Sunday, October 1, 2023
Home Blog

কেউ কেউ কথা রাখে

0
ঈদের পর দুটো বই পড়েছি। দুটোই একই লেখকের লেখা। তৃতীয় আরেকটি বই পড়তে শুরু করেছি মাত্র । সেই বইটির নাম “বিএনপির সময় অসময়” লেখক মহিউদ্দিন আহমদ। ঈদের পরের সপ্তাহে যে দুটি বই পড়েছি তার মধ্যে প্রথম বইটা অবশ্য পড়তে শুরু করেছিলাম ঈদের ঠিক আগে আগে। তবে তখন পুরোটা পড়ে শেষ করতে পারিনি। পড়ার ক্ষেত্রে আমি খুবই ধীরগতি সম্পন্ন।প্রতিটি শব্দ মনে মনে হলেও উচ্চারণ না করে আমি পড়তে পারি না। ফলে একটি বই শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। আবার অনেক সময় একই সময়ে একাধিক বইও পড়তে শুরু করি। একটা বিশ পৃষ্ঠা পড়লাম তো আরেকটার দশ পৃষ্ঠা পড়লাম এমনও হয়। কারো কারো হয়তো মনে আছে আমি ঈদের আগে একদিন স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম “এই মুহূর্তে আমি যে বইটি পড়ছি তার নাম কেউ বলতে পারলে তাকে সেই বইটি উপহার দেবো। এমনকি যতজন বলতে পারবে সবাইকে উপহার দেবো”। আমি সত্যি সত্যিই উপহার দিতে বদ্ধপরিকর ছিলাম। আমি খুবই খুশি হয়েছি যে আমার সেই পোস্টে অনেক অনেক বন্ধু মন্তব্য করে বইয়ের নাম বলেছে। তবে কেউ সঠিক নামটি অনুমান করতে পারেনি। আসলে অনুমান করা সম্ভবও না। এটি কাকতালীয় ভাবে হয়তো মিলে যেতে পারে। লক্ষ কোটি বইয়ের মধ্যে আমি কোনটা পড়ছি সেটা কারো পক্ষে অনুমান করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে যখন বই সম্পর্কে কোনো রকম হিন্টস দেওয়া হয়নি। মজার বিষয় হলো সঠিক নামটি উদ্ধার করতে কেউ কেউ আমার ইনবক্সে প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেছে। সেগুলোর মাধ্যমে উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করেছে। যেমন এক বন্ধু জানতে চাইলেন আমার প্রিয় লেখক কে, প্রিয় বই কী? এরকম নানা বিষয়ে। তো আমি যে বইটি পড়ছিলাম সেটির সাথে আমার প্রিয় লেখকের কোনো সম্পর্ক নেই। পরে বাধ্যহয়ে দু একটা হিন্টস দিয়েছিলাম। যেমন বইটির লেখক জীবিত এবং আমার ফেসবুক বন্ধু তালিকায় থাকা মানুষ।

সেই স্ট্যাটাসের নিচে মন্তব্যের ঘরে যারা মন্তব্য করেছিলেন তাদের বলা অধিকাংশ বই আমি অনেক আগেই পড়েছি আর দু একটা বই এখনো পড়া হয়নি। তবে কয়েকজন বন্ধু খুব কাছাকাছি উত্তর দিয়েছিলেন। মানে আমি যে লেখকের বই পড়ছিলাম সেই লেখকেরই একই ঘরানার বইয়ের নাম বলেছিলেন। আরেকটু হলেই মিলে যেতে পারতো। আজ ভাবলাম সে বিষয়ে সবাইকে জানিয়ে দিই। আমি যখন ওই স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম তখন পড়ছিলাম ‍দুই বাংলার জনপ্রিয়তম থ্রিলার লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের লেখা “ কেউ কেউ কথা রাখে” বইটি। তাঁর লেখা অন্য যে বইটি দুদিন আগেই পড়েছি সেটির নাম “জাল”। প্রথমে জাল বইটি পড়ে শেষ করেছি তারপর ”কেউ কেউ কথা রাখে” বইটি ধরেছি। আর তখনই ওই স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম।

জাল নামক বইটিতে লেখক একজন তরুণ জনপ্রিয় ব্যারিস্টার আর একজন অবসরপ্রাপ্ত গোয়েন্দাকে উপজীব্য করে দারুন এক গল্প ফেঁদেছেন। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের শব্দচয়ন,সহজবোধ্য ভাষার ব্যবহার আর গল্পের ধারাবাহিকতা সমানভাবে রক্ষার যে দক্ষতা তিনি তাঁর বইগুলোতে দেখিয়েছেন সেটাই পাঠককে তাঁর গল্পের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। জাল নামক রহস্য উপন্যাসটিতে আমি দেখতে পেলাম তরুণ ব্যরিস্টার তাঁর এক ক্লায়েন্টের সাথে একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করতে যান।তারপর একটা খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। জনপ্রিয় ব্যরিস্টার নিজেই হয়ে ওঠেন আসামী বা সন্দেহভাজন। আবার যে খুন হয় তিনি তাঁর পরিচিতজন এবং খুন হয় ব্যরিস্টারের লাইসেন্স করা পিস্তলের গুলিতে। কিন্তু ব্যরিস্টার জানান তিনি খুন করেননি বরং খুন করেছে অন্য একজন। এ নিয়ে রহস্য দানাবাঁধতে থাকে। চমৎকার ভাবে গল্প এগোতে থাকে। ডিবির অবসরপ্রাপ্ত এক তুখোড় গোয়েন্দা এই ইনভেস্টিগেশনে তাকে সহায়তা করে। জাল গল্পটিতে সবচেয়ে বেমানান লেগেছে ওই গোয়েন্দাকে। তাকে যেভাবে দেখানো হয়েছে তাতে তাঁর বয়স অন্তত ৬৫ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে হলে ভালো হতো বলে আমার মনে হয়েছে। তাঁর কথা,আচরণ,হাবভাব কোনো ভাবেই তাঁর বয়সের সাথে মানানসই মনে হয়নি। সবচেয়ে মজার ছিল এই তুখোড় গোয়েন্দার মোবাইল চুরি যাওয়ার রহস্য উন্মোচন করতে না পারার বিষয়টি। লেখক ওই অংশটিকে চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্প শেষ করার আগেই অবশ্য সেই রহস্যের সমাধানও করে দিয়েছেন। পাঠক হিসেবে সমাধানটি আমার পছন্দ হয়েছে। তবে অন্য অনেক লেখক আছেন যারা ওরকম পরিস্থিতিতে ওটুকুর সমাধান না করে বরং দ্বিতীয় কিস্তি লেখার জন্য রেখে দিতেন এবং গোয়েন্দা চরিত্রটিকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন গল্প লিখতেন। জাল নামক থ্রিলার বইটি আমাকে মুগ্ধ করেছে।

লেখকের অন্য যে বইটি পড়লাম সেটির নাম “ কেউ কেউ কথা রাখে”। এই বইটি নিয়েই আমি সেই স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। বইয়ের নাম শুনলে প্রথমেই মনে পড়ে সুনীলের বিখ্যাত কবিতা “ কেউ কথা রাখেনি”। এই বইটি পড়ার শুরুতে চোখে পড়বে ভূমিকা। ভূমিকা পড়লেই পাঠকের মনের মধ্যে দারুণ আগ্রহ জন্মাবে বইটি পড়ার জন্য। জাল বইটির তুলনায় এই বইটি অনেক বেশি ভালো লেগেছে কারণ বইটিতে নানা ভাবে এদেশের রাজনৈতিক নানা প্রেক্ষাপট স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ের নানা বিষয় উঠে এসেছে বইটিতে। খুনের রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে দুজন পুলিশ অফিসার যারা কর্মসূত্রে সিনিয়র জুনিয়র হলেও তাদের মধ্যে ছিল দারুণ বন্ধুত্ব এবং তাদের মধ্যে রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা ছিল ভিন্নরকম। তাদের আলাপচারিতার মাধ্যমে বাকশাল,বঙ্গবন্ধু সহ সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি,অস্থিরতা সব ফুটে উঠেছে। “কেউ কেউ কথা রাখে” বইটির ভূমিকা পড়ে আমার মনে হয়েছে সত্য কোনো ঘটনাকে অবলম্বন করে লেখা একটি চমৎকার গল্প। পুরো গল্প পড়তে গিয়েও সেটা মনে হয়েছে। মনে হয়েছে লেখকের জীবনে ,লেখকের চোখের সামনে ঘটা কোনো দৃশ্যকে পুজি করে গল্প লিখেছেন তিনি। তবে সে ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ে গেছে পুরোনো সময়ে। নিজের সময়ের চেয়ে অনেক আগের সময়কে ব্যাকগ্রাউন্ড করে গল্প ফেঁদেছেন।

বইটিতে  দেখা যায় এক ব্যাংকারের বিয়ের কয়েক মাসের ব্যবধানে তার স্ত্রী নিজ বাসায় খুন হয়। তিনি অফিস থেকে বাসায় ফিরে স্ত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। রহস্য দানা বাঁধে। যার স্ত্রী খুন হয়েছে তিনি নিজেই সাসপেক্ট হিসেবে পুলিশের চোখে চোখে থাকেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তার সহযোগী রহস্য সমাধানকল্পে ইনভেস্টিগেশন জারি রাখেন। যে মেয়েটি খুন হয় তার গ্রুপ ছবি দেখতে গিয়ে একাধিক ছবিতে সন্দেহজনক একজনকে দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় সে বখাটে আর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পালিত একজন মানুষ। তদন্ত কাজে পুলিশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় মেয়েটির এক বান্ধবী যার সাথে আবার তদন্তসুত্রে বন্ধুত্ব তৈরি হয় পুলিশ অফিসারের সহযোগির। যার মুখ দিয়ে লেখক গল্পটি বলেছেন। এই উপন্যাস যে পুলিশ অফিসারের মুখ দিয়ে বলা হয়েছে গল্পেও তিনি একজন লেখক। আর এ কারণে গল্পটি আরও আকৃষ্ট করেছে আমাকে। উপন্যাসে সেই সময়ের যে চিত্রটি ফুটে উঠেছে তা আসলে আজও বদলায়নি। আজও যারা ক্ষমতাবান তারা তাদের ক্ষমতাবলে দুর্বলদের পিষে মারছে। উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই নানা প্রমান সহ সৎ পুলিশ অফিসার আসামীকে গ্রেফতার করলেও সে জামিন পেয়ে যায় এবং আরও বেপরোয়া আচরণ করতে থাকে।হুমকি দিতে থাকে। এমনকি এক পর্যায়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা খুন হয়ে যায়।

রহস্য রোমাঞ্চকর বর্ননার পাশাপাশি লেখক গল্পের পরতে পরতে প্রেম,বিরহ,মান অভিমান পর্ব দারুন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। পড়তে গিয়ে বার বার মনে হয়েছে যাকে পুলিশ প্রাইম সাসপেক্ট হিসেবে গ্রেফতার করেছে সেই রাজনৈতিক ক্ষমতার ছাঁয়ায় থাকা ছেলেটি হয়তো নির্দোষ। উল্টো খুন হওয়া মেয়েটির স্বামীই খুনী। কিন্তু যখন সেই মানুষটিকে প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে কবরস্থানে গিয়ে স্ত্রীর কবরের পাশে বসে কাঁদতে দেখা যায় তখন আর সেই সন্দেহ চলে না। গল্প নানা দিয়ে নানা সময়ে নানা ভাবে বাঁক নিয়েছে।রহস্যের সামাধান হয়েগেছে মনে হলেও আবার তা ভিন্ন ভাবে মোড় নিয়েছে। এভাবে একের পর এক বাঁক তৈরি করে লেখক তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। এই ঘটনার বহু বছর পর লেখক যখন অবসরে তখন তিনি পুরো ঘটনা নিয়ে একটি বই লিখতে শুরু করেন। যেহেতু খুনের মামলায় আসামীর কোনো সাজা হয়নি ফলে খুন হয়ে যাওয়া মেয়েটির কথা কেউ আর মনেও রাখবে না। নানা বিষয় ভেবেচিন্তে লেখক একটি বই লিখতে চেয়েছেন। এমনকি আবার নতুন করে কেসটি রিওপেন করা যায় কি না তা নিয়ে কথাও বলেছেন। লেখকের মনের মধ্যে পুরোনো দিনের প্রেম জমে উঠেছে। উকি দিয়েছে। কিন্তু সর্বপরি তিনি তার লেখাটাকে শেষ করতে চেয়েছেন। আর সেই সময়ে দেখা গেছে খুনের আসামী হিসেবে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল,যাকে আদালত জামিন দিয়ে দিয়েছে সেই লোকটির কোনো খবর কেউ জানে না। তাকে খুঁজে বের করতে পারলে অনেক কিছু জানা যেতো। অন্যদিকে খুন হওয়া মেয়েটির ব্যাংকার স্বামীর খোঁজও তেমন কেউ জানে না। রহস্য ক্রমাগত  ঘণীভূত হতে থাকে। কিন্তু গল্পের মাঝে আরেক গল্প থাকায় সেই গল্পের নায়ক তথা লেখক দমবার পাত্র নয়। নানা ভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ব্যাংকার ভদ্রলোক দূরবর্তী এক অঞ্চলে থাকে। সেখানকার এক ব্র্যাঞ্চে কাজ করছে।

