোন খাদ থাকবে না।

Most Popular