বাসে করে বনানী থেকে উত্তরা ফিরছি।আমার সাথে আছে প্রিন্স হারুন নামে আমার বেশ পরিচিত এক ভদ্রলোক।ভদ্রলোকের সাথে সারা জীবনে মাত্র একবারই আমার দেখা হয়েছে এবং সেটাও আজকেই।তবে আগে থেকেই ফেসবুকে যোগাযোগ ছিল।বাসের ভাড়া আমি দেব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।হারুন সাহেব বললেন আজকে না হয় ভাড়াটা আমিই দেই। বড় ভাই হিসেবে তার কথাতো আমাকে রাখতেই হবে।আমি বললাম ঠিক আছে দিন।
বাসের কন্টাক্টর সামনে থেকে এক এক করে ভাড়া তুলতে তুলতে আমাদের কাছে চলে আসলো।এসেই তার স্বভাব মত ভাড়া চাইলো।হারুন সাহেব বললেন আমার কাছেতো খুচরা নেই ভাড়া দিতে সমস্যা হবে।কনটাক্টর বললেন বাংলাদেশেতো এক হাজার টাকার চেয়ে বড় নোট নেই।দিন আমি খুচরা করে দিচ্ছি।হারুন সাহেব বললেন ভাই আপনার কাছেতো কোন টাকাই নেই তাহলে খুচরা করবেন কি করে?কনটাক্টর ভড়কে গেল।
সে অন্য সব যাত্রী থেকে এতোক্ষণ ভাড়া তুলেছে তাহলে তার কাছে টাকা থাকবেনা কেন?তিনি বললেন আপনি টাকাটা দেন আমার কাছে যথেষ্ট খুচরা আছে।এবার হারুন সাহেব বললেন আপনি দেখুন আপনার হাতে কোন টাকাই নেই। সবতো সাদা কাগজ ধরে আছেন।কনটাক্টর সাথে সাথে হাতের দিকে তাকালো এবং তার প্রায় হার্টফেল করার অবস্থা।সত্যি সত্যি সে দেখলো তার হাতে একটাও টাকা নেই তার বদলে সব সাদা কাগজ।সে বললো তাহলে আমি এতোক্ষণ যে ভাড়া উঠালাম সেই টাকা গেল কোথায়?
আমিও দেখলাম সত্যি সত্যিই কনটাক্টরের হাতে কোন টাকা নেই।সেখানে এক গোছা সাদা কাগজ আছে।বাসের অন্য সব যাত্রীরাও তাই দেখলো।বিশেষ করে যারা ওনার কাছে কিছু টাকা ফেরত পাবে তারাতো তাকে জোর করতে শুরু করলো বাকি টাকা ফেরত দিতে।বাসের হেলপার আর ড্রাইভার ওনাকে বকাঝকা করলো।আর বললো কোন ফাকে কোন এক পকেটমার হাত থেকে টাকা লোপাট করে নিয়ে সেখানে সাদা কাগজ ধরিয়ে দিয়েছে।
আমি তাকিয়ে দেখি হারুন সাহেব মিটমিট করে হাসছে।এবার তিনি মুখ খুললেন। বললেন আপনি এতো টেনশান করছেন কেন?আপনার হাতেতো অনেক খুচরা টাকা আছে আমাকে এক হাজার টাকার নোটটা খুচরা করে ভাড়াটা নিলেইতো পারেন। দেরি করছেন কেন?কনটাকটর মনে করলো তার সাথে হারুন সাহেব টিটকারি মারছেন।তিনি ক্ষেপে উঠতে গিয়ে আবার হাতের দিকে তাকিয়ে ভীষণ চমকে উঠলেন।সেখানে সত্যি সত্যিই অনেক গুলো টাকা আছে।কিন্তু আগের সেই সাদা কাগজের কোন চিহ্নও নেই।আমরা অন্য সব যাত্রীরাও দেখলাম সেখানে কোন সাদাকাগজ নেই বরং টাকা আছে।কনটাক্টর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
হারুন সাহেব বললেন আমার নাম প্রিন্স হারুন।তখন সবাই চিনতে পারলো যে তিনিই সেই বিখ্যাত যাদুকর প্রিন্স হারুন।তার যাদুতে মুগ্ধ হয়ে কনটাক্টর ঘোষণা করলেন আপনাদের দুজনের ভাড়া দিতেই হবেনা।উপস্থিত সব যাত্রীরা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকলো প্রিন্স হারুনের দিকে।ঘাড় ঘুরিয়ে আমিও তাকিয়ে রইলাম লোকটার দিকে।যার সাথে ঘুরছি কথা বলছি এবং যে আমার ভাড়া দিয়ে দিচ্ছে তিনিই যে সেই ম্যাজিশিয়ান প্রিন্স হারুন তা কোন দিন বুঝতেই পারিনি।