যে মানুষটি স্ত্রীর শোকে কাতর। রোজ তার কবরের পাশে গিয়ে স্মৃতিচারণ করতেন সেই মানুষটি প্রিয় স্ত্রীর কথা ভুলে গিয়ে তবেকি নতুন সংসার পেতেছেন এবং অতীত ভুলে থাকতে দূরে গিয়ে নিজেকে সরিয়ে রাখছেন। লেখকের মনে আগ্রহ তৈরি হয়। আর সেই আগ্রহ থেকে তিনি যখন লোকটির কাছে পৌছান তখন দেখতে পান নির্জন এক গ্রামে নির্জন এক বাড়িতে তার বসবাস। আসেপাশে ঝোপ জঙ্গল। এবং পুরো বাড়িতে তিনি একা। দ্বিতীয়বার আর বিয়ে করেননি। তার কাছে খুনির বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায় তাকে আর খুঁজে লাভ নেই। তাকে আর পাওয়া যাবে না। তিনি নিজেও আর ওসব নিয়ে ভাবতে চান না। এমনকি তিনি চান না তার মৃত স্ত্রীর জীবনের গল্প বই আকারে প্রকাশ হোক। কিন্তু লেখক নাছোড়বান্দা। তিনি চেয়েছেন বইটি প্রকাশ করতে। প্রয়োজন হলে নাম চরিত্র বদলে হলেও প্রকাশ করবেন।

এভাবেই গল্প এগোতে থাকে এবং এক সময় লেখক বুঝতে পারেন কেন খুন হওয়া মেয়েটির স্বামী চান না বইটি প্রকাশ হোক। আর কেনইবা খুনীকে আর খুঁজে লাভ হবে না। শেষ অংশটি পুরো গল্পকে আরও রোমাঞ্চকর করে  তুলেছে। বইটি পাঠকমাত্রই আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে বলে মনে হয়েছে। আমার মত যারা খুব অল্পতেই খুশি হয়,মুগ্ধহওয়ার অশেষ ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে তাদের কাছে “ কেউ কেউ কথা রাখে” বইটি সুপাঠ্য হবে বলে আমি মনে করি। আর বইটি পড়লেই জানতে পারবেন কেন বইটির নাম “ কেউ কেউ কথা রাখে” রাখা হয়েছে।

১১ জুলাই ২০২৩

খাবার নিয়ে আমি কোনোদিন আপত্তি করিনি

0

খাবার নিয়ে আমি কোনোদিন আপত্তি করিনি। ছোট বলা থেকেই আমার যতদূর মনে পড়ে যখন যা জুটেছে তাই খেয়েছি এবং তৃপ্তির সাথে খেয়েছি। আর এখনতো বুঝতে শিখেছি তাই আমি শুধু হালাল হারাম বাছাই করা ছাড়া খেতে কেমন হলো না হলো কিংবা কি খেলাম না খেলাম, কতটুকু খেলাম তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। খাবার হালাল হলেই আমি খুশি। যতটুকু জুটেছে তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকি। এই কথাটিতে বিন্দুমাত্র বাড়িয়ে বলিনি আমি। আমিতো জানি আল্লাহ আমাকে কিছু না কিছু খাওয়ার তৌফিক দিয়েছেন। আর এই ঢাকা শহরে,এই দেশে এই পৃথিবীতে প্রতিদিন অগণিত মানুষ অভুক্ত থাকে। এক বেলা খাবারও জোটে না ঠিকমত। সেসব ভাবলেই আমার মধ্যে কখনো কোনো হতাশা কাজ করে না।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা বিশ্বে অন্তত ৮২ কোটি মানুষ রাতে না খেয়েই ঘুমাতে যায়। এমন নয় যে তারা ডাক্তারের পরামর্শমত না খেয়ে ঘুমায়। আসলে তারা খাবার জুটাতে পারে না বলেই না খেয়ে ঘুমায়।

বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ অতিরিক্ত খাবার খেয়ে খুব মোটা হয়ে গেছে।

যেখানে ৮২ কোটি মানুষ একবেলা কোনো খাবার পায় না, সেখানে সারা বিশ্বে প্রতি বছর অন্তত ২২ কোটি ২০ লাখ টন খাবার নষ্ট বা অপচয় করা হয়।

ইউরোপ এবং পূর্ব আমেরিকার মানুষ গড়ে প্রতি বছর ৯৫ থেকে ১১৫ কিলোগ্রাম খাবার না খেয়ে ফেলে দেয়। সাব সাহারান আফ্রিকা এবং এশিয়া অঞ্চলে খাবার ফেলে দেয়ার প্রবণতা সেই তুলনায় অনেক কম। এই দুই অঞ্চলের মানুষ গড়ে প্রতি বছর ছয় থেকে ১১ কেজি খাবার ফেলে দেয়।

আপনি যখন কোনো একটি খাবার স্বাদ হয়নি বলে অবজ্ঞা করছেন,কটুক্তি করছেন ঠিক সেই সময়ে এই ঢাকা শহরে,এই দেশে,এই পৃথিবীতে ৮২ কোটি মানুষ না খেয়ে থাকছে। খাবারই জুটছে না। যদি এই তথ্যটি মাথায় রাখেন এবং নিজেকে সেই মানুষদের কাতারে রেখে বিচার করেন তাহলে দেখবেন যে কোনো খাবারই আপনার কাছে অমৃত লাগবে। আপনিকি জানেন পৃথিবীতে এমনও দেশ আছে যেখানে কাদা দিয়ে বিস্কুট তৈরি করে সেটাই খায়! বলছিলাম হাইতির কথা।

ক্ষুধার জ্বালা কতটুকু হলে মাটি খাওয়া যায়?

আমরা যারা এই মুহূর্তে কম্পিউটার, মোবাইল বা যে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের স্ক্রিনে চোখ রেখে এই লেখা পড়ছি তাদের কারোরই সম্ভবত বিষয়টি নিয়ে ধারণা নেই।

এমনই এক পৃথিবী আমরা তৈরি করেছি যেখানে পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষ যখন শত শত খাবার নষ্ট করছে, তখন আরেক প্রান্তের মানুষ ক্ষুধা নিবারনের জন্য আয়োজন করে মাটির সঙ্গে লবন মিশিয়ে তা রোদে শুকিয়ে বিস্কিট বানিয়ে সংরক্ষণ করছে। প্রচণ্ড ক্ষুধায় সেই মাটির তৈরি অস্বাস্থ্যকর বিস্কুটই তাদের পেট ভরাচ্ছে।যে দেশটির বেশিরভাগ মানুষের দৈনিক মাথাপিছু আয় দুই ডলারেরও কম। সেই দেশের মানুষের কাছে ফল-মূলসহ যে কোনো পুষ্টিকর খাবার স্রেফ স্বপ্ন। পেট ভরানোই যেখানে কষ্টকর সেখানে পুষ্টির জোগান আসবে কোথা থেকে?

সেই দেশের একটা শ্রেণির মানুষ তাই পেট ভরাতে খান মাটির বিস্কুট। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই পেট ভরাচ্ছে বিশেষভাবে তৈরি এই বিস্কুট। হাইতিতে বেশ সহজলভ্যও এটি। বাজারের অন্য সব সামগ্রীর মতো এই বিস্কুটও বিক্রি হয় ঝুড়িভরে।

এখন একবার ভেবে দেখুন আপনি যা খেতে গিয়ে থুথু করে ফেলে দিচ্ছেন আর বলছেন স্বাদ হয়নি, এই খাবার কি খাওয়া যায়? তাহলে একবার ভাবুন ওদের মত হলে আপনি কী করতেন?

খাবার নিয়ে যখনই আপনার মনের মধ্যে খুতখুতানি জমবে তখনই এই ছবিটির কথা মনে করবেন। মনে করতে চেষ্টা করবেন জাজাফী নামে এক লোক কথা প্রসঙ্গে হাইতির লোকদের কথা তুলেছিল। রাস্তায় ঘুমানো মানুষের কথা বলেছিল। আর ইন্টারনেট থাকায় আপনি অনায়াসে নিজেই খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন কত মানুষ না খেয়ে থাকে। খাবারই জোটাতে পারে না। আসুন সন্তুষ্টচিত্তে খাদ্য গ্রহণ করি।

#জাজাফী

২৮ মার্চ ২০২৩

মঙ্গল শোভাযাত্রা একটি কৃত্রিম বাঙালি সংস্কৃতি

0

রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ। প্রতি বছরের মত এ বছরও পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ ঘিরে অনেক আলোচনা সমালোচনা চলছে। এ বছর একটু বেশিই হচ্ছে কারণ, মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে হাইকোর্টে রীট করা হয়েছে।মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে ০৯ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে আইনি নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হাজার বছর ধরে, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বাঙালি জনগণ একে অপরের ধর্মকে সম্মান করে এই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে আসছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে একটি কৃত্রিম কার্যকলাপ বাঙালি সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত এই কৃত্রিম উদ্ভাবিত মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে পহেলা বৈশাখের কোনও সম্পর্ক নেই।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘মঙ্গল’ শব্দটি একটি ধর্মীয় সংশ্লিষ্ট শব্দ। সব ধর্মের লোকজন তাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে ‘মঙ্গল’ প্রার্থনা করে থাকেন। এখন এই মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের দৈত্য আকৃতির পাখি, মাছ ও বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য প্রদর্শনের মাধ্যমে মুসলিম জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হচ্ছে যা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২-ক এর সরাসরি লঙ্ঘন। এটা দণ্ডবিধির (Penal Code) ২৯৫-ক ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধও।

তাই নোটিশ পাওয়ার পর ‘অসাংবিধানিক, বেআইনি ও কৃত্রিম উদ্ভাবিত’ মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

যারা মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বাঙ্গালীর ঐতিহ্য বলছেন,হাজার বছরের সংস্কৃতি বলছেন তাদেরকে দুই চার কথা বলতে চাই এবং প্রশ্ন রেখে যেতে চাই। আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে যতটুকু বুঝেছি পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ আমাদের বাঙ্গালীর হাজার বছরের সংস্কৃতি হলেও তথাকথিত মঙ্গল শোভাযাত্রা  কোনো ভাবেই আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয় এবং এর হাজার বছরের ইতিহাসও নেই।

বৈশাখী উদযাপনের ইতিহাস কয়েকশ বছরের পুরনো হলেও মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালের পহেলা বৈশাখে যশোরে। তখন দেশে ছিল সামরিক শাসন। উদ্দেশ্য ছিল দেশের লোকজ সংস্কৃতি উপস্থাপনের মাধ্যমে সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা। আর সেই শোভাযাত্রায় অশুভের বিনাশ কামনা করে শুভশক্তির আগমনের প্রার্থনা করা হয়। এর উদ্যোগ নিয়েছিলেন চারুশিল্পী মাহবুব জামাল শামিম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনষ্টিটিউট থেকে পড়াশোনা শেষ করে যশোরে চলে যান তিনি। যশোরে গিয়ে চারুপিঠ নামে একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত যশোরে সীমাবদ্ধ থাকেনি মঙ্গল শোভাযাত্রা।

১৯৮৯ সালে পহেলা বৈশাখে ঢাকার চারুকলা থেকেও শুরু হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। শুরুতে এর নাম ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ ছিল। তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থাকে মাথায় রেখেই এমনটা করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এটি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হিসেবেই পরিচিত হয়।

সেই শোভাযাত্রার মূলভাব ছিল অগণতান্ত্রিক শক্তির বিনাশ। ওই সময় এরশাদবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। সে সময় সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করেছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সবার প্রচেষ্টায় তখন এটি বৃহত্তর প্রচেষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হলো। ১৯৮৫-৮৬ সালের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্যোক্তা। শিক্ষকরা পেছনে ছিলেন, কিন্তু সব কাজ হয়েছে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে। এখন পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা সব ধরনের মানুষের অংশগ্রহণে একটি প্রধান অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

ষাটের দশক থেকে রমনা বটমূলে গানের মাধ্যমে বৈশাখী উদ্যাপন শুরু করে। ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট (বর্তমান চারুকলা অনুষদ) ঢাকায় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু করে। যার উদ্যোক্তা ছিল চারুকলার ১৯৮৬ ব্যাচ।

আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, মানুষ যখন তার খর্বিত মৌলিক, মানবিক অধিকার আর বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য সোচ্চার, ঠিক এই সময় হতাশা-যন্ত্রণার মাঝে আনন্দের দীপশিখা জ্বালিয়ে আশার বাণী শোনাবার জন্য চারুকলার ১৯৮৬ শিক্ষাবর্ষের কিছু তরুণশিল্পী বৈশাখী উৎসবের মধ্য দিয়ে একটি আনন্দ-উদ্দীপনা আনতে প্রয়াসী হয়। ১৯৮৯ সালের ১ বৈশাখে ঢাকা শহরে প্রথম আনন্দ শোভাযাত্রার সূচনা হয়। তার আগে ১৯৮৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর এই গ্রুপের নেতৃত্বেই জয়নুল জন্ম উৎসব ৮৮-এর আনন্দ শোভাযাত্রার সূত্রপাত ঘটে। তবে বাংলাদেশে প্রথম ১৯৮৬ সালে ১ বৈশাখে  শোভাযাত্রার সূত্রপাত ঘটায় যশোরের চারুপীঠের শিল্পী এবং শিক্ষার্থীরা। চারুকলা ইনস্টিটিউটের (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ) মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং বর্ষবরণের উৎসব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং জাতীয় পর্যায়ে রূপলাভ করেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে উপাচার্য অধ্যাপক আবু ইউসুফ স্যারের সময়। একটি বড় বাঘ ও বক, অনেক ঘোড়া এবং মুখোশ বানানোর দায়িত্ব ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক আলপ্তগীন তুষারের ওপর, যা ছিল তার ঢাকা চারুকলার অভিজ্ঞতার ফসল।

ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে একটি সংস্কৃতিক বলয় তৈরির জন্য শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান স্যার অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে কাজ করেছিলেন। সেই লক্ষ্যে শিল্পী নাজমা আক্তারের পরিকল্পনা এবং ভিসি স্যারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগ খুলে আলপ্তগীন তুষারকে চট্টগ্রাম থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সিনিয়রিটির নিয়ম মেনে অর্পণ করেন। ২০১৪ সালে একটি বাঘ এবং বক তৈরি করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ। সেটা নিয়ে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ২০১৫ সালে পরাক্রমশালিতার প্রতীক হিসেবে বড় একটি হাতি বানানো হয়েছিল। এসব তৈরির মূল দায়িত্ব পালন করেন আলপ্তগীন তুষার। সঙ্গে সহযোগিতা করেন সহকর্মী শিল্পী রশিদ আমিন, রেজাউল সাদাত, ইমাম হোসেন সুমন এবং চারুকলার ছাত্রছাত্রী।

১৩ এপ্রিল ২০২৩

আমার আনন্দ বেদনার ঈদ

0
বয়ে চলা নদীর মত জীবনটাও নানা অলিগলি পেরিয়ে কবে কোথায় কোন মোহনায় গিয়ে মেশে তা কেউ জানে না।তাইতো কথায় বলে নিঃশ্বাসের বিশ্বাস নেই। যদিও এটি কথার কথা কিন্তু কথাটি পুরোপুরি সত্য। একটি মাটির পাতিল যত্ন করে রেখে দিলে তা যুগের পর যুগ সেভাবেই থেকে যাবে। কিন্তু রক্ত মাংসের শরীরে গড়া মানুষকে যতই যত্ন করে রাখি না কেন,যতই ভালোবেসে আগলে রাখি না কেন তার মধ্যে রয়েছে প্রাণ পাখি। কখন সে ফুড়ুৎ করে উড়াল দেবে কেউ আমরা জানি না।প্রতিনিয়ত চোখের সামনে যাদের দেখি তারাই একদিন হুট করে চিরকালের মত হারিয়ে যায়। আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারি না আজ যার সাথে গল্প করেছি কাল হয়তো সে থাকবে না নয়তো আমি থাকবো না, নয়তো আমরা কেউ থাকবো না।
এবারের ঈদ ছিল আমার জন্য আনন্দ বেদনার। বেদনা বলতে যা বুঝায় যদিও এটা সেরকম কিছু না। এবারের ঈদে বাড়িতে গিয়ে কয়েকজন স্বজনকে দেখতে পাইনি। তারা পৃথিবীর আলোবাতাসে আর নিঃশ্বাস নেয় না। তাদের শরীরের ঘ্রাণ এখন আর পাওয়া যায় না। যে জমিন থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছিল আজ তারা সেই জমিনের নিচে শুয়ে আছে। মিশে গেছে তাদের শরীরের মাংস হাড় অস্তিমজ্জা সব। এই তালিকায় ছিলেন আমার মেজ চাচি,দুই চাচা আর এক বন্ধু এবং এক বন্ধুর বাবা। তাদের সাথে ছিল আমার আত্মার সম্পর্ক। আমার দুই চাচার মধ্যে একজনের কথা রাস্তায় যেতে যেতে মনে পড়লো। তার বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে বেশ কিছু দইয়ের পাতিল পড়ে আছে। আমার সাথে তার শেষ স্মৃতি দই নিয়ে। ভীষণ অসুস্থ ছিলেন। ডাক্তার বলেছিলেন সময় ফুরিয়ে গেছে। শেষ বার যখন ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলাম তখন জানতে চেয়েছিলাম তিনি কী খেতে পছন্দ করেন। চাচা বলেছিলেন তিনি তেমন কিছুই খেতে পারেন না। শুধু দুই আর চিড়া খেতে পারেন। আমি তার জন্য শহর থেকে দই কিনে এনে দিয়েছিলাম। তিনি তৃপ্তি সহকারে খেয়েছিলেন।
তারপর আবার আমি ফিরে আসি সমুদ্র সৈকতের শহরে। একদিন খবর পাই সেই চাচা আর নেই। ইচ্ছে থাকলেও তাই তার শেষ যাত্রায় শরীক হতে পারিনি। আমার যে চাচি মারা গিয়েছেন এইতো কিছুদিন আগে। তার মৃত্যুর সময়ও যেতে পারিনি। আমি এই চাচির মৃত্যু নিয়ে খুব ভয় পেতাম। কারণ অনেক আগে থেকেই তিনি চাইতেন তিনি মারা গেলে আমি যেন তার জানাজা নামাজের ইমাম হই! আমি নিজেকে অতটা যোগ্য মনে করতাম না কখনোই। তাই প্রতিনিয়ত প্রার্থনা করতাম চাচি যেন অনেক অনেক অনেক বছর বেঁচে থাকেন। আমি যদি আরও মুত্তাকি হতে পারি এবং তখন যদি চাচি ইন্তেকাল করেন তবে হয়তো আমি তার জানাজায় ইমামতি করতে পারবো। আল্লাহ তার জন্য যে সময় নির্ধারণ করেছিলেন তিনি সেই সময়েই তার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন। তার ছোট সন্তান আরও কয়েক বছর আগে ইন্তেকাল করেছিলেন। এখন নিশ্চই আল্লাহ চাইলে মা ছেলের সাক্ষাত ঘটেছে। আমি চাচির জানাজাতে উপস্থিত হতে পারিনি।দূরত্ব  আমাকে আরও বেশি অপারগ করে দিয়েছে।
আমার যে বন্ধু  আমার চেয়ে বয়সে ছোট ছিল। গ্রামের বাড়িতে দুই তলা বিল্ডিং করেছে। একটি প্রিমিও গাড়ি কিনেছে। ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট কিনেছে। সেই হাসিখুশি মানুষটিও কয়েক মাস আগে বিদায় নিয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে তার হার্টের অপারেশন করা হয়েছিল।এবার ঈদে গিয়ে তাকেও মিস করেছি। মিস করেছি আমার বন্ধু আওরঙ্গজেবের বাবাকে। যিনি ফরিদপুর মেডিকেলের ডক্টর ছিলেন। আমাকে খুবই স্নেহ করতেন।ব্যক্তিজীবনে তিনি অত্যন্ত পরহেজগার মানুষ ছিলেন। আমার বাবার অসুস্থতার সময়ে তিনি অনেক সহযোগিতা করেছেন। সবকিছু ছেড়ে তিনি বাবার পাশে থেকেছেন। তার সাথে শেষ কবে দেখা হয়েছিল সেই স্মৃতিও আর মনে নেই।
এবারের ঈদ ছিল আমার জন্য আনন্দ বেদনার এক মহাকাব্য। শুরুটা হয়েছিল অবশ্য আনন্দের সাথে এবং শেষটাও মোটামুটি আনন্দের সাথেই হয়েছে। আমি সব সময় ভালো কাজের সাথে যুক্ত থাকতে চেষ্টা করি। সব সময় পারি না। এবার কিছু মহৎপ্রাণ মানুষের সংস্পর্শে এসে ভালোকাজের পরিমান বেড়েছে। এবারের ঈদ তাই আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা ঈদও বলা যেতে পারে। ঈদের আগে পবিত্র রমজান মাসে অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ কিংবা ৭০ জনেরও অধিক শিশু কিশোর কিশোরীর হাতে ঈদের জামা তুলে দেওয়া আর ৪২টি পরিবারকে ঈদের বাজার করে দেওয়ার যে সুযোগ আমি পেয়েছিলাম তা আমার ঈদকে সত্যিকারের আনন্দে রুপ দিয়েছে।
এই ঈদে আমি তিনজনের কাছ থেকে মোট ১১ হাজার টাকা ঈদ সালামী পেয়েছিলাম। সেটাও আমার আনন্দকে বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার একই সাথে আমি আমার ভাই বোন বন্ধুদেরকে ঈদ সালামী দিতে পেরেছি সেটাও কম আনন্দের নয়।এর বাইরে ১১ জনের হাতে যাকাতের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে দিতে পেরেও ভালো লাগছে।আমার হারানো মোবাইলটা ফেরত পাওয়ার জন্য থানায় জিডি করেছিলাম। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ফোনটা ফিরে পেলে এক বন্ধুকে উপহার দেবো। আমি কথা রেখেছি। ফোন ফিরে পেয়ে সেই বন্ধুকে উপহার দিয়েছি। সে খুবই খুশি হয়েছে।
ঈদ যাত্রার শুরুতেই ভালোলাগা তৈরি হয়েছিল। এবার ১১ দিনের ছুটি ছিল আমার। অনেক কিছু করবো বলে ভেবেছিলাম। তবে প্রচন্ড গরমের কারণে তেমন কিছুই করতে পারিনি। গ্রামের বাড়িতে একটা কম্পিউটার থাকার পরও সাথে করে ল্যাপটপটা নিয়ে গিয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিল ১০/১২ বছর আগে যে লেখাগুলো ২৫/৩০ হাজার শব্দ লিখে ফেলে রেখেছিলাম তার দু একটা নিয়ে বসবো। কিন্তু তা আর সম্ভব নয়নি। যদিও আমি সব সময় গুগল ডকে লিখি। ফলে ইন্টারনেট কানেকশন থাকলে যে কোনো কম্পিউটার থেকেই লেখা সম্ভব হয়। কষ্ট করে ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়াই বৃথা হয়েছে।
যখন কক্সবাজার থেকে ডাইরেক্ট ফ্লাইট  ছিল তখন আমার জন্য সুবিধা ছিল। এখন আবার তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কানেক্টিং ফ্লাইট ধরলে সময়ও লাগে অনেক আবার টাকাও খরচ হয় দ্বিগুন। তাই সময় বেশি লাগার পাশাপাশি টাকাও বেশি খরচ হবে ভেবে বাসেই যাত্রা করি। কিন্তু এবার ডাইরেক্ট বাসও পাইনি। প্রথমে ঢাকা পযর্ন্ত গিয়ে পরে আবার বাস বদল করেছি। আমি সাধারণত কক্সবাজার থেকে ঢাকা পযর্ন্ত এনা পরিবহনের বাসে যাওয়া আসা করি। এবারও বাসা থেকে একটা অটোতে করে এনা পরিবহনের ঝাউতলা কাউন্টারে গিয়ে বসি। আধা ঘন্টা অপেক্ষা করার পর নির্ধারিত সময় বাস আসলে উঠে বসি। বাস ছড়ে দেয়। কলাতলিতে গিয়ে আবার অপেক্ষা। সেই সময়ে আইসক্রিম খাবো বলে নিচে নামি। আইসক্রিম না পেয়ে কোক কিনি। বাসে ফিরতে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখি ট্রাউজারের পকেটে মোবাইলটা নেই!
আমার মনে হলো হয়তো বাসের সিটে পড়েছে। কিন্তু গিয়ে পেলাম না। ফোন করলে এক লোক রিসিভ করলো। সে তখন কালুরদোকান! আমার ওই মোবাইলের চেয়ে সিমটা সাথে থাকা জরুরী। কিন্তু ভাগ্যের লিখন খন্ডানোর উপায় নেই। ভেবেছিলাম ঢাকায় পৌছেই সিম তুলে নেবো কিন্তু সেই সুযোগ পাইনি। পরদিন সন্ধ্যা নাগাদ বাড়িতে পৌছালাম। মাগরিবের নামাজ পড়ে তারপর সিম তুলে নিলাম।

ঈদে কোথাও ঘুরতে যাইনি। আমাদের বাড়ি  একদম গ্রামে। খুব একটা উন্নতির ছোঁয়া পায়নি এমন গ্রাম।একদিন শহরে গেলাম। গিয়ে মনে হলো পুরো শহর মৃত। দোকানপাট বন্ধ। লোকজন নেই। মনে হয় সবাই এ শহর ছেড়ে কোথাও পালিয়ে গেছে। শহরে গিয়ে যাদের সাথে আমি ঘুরতাম তারাও কেউ নেই। তারা কে কোথায় কী নিয়ে ব্যস্ত আছে জানি না।এবার ঈদে আমাদের বাড়িতে প্রচুর গ্যাঞ্জাম হয়েছে। ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারিলেগেছে। অশান্তি ছিল চরমে। আমি মাঝখানে পড়ে গিয়ে আমার অবস্থাও কাহিল। ভিলেজ পলিটিক্স দেখে আমি প্রচন্ড বিরক্ত। দুইদিনের জীবনে মানুষের এতো লোভ এতো ক্ষোভ এতো চাহিদা কেন আমি জানি না। এতো রেশারেশি।

এগারদিনের ছুটির মধ্যে ১৯ তারিখ সারাদিন বাড়িতে যাওয়ার জন্য পথে পথে কেটেছে!  তারপর ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে ২৭ তারিখ পুরোটা দিন গেছে! তারপর কক্সবাজার ফেরার জন্য ২৮ তারিখটা গেছে। ছুটির তিন চারদিন এভাবেই পথে পথে কাটে।

আমার এবার নাটোর যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। বিভাদের বাসায়। ভেবেছিলাম ওদের বাসায় যাবো। আমাকে দাওয়াত করেছিল। আগে কখনো যাইনি। কিন্তু প্রচন্ড গরমের কারণে আর বাড়িতে গ্যাঞ্জামের কারণে মনটাই বিষিয়ে উঠেছিল। ফলে কোথাও আর যাওয়া হয়নি। বিভাদের বাড়িতেও না।

দীর্ঘ ভ্রমণ আমাকে কখনো ক্লান্ত করে না। এবারও ক্লান্ত করেনি। কিন্তু ঢাকায় ফেরার পর বন্ধুর সাথে রেস্টুরেন্টে খেয়ে পেটের বারটা বেজেছে।প্রচন্ড বমি আর ডিসেন্ট্রি! যদিও শরীর ক্লান্ত ছিল না। কিন্তু খুব বিরক্ত হয়েছি। ঈদের আগে রোহানকে বলেছিলাম ঢাকায় ফিরলে তোমার সাথে দেখা করবো বা তোমাদের বাসায় আসবো। একদিন তোমার সাথে থাকবো। কিন্তু শরীরটা খারাপ হয়ে সব বিগড়ে গেছে। পরে ধানমিন্ডতে আমার বন্ধু শাহীনের বাসায় উঠেছিলাম। রাতে ফেসবুকে ঢুকে দেখি রোহানের নানা মারা গেছেন! ওইদিন আমার ওর সাথেই থাকার কথা ছিল। বিকেলে টিকেট কাটতে কলাবাগান গেলাম। যাওয়ার পথে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম  আমি ধানমন্ডিতে আছি। এটা চোখে পড়ায় উত্তরা থেকে এক ভাই ফোন দিয়ে বললেন তিনি আসতে চান দেখা করতে। আমি বললাম সময়তো কম। তিনি জানালেন বাইকে আসবেন। বেশি সময় লাগবে না।

সীমান্ত স্কয়ারে তার সাথে দেখা করলাম। এতো কষ্ট করে এতো দূর থেকে এসেছেন। এক ঘন্টা মত আড্ডা দিয়ে বন্ধুর বাসায় ফিরে গেলাম। এশার নামাজ পড়ে খাবার খেয়ে রিকশা নিয়ে বাস কাউন্টারে গেলাম। শরীর ভালো থাকলে আজ সারাদিন ঢাকায় থাকতে পারতাম। তবে সেটা আর হয়নি।

এবার ঈদে বাড়িতে গিয়ে শুধুমাত্র একটি বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা পড়া ছাড়া কোনো মুভি দেখিনি,নাটক দেখিনি, কোথাও ঘুরতে যাইনি। সারাদিন ঘরের মধ্যেই শুয়ে বসে কাটিয়েছি। এবার ঈদে কেউ আমাকে মোবাইলে ঈদ মুবারক লিখে মেসেজ দেয়নি। আমিও দেইনি। আমি দেইনি বলেইকি কেউ দেয়নি কি না জানি না। তবে ফেসবুকে কয়েকজনের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। যদিও অন্যান্য বছরের তুলনায় তা খুবই সীমিত।

সবচেয়ে খারাপ লেগেছে গত ১৬ এপ্রিল কক্সবাজার থেকে কন্টিনেন্টাল কুরিয়ারে আরুশী আর ইররামের জন্য ছোট্ট একটি ঈদ উপহার পাঠিয়েছিলাম।আজও তা ওদের কাছে পৌছেনি। ওরা থাকে ঢাকার লালবাগে! ভাবছি আজ একবার আরুশীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে চেষ্টা করবো ওরা পেলো কি না। না পেলে ভোক্তা অধিকারে কুরিয়ারের নামে মামলা করবো। এই মামলা কি আমলযোগ্য হবে কি না আমার জানা নেই।

#জাজাফী

২৯ এপ্রিল ২০২৩

এতো বড় নোট আমরা ভাংতি দিতে পারছি না

0

প্লুটো গ্রহ থেকে বলছি। যদিও পৃথিবীর মানুষ মনে করে প্লুটো তার গ্রহত্ব হারিয়েছে তাতে আমগো কিছু যায় আসে না। তোমরা মিয়া কইলা আর আমগো গ্রহত্ব হারায় গেল? এইডা কি মাইনষের যৌবন যে হারায় যাইবো? আমরা বহুত বালা আছি। হুনেন আমগো সুখের কতা কইয়ে যাই। তয় এমন আঞ্চুলিক বাষায় কইলি আমনেরা নাও বুঝবার পারেন তাই আপনেগো লাহান শুদ্দু বাষায় কইতেছি-

ঈদ  আসতে বেশি দেরি নেই। ঈদের কেনাকাটা করতে হবে। কিন্তু  বাবার কাছে টাকা চাইতে ভয় পাচ্ছি। এই সময়ে বাবার হাতেও তেমন টাকা নেই। একমাত্র উপায় বড় আপু। আপুকে বললে নিশ্চই একটা উপায় হবে। আমি দুরুদুরু বুকে আপুর রুমে সামনে গিয়ে দুবার নক করলাম। আপু বললো আয় ভেতরে আয়। আমি কাচুমাচু করে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার ভাবসাব দেখেই আপু বুঝলো আমি কিছু একটা ধান্দা করতে এসেছি। আপু বললো ভণিতা না করে কী বলবি বল। আমি খানিকটা সাহস পেয়ে বললাম আপু ঈদতো চলেই আসলো কিছু কেনাকাটা করবো । বাবার কাছে বলে কিছু টাকা ম্যানেজ করে দে না। আপু একগাল হেসে বললো এই সামান্য বিষয়ে বাবাকে বলতে হবে কেন? তোর যাকিছু কেনাকাটা করা দরকার সব টাকা আমি দেবো।

আপুর মুখে এমন কথা শুনে আমিতো থ। যা খুশি কিনতে পারবো আর সব  টাকা আপু দেবে! আমি বললাম আমার প্লুটো সেরা বোন আছে বলেই আমি প্লুটোর সবচেয়ে সুখী মানুষ। কিন্তু আমার সুখটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। আপু যখন পার্স খুলে আমার দিকে টাকা এগিয়ে দিল তখন আমার মাথায় আসমান ভেঙ্গে পড়ার দশা। আমি আশা করেছিলাম হাজার বিশেক টাকা হয়তো আপু দিবে। কিন্তু কিসের কী? এ কেমন ঠাট্টা বুঝলাম না। নিজের ভাইয়ের সাথে কেউ এমন রসিকতা করে? তাও যদি ক্লাস টুতে পড়ুয়া ভাই হতো  তাও একটা কথা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একটা ভাই তার সাথে এমন বাদরামো করা মোটেই ঠিক না। আমি আপুর হাত থেকে টাকাটা নিলাম। একটা দোয়েলের ছবি ওয়ালা নোট। মানে দুইটাকা। আমি বললাম আপু এই টাকাটা কি আমি অ্যালবামে ঢুকিয়ে রাখবো?

আমার কথা শুনে আপু বললো মারবো এক থাপ্পড়। এতো টাকা কেউ এলবামে ঢুকিয়ে রাখে? আমার আপুর মাথাটা গেছে। তা না হলে মাত্র দুই টাকার একটা নোটকে এতো টাকা বলে? আমি কিছু না বলে তার দিকে তাকালাম। সে বললো আরে গাধা এখন জিনিসপত্রের দাম যে হারে কমেছে তুই সেটা খোঁজ রাখিস? এই দুইটাকা নিয়ে তুই বাজারে গিয়েই দেখ। আমি বললাম আপু এমন ইয়ার্কি করলে কিন্তুভালো হবে না বলে দিচ্ছি। আপু বললো দেখ আমি মোটেও ইয়ার্কি করছি না। শুধু তুই কেন অনেক মানুষেরই এটা বিশ্বাস হবে না যে জিনিসপত্রের দাম কমতে কমতে একেবারে তলানিতে নেমে এসেছে। তোকে একটা মন্ত্র শিখিয়ে দিচ্ছি। যে কোনো দোকানে গিয়ে তুই সেই মন্ত্রটা বলবি আর এই টাকাটা দিবি। দেখবি যা কিনতে চাইবি তাই কিনতে পারবি।

আমি আপুর কাছ থেকে সেই মন্ত্রটা শিখে নিয়ে খুব দ্বিধাগ্রস্থের মত লজ্জার মাথা খেয়ে প্রথমে অ্যাপেক্সের শোরুমে গেলাম। পছন্দমত একজোড়া জুতা নিলাম। জুতার উপর কোনো দাম লেখা নেই। কাউন্টারে গিয়ে আপুর দেওয়া দুইটাকার নোটটা দিলাম। কাউন্টারের ভদ্রলোক চোখ কপালে তুললো। আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। এইরে মানসম্মান সব গেলো। নিশ্চই এবার পিন্ডিদিবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে কাউন্টার থেকে বললো স্যার এতো বড় নোটতো ভাংতি হবে না। আপনি মাত্র এক জোড়া জুতো নিয়ে দুইটাকার নোট দিলে কিভাবে হবে? আমি তার কথা বুঝতে পারলাম না। সেও কি তবে আমার সাথে ইয়ার্কি করতেছে? আমি আরো বেশি বিব্রত হয়ে বললাম আসলে হয়েছে কি আপু আমার সাথে ইয়ার্কি করে এই নোটটা দিয়েছে। এর জন্য আমি লজ্জিত।

দোকানদার বললো স্যার আপনার লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই বরং আমরাই লজ্জিত যে এতো বড় নোট আমরা ভাংতি দিতে পারছি না। এবার কিছুটা সাহস পেয়ে জানতে চাইলাম জুতার দাম কত হয়েছে? দোকানদার বললো তিন টয়সা হয়েছে। আমি এই শব্দটা আগে শুনেছি বলে মনে পড়ছে না। জিজ্ঞেস করলাম তা এই টয়সা জিনিসটা কী? তিনি বললেন স্যার দশ হাজার টয়সা মিলে হয় এক পয়সা। তার মানে হলো  আপনি যে দুই টাকা দিয়েছেন তার মূল্য ২০ লাখ টয়সা। এতো টাকা কি কেউ দোকানে রাখে? আমি সাথে সাথে জোরে জোরে সেই মন্ত্রটা পড়ে ফেললাম। আপুর কথা তাহলে সত্যি!

বাজার সম্পর্কে আমারতো দেখি কোনো ধারণাই ছিল না। তারপর একে একে আইফোন সিক্সটি নাইন কিনলাম। একটা স্বর্ণের তৈরি ঘড়ি কিনলাম। পারফিউম কিনলাম। অনেকগুলো টিশার্ট কিনলাম,জিন্স কিনলাম। শেষে বাড়ি ফেরার সময় দেখলাম আপু যে দুই টাকার নোটটা দিয়েছি তা এখনো পকেটেই আছে। আসলে এতো বড় নোট কেউ ভাংতি দিতে পারেনি। সবাই বলেছে স্যার নিয়ে যান পরে দিয়েন। আমরা অন্তত বলতে পারবো আমাদের দোকানে এমন এক মহান তালেবর এসেছিলেন যার পকেটে দুই টাকার একটা চকচকে নোট থাকে! এতো টাকার মালিক হয়েও তিনি কত সাধাসিধে। একথা শুনে আমার মনে পড়ে গেল মার্ক টোয়েনের লেখা মিলিয়ন পাউন্ড ব্যাংক নোট গল্পটির কথা।

আমি বাসায় ফিরে আপ্লুত কন্ঠে আপুকে বললাম আপু তোমার কথাতো সত্যি। জিনিসপত্রের দাম এতো কমলো কিভাবে? তখন আপু বললো সব ওই মন্ত্রের যাদুরে সব ওই মন্ত্রের যাদু। কদিন পর দেখবি সব ফ্রিতে পাওয়া যাচ্ছে। আমি আপুকে তার দেওয়া দুই টাকার নোটটা ফিরিয়ে দিলাম। এতো বড় নোট নিয়ে আমার ঘুম আসবে না।

২৭ মার্চ ২০২৩

বিদেশে উচ্চশিক্ষা নাকি মেধা পাচার

0

প্রতিবছর উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে এটি দেখে আমরা আনন্দিত হচ্ছি যে আমাদের শিক্ষার্থীরা, আমাদের সন্তানেরা বিশ্ব বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের ‍সুযোগ পাচ্ছে। তবে আমি এ নিয়ে প্রকারান্তে ভীষণ ভাবে ভীত হয়ে পড়েছি। আমার মনে কেবলই প্রশ্ন উকি দিচ্ছে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নাকি মেধা পাচার হচ্ছে?  কারণ আমি দেখছি এই যে আমাদের যে শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাচ্ছে তাদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা আমাদের জন্য কাজে আসছে বাকি ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা আমাদের দেশের জন্য কোনো কাজেই আসছেনা শুধুমাত্র প্রতি বছর কত সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছে তার সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়া। আমি দেখেছি যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছে তাদের সিংহভাগ শিক্ষার্থী সেই দেশে অথবা উন্নত কোনো দেশে স্থায়ী ভাবে বসবাস করা শুরু করেছে। 

এটি অবশ্যই সবার কাম্য যে প্রত্যেকেই চায় নিরাপদ ও উন্নত জীবনযাপন করতে। ফলে তারা চাইবে তারা তাদের সুবিধামত দেশে বসবাস করতে। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি এই যে যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে তারপর উচ্চশিক্ষা শেষে সেই দেশে বা উন্নত কোনো দেশে বসতি গেড়েছে এবং সেখানেই সেটেলড হয়েছে তারা কিন্তু তাদের উপার্জনের টাকা রেমিটেন্স আকারে দেশে পাঠাচ্ছে না বরং তারা যে দেশে অবস্থান করছে সেখানেই থাকছে। ফলে তাদের এই উচ্চশিক্ষা, এই মোটা বেতনের চাকরি দিয়ে বাংলাদেশের কোনো লাভ হচ্ছে না।  ইউনেস্কোর “ গ্লোবাল ফ্লো অব টার্শিয়ারি লেভেল স্টুডেন্ট” শিরোনামের এক প্রতিবেদন অনুযায়ি শুধুমাত্র ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গিয়েছে ৪৯ হাজার ১৫১ জন শিক্ষার্থী।

বাংলাদেশের অগ্রগতির সবচেয়ে বড় অন্তরায় এদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে রূপান্তরিত করতে না পারা, মেধাবীদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে না পারা।শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, অপরাজনীতি, শিক্ষকদের রাজনীতিসহ নানাবিধ কারণে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছাত্রাবস্থায় মেধাবীদের এক বিশাল অংশ বিদেশে যাওয়ার চেষ্টায় থাকে। একসময় তারা চলেও যায়। এতে করে তারা শুধু বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে তা-ই নয়, সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে অপার সম্ভাবনাময় মেধাও। একজন মেধাবী শিক্ষার্থী দেশে যদি তার যোগ্যতা অনুসারে কর্মক্ষেত্র ও নিরাপত্তা না পান, তখন তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করবেই। প্রসঙ্গ যখন সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যৎ, নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য কেউ যদি বিদেশে গমন করেন, তাহলে তাকে দোষ দেওয়া যায় কি? আমরা মাঝে মধ্যেই তাদের কটাক্ষ করে বলে থাকি, তারা স্বার্থপরের মতো দেশের স্বার্থ বিবেচনা না করে বিদেশে পাড়ি জমায়। আদতে মেধাবীরা দেশ ছাড়তে চান না, পরিস্থিতি তাদের দেশ ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো ডলারের পরিমাণ ছিল ৯৮.৮ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (২০২২-২৩), এটি ১৫৩.১ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে, ৩২১ মিলিয়ন ডলার ( প্রায় ৩,৫৩,০২৫,০০০,০০০ টাকা ) উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছিল৷ ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে, আন্তর্জাতিক ছাত্র পাঠানোর দেশগুলির তালিকায় বাংলাদেশ ১৪ তম থেকে ১৩ তম স্থানে উঠে এসেছে৷মার্কিন দূতাবাস ১৪-১৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক শিক্ষা সপ্তাহ (IEW) উদযাপনে মঙ্গলবার ঘোষণা করেছিল। তাদের তথ্য মতে গত এক দশকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি হয়েছে, যা ২০১১ সালে ৩,৩১৪ থেকে বেড়ে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ১০৫৯৭ পর্যন্ত এসেছে। স্বাধীনতার পরপরই, বাংলাদেশ ১০৭৪-১৯৭৫ শিক্ষাবর্ষে ৪৮০ জন শিক্ষার্থীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। এদিকে সংখ্যার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া বিদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশীদের অবস্থান শীর্ষ ২৫-এ। ২০১৭ সালে দেশটির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন ৬ হাজার ৪৯২ শিক্ষার্থী। এছাড়া ওই সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় ৮ হাজার ৯৮৬, যুক্তরাজ্যে ৩ হাজার ১১৬ ও কানাডায় ২ হাজার ২৮ শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে পড়তে যান।

বিদেশে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত ১২ বছরে বেড়ে হয়েছে প্রায় চার গুণ। ইউনেস্কোর ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিস্টিকসের (ইউআইএস) তথ্য বলছে, ২০০৫ সালে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন ১৫ হাজার বাংলাদেশী শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬ হাজারে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের মতো প্রতিষ্ঠান যেখানে অদূর ভবিষ্যতে বৈশ্বিকভাবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমার সম্ভাবনা দেখছে, সেখানে বাংলাদেশসহ কিছু দেশ থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর এ প্রবাহ আগামী বছরগুলোয় আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।নিম্ন জীবনমান, দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তাও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী করছে। বিদেশে পড়তে যাওয়া এসব তরুণের অধিকাংশই ধনী পরিবারের। আর তাদের পড়াশোনার মাধ্যম ইংরেজি, যাদের অনেকেই পাঠ শেষে আর দেশে ফেরেন না।

৭০-৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী দেশে  না ফেরায় দেশ উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।  যা বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশের অর্থনীতি ও আত্মাসমাজিক উন্নয়নে বিরাট ধাক্কা। পাবলিক  বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর পিছনে সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় হচ্ছে ৫ লাখ টাকার অধিক, একজন বুয়েটের শিক্ষার্থীর শিক্ষা  ব্যয় হচ্ছে ১০ লাখ টাকা আর একজন মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর পিছনে ১৫ লাখ টাকার ব্যয় করছে সরকার। আবার তারা যখন উন্নত বিশ্বে ডিগ্রি অর্জন করতে যায়, তখনও দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা প্রচার হয়। যদিও এই ব্যয়ের পুরোটা ভার বাংলাদেশ বহন করে কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশে না ফেরায় সুফল ভোগ করছে উন্নত বিশ্ব। এ-কথা সত্য যে,  বিদেশ থেকে বাংলাদেশ প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরণ করে । কিন্তু এর সিংহভাগ আসে প্রবাসী শ্রমিকদের  আয় থেকে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অধিকাংশ  চিকিৎসা, প্রকৌশলী, শিক্ষক ও  শিক্ষার্থীরা দেশের অর্থনীতিতে তেমন একটা  অবদান রাখছে না। তারা উন্নত জীবনযাপন আশায় সে-সব দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে পরিবারসহ স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।গত কয়েক দশকে উন্নয়নশীল দেশগুলো পাচার হয়ে যাওয়া মেধা ফিরিয়ে আনতে এবং মেধা পাচার ঠেকাতে নানার রকমের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু  বাংলাদেশে এখনো তেমন কোন উদ্যোগ গৃহীত হয়নি। ফলে চরম মেধা শূণ্যতায় ভুগছে দেশ।

দেশে উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এ শ্রেণীর অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের দেশে পড়াশোনা করাতে চাইছেন না। ফলে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের একটি বড় অংশ পড়াশোনার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর বিদেশযাত্রায় দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, এমনটা বলা যাবে না। কারণ এ শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্র অংশই ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসছে। এটি একধরনের মেধা পাচার। দেশে ভালো কর্মসংস্থান নেই। আবার শিক্ষার্থীরা দেশে ফেরত আসার তাগিদও অনুভব করছেন না।প্রাকৃতিক  সম্পদের প্রাচুর্যতা  ছাড়াও একটি দেশে শুধু মানব সম্পদের সঠিক ব্যবহার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড মতো দেশগুলো  শুধুমাত্র মানব সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করেছে।

উন্নত দেশের গবেষণা, প্রযুক্তি আর স্থিতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশের মেধাবী সন্তানরা সেসব দেশকে আরও শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী করেন। আর দেশ হারায় তার সবচেয়ে মেধাবী, জ্ঞানী, দক্ষ ও যোগ্য নাগরিককে। সম্ভাবনাময় এ তুখোড় প্রজন্মকে হারিয়ে নিজ দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতি যাত্রায় বাধার সম্মুখীন হয়।শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, অপরাজনীতি, শিক্ষকদের রাজনীতিসহ নানাবিধ কারণে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছাত্রাবস্থায় মেধাবীদের এক বিশাল অংশ বিদেশে যাওয়ার চেষ্টায় থাকে। একসময় তারা চলেও যায়। এতে করে তারা শুধু বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে তা-ই নয়, সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে অপার সম্ভাবনাময় মেধাও

২১ নভেম্বর ২০২২

মার্লো বার্কলের স্বাক্ষাৎকার

0

১৩ বছর বয়সী মার্লো বার্কলের জন্ম ১৮ নভেম্বর ২০০৮ ক্যালিফোর্নিয়াতে। ছোটবেলা থেকেই সে ক্যালিফোর্নিয়ার মনরোভিয়ার একটি থিয়েটারে অভিনয় শুরু করে যা তাকে জাতীয় টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে কাজের ‍সুযোগ করে দেয় এবং ধীরে ধীরে সে হলিউড সিনেমায় জায়গা করে নেয়। সোশ্যাল মিডিয়া ইন্সটাগ্রামে সে বেশ জনপ্রিয়। এ বছর হলিউড নির্মিত তার অভিনীত দুটি মুভি রিলিজ হয়েছে যার মধ্যে একটি “স্পিরিটেড” এবং অন্যটি “স্ল্যাম্বারল্যান্ড”।গত ১৮ নভেম্বর তার ১৩ তম জন্মদিনেই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে তার নতুন মুভি “ স্লাম্বারল্যান্ড”।  কচিকাঁচার আসরের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এই কিশোরী অভিনেত্রীর স্বাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাজাফী।

প্রশ্নঃ কচিকাচার আসরের পক্ষ থেকে তোমাকে শুভেচ্ছা। আমরা যখন তোমার সাথে যোগাযোগ করলাম তখনো ভাবিনি তুমি আমাদেরকে সময় দিবে। তুমি কি এর আগে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে?

মার্লো বার্কলে: ধন্যবাদ তোমাকে। আমার অভিনীত নতুন মুভি রিলিজ নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম এবং পড়াশোনারও একটু চাপ ছিল। ফলে সময় মত রিপ্লাই দিতে পারিনি। তাছাড়া নিয়ম অনুযায়ি কিশোরী হওয়ায় বাবা মা সব দেখাশোনা করে। তারা যখন দেখলো বাংলাদেশ থেকে একটি বাংলা ভাষার পত্রিকা  আমার ইন্টারভিউ করবে তখন বেশ অবাক হলো। এতো দূরের একটি দেশের একটি জনপ্রিয় পত্রিকা আমার ইন্টারভিউ করবে ‍শুনে তারা যেমন আনন্দিত হলো আমিও আনন্দিত হলাম। এটি আমার জন্য সম্মানের বিষয়। এর আগে ওয়ার্ল্ডহিস্ট্রিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে জেনেছি তবে সেটা ততোটা নয়।

প্রশ্নঃ এই মুহুর্তে তোমার নতুন মুভি “স্লাম্বারল্যান্ড” নেটফ্লিক্সে ট্রেন্ডিং হিসেবে আছে। আর মজার বিষয় হলো মুভিটি রিলিজ হয়েছে তোমার জন্মদিনে! তোমার অনুভূতি জানতে চাই।

মার্লো বার্কলে: আমার ১৩ তম জন্মদিনের সেরা উপহার ছিল মুভিটি রিলিজ হওয়া। এটি একটি স্বপ্নের মত মুভি। এই মুভিটি বিশ্বব্যাপী দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। জন্মদিনে মুভি রিলিজ হওয়ার মত এক্সাইটিং আর কোনো বিষয় থাকে না। বাবা মা পরিবারের সবাইকে নিয়ে মুভিটি দেখার যে অভিজ্ঞতা সত্যিই মুগ্ধকর। বন্ধুরাও মুভিটি দেখে উচ্ছসিত প্রশংসা করেছে।

প্রশ্ন: তোমার কি মনে আছে কবে তুমি অভিনেতা হতে চেয়েছিলে? এবং অভিনেতা হতে চাওয়ার মূল কারণ কি ছিল? কারো অভিনয় দেখে অভিনেতা হতে চেয়েছিলে?

মার্লো বার্কলে:  এই প্রশ্নটি আমার খুব ভালো লাগে। আমার বেশ মনে আছে আমি আমার বোনের সাথে গান করতাম। তখনো কিন্তু অভিনেতা হবো ভাবিনি। এরকম সময়ে একজন এজেন্ট আমাদের সাথে যোগাযোগ করলেন একটি অডিশনের জন্য। সেটা ছিল হলিউড নির্মিত সিঙ্গেল প্যারেন্টস মুভির অডিশন। আমি ও আমার বোন গেলাম। আমি ভাবিনি যে আমাকে ওরা নির্বাচিত করবে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ওরা আমাকে নির্বাচিত করলো। এটা ছিল আমার জীবনের প্রথম বড় প্রজেক্ট। যা শেষ করতে দুই বছর লেগেছিল।

প্রশ্ন: তোমার প্রিয় মিউজিক্যাল শো কোনটি? তুমি ব্রডওয়েতে কোন বাদ্যযন্ত্রে থাকতে চাও?

মার্লো বার্কলে: আমি বিটলজুইস করতে পছন্দ করবো। আমি মনে করি লিডিয়া চরিত্রে অভিনয় করা অনেক মজার হবে—বিটলজুইস-এ যে কোনো ভূমিকাই আশ্চর্যজনক হবে কারণ এটি একটি মজার মিউজিক্যাল শো।

প্রশ্ন: এবার জানতে চাই ক্রিস্টমাস স্টোরি বেসড মুভি “স্পিরিটেড” এ কাজ করার বিষয়ে। এটি একই সাথে একটি মিউজিক্যাল মুভি। এমন মুভিতে কাজ করার আগ্রহ হলো কিভাবে?

মার্লো বার্কলে: আমি আসলে ছোটবেলা থেকেই ক্রিস্টমাস মুভির ভক্ত। পাশাপাশি এটি একটি মিউজিক্যাল মুভি। আমি যখন দেখলাম এই মুভিতে  উইল ফেরেল আর রায়ান রেনল্ডসের মত বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী কাজ করছে তখন স্বাভাবিক ভাবেই আগ্রহী হয়ে উঠি। কারণ আমি জানি ক্রিস্টমাস রিলেটেড মুভি পরিবারের সবাই মিলে দেখে এবং রায়ান আর উইল ফেরেলের বিশ্বব্যাপী অনেক ফ্যানস থাকায় সহজে তাদের কাছে পরিচিত হওয়া যাবে। তাদের সাথে কাজ করাটা নিঃসন্দেহে দারুণ ব্যাপার। তারপর আমি স্ক্রিপ্ট পড়ে নিজেই নিজেকে বললাম “ ওহ এটাতো দারুন একটি গল্প, আমাকে এ গল্পে অভিনয় করতেই হবে। বিশেষ করে যখন আমি দেখলাম আমাকে ভিন্ন ভিন্ন দুটি চরিত্রে অভিনয় করা লাগছে”। 

প্রশ্নঃ শুটিং সেটে বড়দের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা জানতে চাই। বড়দের সাথে কাজ করতে গিয়ে কি কোনো অসুবিধা হয়?

মার্লো বার্কলে: তোমাকে সত্যি বলছি আমার না ছোটদের থেকে বড়দের সাথে অভিনয় করতে বেশি ভালো লাগে। কারণ এর ফলে আমি খুব দ্রুত ম্যচিউরিটি লাভ করি। ছোটদের সাথে অভিনয় করার সময় সবাই আমাকে বাচ্চা বাচ্চা বলে ডাকে কিন্তু বড়দের সাথে কাজ করতে গিয়ে এমনটি হয় না কারণ পুরো সেটে বাচ্চা আমি একাই। আমি তাদের সাথে খুব ভালোভাবে মিশে যেতে পারি। আমার মনে হয় কিশোরী হিসেবে ছোটদের সাথে অভিনয় করার চেয়ে বড়দের সাথে অভিনয় করাটা বেশি সহজ।

প্রশ্ন: তোমার অভিনীত “স্পিরিটেড” এবং “স্লাম্বারল্যান্ড” মুভির গল্পে ক্ষতির সাথে মোকাবেলার যে প্লট তা প্রায় কাছাকাছি। যদিও তোমার  ক্যারেক্টার ভিন্ন ভিন্ন এবং মুভিতে সিংহভাগ সময় তোমাকে দেখা গেছে। কোন মুভিটি তোমার বেশি ভালো লেগেছে এবং এই ধরনের প্লটে একাধিক মুভিতে কাজ করার বিষয়ে তোমার মতামত কী?

মার্লো বার্কলে: রিলিজের পর দুটি ‍মুভিই আমি মনোযোগ গিয়ে দেখেছি। বিশেষ করে স্ল্যাম্বারল্যান্ড মুভিটি বেশি ভালো লেগেছে। এই সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। মুভিতে যে এক্সাইটিং দৃশ্যগুলো দেখে সবাই শিউরে উঠছে বাস্তবে তা শুটিং হয়েছে ঘরের মধ্যে মানে গ্রীনস্ক্রিনে! ভিএফএক্স এমন ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যে মুভিতে নিজের দৃশ্যগুলো দেখে নিজেই শিউরে উঠেছি। অভিয়াসলি দুটি মুভিই মজার। তবে স্ল্যাম্বারল্যান্ড বেশি ভালো লেগেছে। এই মুভির ক্যারেক্টারটি ছিল চ্যালেঞ্জিং। এই ধরনের মুভিতে কাজ করতে আমার খুবই ভালো লাগে।

প্রশ্ন: মুভিতে ক্রিস ওডউড, জেসন মামোয়া এবং তোমাকে প্রথম সিলেক্ট করা হয়েছিল বলে জানি। সে ক্ষেত্রে তোমরা কি পারস্পারিক বুঝাপড়ার জন্য প্র্যাকটিস করেছিলে? যাকে বলে গ্রুমিং?

মার্লো বার্কলে:  আমি জেসনের সাথে বুঝাপড়ার জন্য কিছু কাজ করেছিলাম তবে ক্রিসের সাথে করিনি। আমি আর ক্রিস সরাসরি সেটে শ্যুট করেছি কোনোরকম প্র্যাকটিস ছাড়াই যদিও তা ছিল কিছুটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তবে ভাবিনি কোনোরকম প্র্যাকটিস ছাড়াই সিন গুলো এতোটা ভালো হবে। আর জেসনের সাথে আমি জুমে মিটিং করেছিলাম। আর সত্যি বলতে জুম মিটিংয়ের শুরুতে আমি ভীষণ নার্ভাস ছিলাম কারণ সেটা ছিল তার সাথে আমার প্রথম মিটিং।  কিন্তু সেরা মানুষগুলো এমনই হয় যে তারা আমাকে খুব সহজে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। আমরা শুটিংয়ের সময় অনেক মজা পেয়েছি কারণ রোল প্লে করার মাঝে হাঠৎ করে তার কুকুর ডেকে উঠতো আর তিনি সব ছেড়ে তাকে থামাতে এগিয়ে যেতেন। তার সাথে অভিনয় করতে গিয়ে আমার সব স্ট্রেস নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায়। আমি তার থেকে অনেক কিছু শিখেছি।

প্রশ্ন: স্ল্যাম্বারল্যান্ড মুভিতে তোমাকে চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যেতে দেখেছি। মনেই হয়নি ওটা সিনেমা। মনে হয়েছে বাস্তবেই নিমোকে সাগরের মধ্যে থাকা একটি লাইটহাউজে দেখছি। এই ধরনের কম্প্লেক্স ক্যারেক্টার কেন বেছে নিলে ?

মার্লো বার্কলে: স্ল্যাম্বারল্যান্ডের জন্য আমি প্রথমে অডিশন দিই। আমাকে স্ক্রিপ্ট পড়তে দেওয়া হয়। আমি স্ক্রিপ্ট পড়ে এতোটা মুগ্ধ হই যে পরিচালক ফ্রান্সিস লরেন্সকে আমি অডিশন চলাকালিন সময়েই বলি যে আমি যদি এই চরিত্রটি নাও পাই বা আমাকে নির্বাচিত নাও করা হয় তবুও আমি মুভিটি দেখবো। কারণ আমি দেখলাম নিমো চরিত্রটির সাথে আমি ভীষণ ভাবে কানেক্টেড হয়ে গেছি বিশেষ করে তার জীবনে আগত ঘটনাগুলি আমাকে স্পর্শ করেছে। পরবর্তীতে আমি যখন এই চরিত্রে অভিনয় করি তখন মনে হয়েছিল যেন আমার নিজের জীবনের গল্প এটা। আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন সত্যি সত্যিই নিমোর সাথে ভ্রমন করছি বিচিত্র জগতে। এই মুভি থেকে আমি বাস্তব জীবনের জন্য যে উপলব্ধিটি পেয়েছি তা হলে ধৈর্য ধরতে হবে। এবং চারপাশ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

প্রশ্ন: আমরা দেখেছি স্ল্যাম্বারল্যান্ড মুভিতে তুমি দীর্ঘ সময় পানির নিচেয় অবস্থান করেছ। অনুমান করছি এগুলোর সবই ছিল সিজিআই এবং স্পেশাল ইফেক্ট। ঠিক কি না? এরকম কাল্পনিক গল্পে অভিনয় করতে কেমন লাগে?

মার্লো বার্কলে: সত্যি বলতে এটা একধরনের পাগলামীর মত মনে হয়। কখনো ভীষণ রোমাঞ্চকর আবার কখনো আতঙ্কের। তবে সব সময় স্ট্যান্ট করা বা এই ধরনের কাজ করার স্বপ্ন ছিল আমার। তাছাড়া পানির সিনগুলোর জন্য আমি দীর্ঘ সময় সুইমিং পুলে অবস্থান করেছি। সেটাও ছিল মজার অনুভূতি। কাল্পনিক চরিত্রে অভিনয় করা রোমাঞ্চকর বিষয়। বিশেষ করে মুভি রিলিজ হওয়ার পর নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য লাগে। বন্ধুরাও ভীষণ এক্সাইটেড থাকে।

প্রশ্ন: সত্যিই দারুণ বিষয়। আমরা কিন্তু ভাবিনি যে পানির দৃশ্যগুলোর জন্য তোমাকে পানিতে থাকতে হয়েছে। আমরা ভেবেছি ওটা স্পেশাল ইফেক্ট ছিল।

মার্লো বার্কলে: এটা সত্যি। তবে আমার সেটে কলাকুশলীরা ছিল দারুণ শান্ত। এমনকি তারা মাঝেমাঝেই আমাকে বলতো যদি তোমার ব্রেক নেওয়ার দরকার হয় তবে তুমি রেস্ট নিতে পারো। ফলে আমি বেশ ভালো অনুভব করেছি। এই সিনগুলোর মধ্যে মাত্র একটিতে অভিনয় করতে গিয়ে আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম আর সেটা হলো যখন আমি নৌকা থেকে পড়ে গেলাম এবং ডুবে গেলাম পানির নিচে।। সেই ‍দৃশ্যের জন্য আমি অনেক বার প্র্যাকটিস করেছি। আমার বার বার মনে হচ্ছিল আমি পারবো না। আমি সেটা বলেছিলাম তাদেরকে। আমার স্ট্যান্ট সুপারভাইজার গুইলিয়ানো আমার কাছে আসলেন এবং বললেন তুমি চিন্তা করো না  তুমি অবশ্যই পারবে। আমি তোমাকে দেখিয়ে দিচ্ছি। তারপর তিনি প্র্যাকটিক্যালি আমাকে স্টেপ বাই স্টেপ করে দেখালেন। এবং তখন বিষয়টা আমার কাছে খুবই ইজি হয়ে গেল।

প্রশ্ন: আমরা তোমার অভিনয়ের মুগ্ধতায় ভাসছি। এটিই সিনেমার যাদু। তোমার এখন অনেক ধরনের অভিনয় এক্সপেরিয়েন্স আছে। তুমি একজন মাল্টি ট্যালেন্টেড অভিনেতা। তোমার কাছে জানতে চাই পরবর্তীতে তুমি কোন ধরনের মুভিতে অভিনয় করতে চাও? কেমন চরিত্র চাও তুমি?

মার্লো বার্কলে: সত্যি বলতে আমি হরর মুভিতে অভিনয় করতে চাই। যদিও আমি একটা ভিতু বিড়াল। আমি মোটেও হরর মুভি দেখতে পারি না। ভয়ের সিনেমা আমাকে সন্ত্রস্ত করে রাখে যদি না অনেক গুলো ভালো মানুষ আমার সাথে থাকে। তার পরও কিন্তু আমি হরর মুভিতে কাজ করতে চাই যেখানে সুপার গ্রাফিক্স থাকবে,মজার সব মেকাপ থাকবে। এমনকি আমি ফাইটিং সিনেও অভিনয় করতে চাই যেখানে মারামারি করতে গিয়ে আমার নাক দিয়ে রক্ত বের হবে, বড় রকম আঘাতপ্রাপ্ত হবো বা আমি খুন হয়ে যাবো। আমার মনে হয় এটি হলে দারুণ হবে। কারণ আমার খুব দেখার ইচ্ছে এই ধরনের সিনগুলোর ব্যাকস্টেজ কাজগুলো কেমন হয়?

প্রশ্ন: মেকাপ বিষয়ে যেহেতু বললে তাহলে এ নিয়ে তোমাকে প্রশ্ন করি। লসঅ্যাঞ্জেলসে স্লাম্বারল্যান্ড মুভির প্রিমিয়ারে আমরা দেখেছি তুমি খুবই সুন্দর আর মিষ্টি একটি মেয়ে। তুমিকি বলবে যে তুমি বিউটি এবং ফ্যাশন বিষয়ে খুবই সচেতন ভাবে পদক্ষেপ ফেলো?

মার্লো বার্কলে: সম্ভবত এক কি দুই বছর আগের কথা আমি বলেছিলাম আমি মেকাপ সচেতন মানুষ। দুই বছর আগে যে পোশাক আমি পরতাম এখন সেগুলো দেখলে ভাবি হায় আমি এগুলো পরতাম! আমাকে নিশ্চই পাগলের মত দেখাতো! বর্তমানে আমি খুবই ফ্যাশন সচেতন। তবে সব সময়ই আমি গ্ল্যামরাস লাইফ পছন্দ করি। আমি মেকাপ করার সময় খুবই উপভোগ করি। বিশেষ করে কিভাবে নিজেকে আরও সুন্দর আর মুগ্ধকর রুপে উপস্থাপন করা যায় সেই প্রক্রিয়াটা আমার ভালো লাগে। মেকাপের পর নিজেকে আরো গর্জিয়াস মনে হয়।

প্রশ্ন: আমরা স্ল্যাম্বারল্যান্ড সিনেমায় নিমো চরিত্রে তোমাকে সত্যিকার অর্থেই একজন ১২ বছর বয়সী বাচ্চা হিসেবে দেখেছি। কিন্তু সিনেমার প্রিমিয়ার শোতে তোমাকে বেশ বড় মনে হয়েছে। তুমিকি নিজ থেকেই প্রেসের সামনে অপেক্ষাকৃত বড় হিসেবে প্রকাশ করতে চেয়েছ? ওরকম একটি কালারফুল মোমেন্ট তোমার কেমন লেগেছে?

মার্লো বার্কলে: আমি এখনো একজন কিশোরী। আমার বয়স মাত্র তের বছর এবং আমি এখনো ইয়াং। তবে আমি কিন্তু খুব বেশি ছোট নই। আমি নিজেকে ম্যাচিউরড মনে করি এবং মানুষকে তা দেখাতে চাই। এটি এমন একটি অনুভূতি যা তুমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না।

প্রশ্ন: তাহলে তোমার পরবর্তী লক্ষ্য কী? কবে নতুন কাজে ফিরবে?

মার্লো বার্কলে: ওয়েল, আমি অলরেডি নতুন একটি শোতে যুক্ত হয়েছি যার নাম  “ টাইনি বিউটিফুল থিংস”। এই সিরিজে আমি বেশ কয়েকটি এপিসোডে আছি যেখানে আমি কার্থি হানের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছি। তবে আমার বন্ধুরা এটি দেখতে পারবে না কারণ এটি ছোটদের জন্য নির্মিত নয়। যদিও এটি ছোটদের জন্য নির্মিত নয় তবু্ও এটির অংশ হতে পারাটা দারুণ ব্যাপার। সুতরাং আমি এক্সাইটেড এই সিরিজটি কেমন হবে সেটা দেখার জন্য। এছাড়াও আমার নানা জায়গায় অডিশন চলছে এবং খুশির খবর হলো “ স্ল্যাম্বারল্যান্ড-২” আসবে শিঘ্রই। তবে তা নিয়ে এই মুহুর্তে কিছু বলতে পারবো না।

কচিকাচার আসর: ধন্যবাদ মার্লো। আগামীতে আরও অসাধারণ সব মুভিতে তোমাকে দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।

২৭ নভেম্বর ২০২২

আট বছর বয়সী চাওয়ালা বনাম সুঠামদেহী নিরাপত্তারক্ষির গল্প

0
কক্সবাজারে ৪০ বছর বয়সী একজনের সাথে পরিচয় হয়েছিল। শরীর স্বাস্থ্য যথেষ্ট ভালো। পাশাপাশি কুরআনের হাফেজ। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তারক্ষি হিসেবে চাকরি করেন। বেতন সর্ব সাকুল্যে ৬৫০০ টাকা।তবুও মানুষটি বেশ হাসিখুশি। এই পরিমান বেতন পেয়েও যেন তার কোনো ভাবান্তর নেই। যেন বেশ সুখী জীবনযাপন করছেন। তার বেতনের পরিমান শুনে প্রথমেই আমার মনের মধ্যে যে প্রশ্নটি উকি দিয়েছিল সেটা হলো পরিবার নিয়ে এই বেতনে কিভাবে সংসার চালানো সম্ভব। পরে জানতে পারলাম এর পাশাপাশি তিনি দুই তিনটা টিউশনী করেন। আরবী পড়ান। তাতে আর কতইবা আয় হয়। হয়তো আরও হাজার তিনেক বা চারেক টাকা পান। সব মিলিয়ে তার আয় কোনো ভাবেই ৯ হাজার ছাড়াতে পারেনি। বাড়িতে দুধের বাচ্চা আছে। পরিবারে লোক সংখ্যা চারজন। বাসা ভাড়া,বাচ্চাদের খাবার কেনা,নিজেদের খাবার কেনা সব মিলিয়ে চারজনের সংসার ৭/৮ হাজার টাকায় চালানোর মানে হলো একটা অসম্ভবকে সম্ভব করা। তারপরও বেশ ভালোই চলছিল।
হঠাৎ একদিন দেখি লোকটা হাউমাউ করে কাঁদছে। কারণ জানতে চাইলে বুঝলাম কিছুদিন আগে মাসের বেতন হওয়ার পর রাগ করে চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এখন সংসার চলছে না,বাচ্চাটা অসুস্থ্য। তাই তিনি আগের প্রতিষ্ঠানে গিয়েছেন চাকরিটা যেন তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অফিস তার কথা আমলে নেয়নি। কেন আমলে নেয়নি সেটাও বুঝলাম। সে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সময় কিছুই বলেনি।অফিসের বস তাকে কিছু প্রশ্ন করেছিল ডিউটিতে অনুপস্থিত থাকা বা হাজিরা দিয়ে চলে যাওয়া বিষয়ে যা সিসিক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে। সে সম্পর্কে সে আশানুরুপ জবাব দিতে পারেনি ফলে অফিস থেকে বেশ কথা শোনানো হয়েছে বলে সে হুট করে রাগ করে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। এখন পড়েছে মহা বিপদে। অথচ এমন ক্ষেত্রে তার উচিত ছিলো চাকরি ছেড়ে না দিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে আগামীতে এমন হবে না মর্মে কথা দেওয়া। অথবা চাকরি ছেড়ে দিয়ে ওই অফিস মুখো না হয়ে নতুন কিছু জুটিয়ে নেওয়া। তাহলে আজকে তার এমন হাউমাউ করে কাঁদা লাগতো না।
এবার মূল কথায় আসি। তার মত শক্তিশালী একজন মানুষ কেন কক্সবাজারের মত একটি জায়গায় জন্ম নিয়ে, বেড়ে উঠে ৬৫০০ টাকা বেতনের চাকরি করবে? এই পরিমান টাকাতো সে চাইলে অনায়াসেই ইনকাম করতে পারে। কক্সবাজারে ১০ হাজার টাকা হেসে খেলেই আয় করা যায় বলে আমি অন্তত মনে করি। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি,লাখ টাকা পুজি এর কোনো কিছুরই দরকার নেই। সেই বিষয়ে বলার আগে ওই নিরাপত্তারক্ষির ডিউটি টাইম সম্পর্কে একটু বলি। একজন নিরাপত্তারক্ষি হিসেবে সে যেখানে চাকরি করতো সেখানে তাকে তিনটি আলাদা আলাদা শিফটে ডিউটি করতে হতো। কখনো সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পযর্ন্ত আবার কখনো দুপুর দুইটা থেকে রাত দশটা পযর্ন্ত এবং তৃতীয় আরেকটি শিফট শুরু হয় রাত দশটা থেকে সকাল ছয়টা পযর্ন্ত। সকালে এবং দুপুরের শিফট মোটামুটি সুবিধাজনক কারণ তখন অফিসের ভিতরে এসির মধ্যে থাকার সুযোগ আছে। কিন্তু রাত দশটার পর যে শিফট শুরু হয় সেই সময় থেকে সারা রাত তালাবদ্ধ অফিসের বাইরে শাটারের সামনে বসে থাকতে হয়। গরম,মশার কামড় আর ঘুমানোর তেমন কোনো সুযোগ থাকে না। এতো কষ্ট সহ্য করেই শেষ নয় বরং ঈদ বা অন্যান্য দিনেও তাদের কোনো রকম ছুটি নেই,কোনো রকম ওভারটাইম নেই,কোনো রকম ঈদ বোনাস নেই। তার পরও তাকে কেন এই চাকরিটাই করতে হবে আমার মাথায় আসে না। কক্সবাজার না হয়ে অন্য কোথাও হলে আলাদা কথা ছিলো। তাছাড়াও তার মত শক্তসমর্থ যুবক না হয়ে অন্য কেউ হলেও কথা ছিলো।
আমি যেহেতু রেগুলার বীচে হাটাহাটি করি তাই বিভিন্ন ছোট ছোট ব্যবসায় নিয়োজিতদের কাছ থেকে দেখি এবং তাদের সাথে গল্পও করি। মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে শুরু করে ষাট বছরের বৃদ্ধ মানুষও আছে যারা বীচ কেন্দ্রিক ব্যবসার পসরা সাজিয়েছে। এই ব্যবসার জন্য লাখ লাখ টাকা পুজির দরকার নেই। খেয়াল খুশি মত ব্যবসা করলেও মাসে ১০/১৫ হাজার টাকা আয় হয়। বীচ কেন্দ্রিক বেশ কিছু দোকান আছে যেখান থেকে ওরা পানি,চিপ্স,জুস,সিগারেট এটা সেটা নিয়ে বিক্রি করে। একটি পানি ১৫ টাকা দিয়ে কিনে ২০ টাকায় বিক্রি করে। লাভ ৫ টাকা। ৪০টা পানি বিক্রি করলেও ২০০ টাকা লাভ। বলা চলে বিনা পুজিতেই এই দুইশো টাকা লাভ। কারণ বেশ কিছু দোকান আছে যারা কোনো রকম সিকিউরিটি মানি ছাড়াই ভ্রাম্যমান হকারদের এই সব পণ্য দিয়ে থাকে। বেচাবিক্রির পর তাদেরকে টাকাটা দিলেই হয়। এর বাইরে ঝাল মুড়ি, বাদাম,কাঁচা আম,আমড়া,পেয়ারা,চা,কফিও বিক্রি করা যায়। বিশেষ করে খাবার আইটেম সব সময়ই বিক্রি হয়। এগুলোর যে কোনোটার ব্যবসাই করা যায় এবং পুজি এক দুই হাজার টাকা হলেই হয়। যে মানুষটির কথা উল্লেখ করেছি তাকে আমি প্রথম যখন পরিচয় হয়েছিল এই সব কথা বলেছিলাম কিন্তু কেন জানি না এগুলো সে আমলে নেয়নি।
গতকাল সন্ধ্যার পর সায়মন বীচ রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে বীচে নামতেই আবছা অন্ধকারে দেখলাম একটা আট বছর বয়সী ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে। দেখেই বুঝলাম সে কফি বিক্রি করে। আশেপাশে কেউ নেই। এগিয়ে গিয়ে বললাম কেমন আছো তুমি? ব্যবসা কেমন চলছে। এরকম আরও কিছু কথা হলো। তার থেকে জানতে পারলাম সে রোজ এক থেকে দেড় হাজার টাকার কফি বিক্রি করে। বিকেলে বেরিয়ে রাত দশটা বারটা পযর্ন্ত বিক্রি করে। এতে তার ৭০ শতাংশ লাভ থাকে। মানে এক হাজার বিক্রি করলে সাতশো টাকা লাভ। মাসে ২১ হাজার টাকা আয়! একটা ছোট্ট বাচ্চা সে কফি বিক্রি করে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছে অথচ শক্তসমর্থ এক যুবক যে কোনো ছুটি নেই,ঘুমানোর ব্যবস্থা নেই,কোনো আরাম নেই রোজ আট ঘন্টা ডিউটি করে বেতন পাচ্ছে মাত্র সাড়ে ছয় হাজার টাকা। এই মানুষদের কেন আক্কেল হয় না? পরে বুঝলাম তারা নাকি আত্মসম্মানের কারণে ওই সব বীচ কেন্দ্রিক ব্যবসা করতে পারে না। আমার বুঝে আসে না যে নিরাপত্তারক্ষির চাকরিতে আত্মসম্মান যায় না কিন্তু বীচকেন্দ্রিক ব্যবসা করলে আত্মসম্মান যায়! অথচ পান বিক্রি করলে,ঝাল মুড়ি বিক্রি করলে,বাদাম বিক্রি করলে বা চা কফি বিক্রি করলে সে ঘুরে বেড়াতে পারতো, পরিবারকে যথেষ্ট সময় দিতে পারতো, রাতে আরাম করে ঘুমাতে পারতো। মাঝে মাঝে চাইলেই এক দুদিন কাজ না করে ঘরে বসে থাকতে পারতো। এতো সব করেও তার আয় হতো অনেক অনেক বেশি।
এই যে এরা চাকরি ছেড়ে দিয়ে সংসার চালাতে না পেরে আবার সেই একই অফিসে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে সাড়ে ছয় হাজার টাকার চাকরিটা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে এটাই আমার কাছে আশ্চর্যের বিষয় লাগে। যদি অনেক বেতন হতো,প্রেস্টিজিয়াস চাকরি হতো, উচ্চ শিক্ষিত হতো তাহলে আলাদা বিষয় ছিলো। কিন্তু সে যে চাকরির জন্য কান্নাকাটি করছে তাতে না আছে তেমন সম্মান, না আছে বেতন, না আছে সুখ। আপনারা যারা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গিয়েছেন তারা নিশ্চই দেখেছেন ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কেমন ব্যবসা করছে। তারা বুঝলেও এই মানুষগুলো বুঝতে পারে না। টাকা আয়ের জন্য সৎ পথে পরিশ্রম করে আয় করার মানসিকতা থাকতে হবে। তবেই সুখ আসবে। এই মানুষটি সহ আরও যারা আছে তারা অনায়াসেই নিজেদের ভাগ্যের চাকা আগের তুলনায় ঘুরিয়ে নিতে পারে বিশেষ করে বীচ কেন্দ্রিক ব্যবসা করে।
আমার এই অংশের লেখা তাদের জন্য যারা মোটামুটি একটা চাকরির আশায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় ছুটে যাচ্ছে এবং গার্মেন্টস বা নিরাপত্তারক্ষি কিংবা ছোট খাটো চাকরির আশায় বসে আছে তাদের উচিত ঢাকার দিকে ছুটে না গিয়ে কক্সবাজার চলে যান। ওখানে একটা বাসা নিন তার পর চা,কফি,চিপ্স,আমড়া,পেয়ারা এসবের যে কোনোটা নিয়ে নেমে পড়ুন। ইনশা আল্লাহ একদম প্রথম দিনেই আপনি লাভবান হবেন। আপনি যে অল্প বেতনের চাকরির জন্য ঢাকায় যাচ্ছেন সেই চাকরিটা পেলেও বেতন এক মাস পরে হাতে পাবেন। কিন্তু এখানে প্রথম দিনই আপনি লাভের মুখ দেখবেন। আমার এই লেখাটি যারা পড়ছেন তাদের মধ্যে যারা অল্প শিক্ষিত কিংবা কর্মসংস্থান না থাকায় পরিবারের বোঝা হয়ে উঠেছেন,হতাশ হচ্ছেন তারা ৫/৬ হাজার টাকা যোগাড় করে কক্সবাজার চলে আসুন। বাস থেকে নেমেই আপনার ভাগ্য পরীক্ষায় নেমে পড়ুন। পেটে ভাত না থাকলে যাদের সামনে মানসম্মান নিয়ে চিন্তিত তারা কেউ এসে ভাত কাপড় দিবে না। এখানে অনেক কিছুই বিক্রি করা যায় এবং বেশ ভালো প্রফিট করা সম্ভব। হতাশ না হয়ে নিজের ভাগ্যটা একবার পরীক্ষা করে দেখুন।
যে সব জিনিস বিক্রি করা যেতে পারে এবং যা থেকে অতি অবশ্যই লাভ হবে।
কলা ( বদর মোকাম মসজিদের পাশের গালিতে কলার আড়ৎ আছে। যেখান থেকে মোটামুটি দামে কলা কিনতে পারবেন এবং বীচে বা শহরে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতে পারবেন)
পানি,চিপ্স,বিস্কুট,জুস,সিগারেট ( লাবণী পয়েন্টের ওখানে গিয়ে যে কাউকে বলবেন মাটির দোকান কোনটা। দেখিয়ে দেবে। মাটি ভাইয়ের দোকান থেকে এই সব পণ্য আপনি নিতে পারবেন এবং বিক্রি করতে পারবেন)
দই ( ছোট ছোট কাপ দই ঝাকায় করে বীচে বিক্রি হয়। প্লাস্টিকের কাপ ২০ টাকা আর মাটির কাপ ২৫/৩০ টাকায় বিক্রি হয়। কেনা দাম পড়বে ১৫ টাকা। প্রতিদিন মিনিমাম ১০০ কাপ বিক্রি করতে পারবেন এবং তাও কয়েক ঘন্টা সময় নিলেই)।
হেয়ার ব্যান্ড ( বীচে দেখবেন মেয়েদের জন্য লাইট জ্বলে এমন হেয়ার ব্যান্ড বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ১০০ টাকা দামে। বাজারঘাটা থেকে ওগুলো পাইকারি ৪০ টাকা দিয়ে কিনতে পারবেন। অন্যরা ১০০ করে বিক্রি করছে আপনি ৬০ টাকা লাভ না করে ২০ টাকা লাভের চিন্তা নিয়ে ক্রেতা কেমন দাম দিতে চায় সেটা বিবেচনা করে বিক্রি করতে পারবেন। যারা ১০০ করে বিক্রি করছে তারাতো আর আপনাকে পাহারা দিচ্ছে না যে আপনি কত বিক্রি করছেন। দাম চাবেন ১০০ টাকা। কেউ যদি ৭০ টাকা দাম বলে তাও দিয়ে দিন। তবুওতো আপনার লাভ হবে ৩০ টাকা! ভাবা যায়? যদি ২০ টা বিক্রি করতে পারেন তাও নীট প্রফিট ৬০০ টাকা। মাসে ১৮ হাজার টাকা। সাথে বীচে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দতো থাকলোই)।
কাঁচা আম,পেয়ারা,বাদাম ( এগুলো সবই বাজারঘাটা থেকে কিনতে পারবেন)
চা,কফি ( একটা ফ্ল্যাক্স কিনবেন, পানি চাইলে নিজে বাসা থেকে গরম করতে পারেন আবার চাইলে গরম পানি কিনেও নিতে পারবেন। এক প্যাকেট ১০ টাকা দামের নেসক্যাফে কফি দিয়ে আপনি অনায়াসে দুটো কফি বানাতে পারবেন। ওরা অবশ্য পাঁচটাকা দামের প্যাকেট দিয়ে একটা বানায়। সাথে দুধ চিনি। বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে। আপনি ৩০০ টাকার দুধ,চিনি,কফি,গরম পানি নিয়ে বের হলে দিন থেকে নিশ্চিত আপনার পুজির ওই তিনশো টাকার বাইরে আরও ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করে ঘরে ফিরতে পারবেন)।
পুথি,মালা,ঝিনুক ( এগুলোর ব্যবসায় না নামাই ভালো কারণ এগুলো মানুষ হাটতে হাটতে কেনে না বরং দোকান থেকেই কিনতে পছন্দ করে)।
হাত পা মেসেজ করা ( আমি দেখেছি একদল ছোট ছোট ছেলে মেয়ে পর্যটকদের হাত,পা,মাথা মেসেজ করে দিয়েও বেশ ভালো টাকা আয় করছে)
গান শুনিয়ে ( একদল ছোট ছোট ছেলে মেয়ে পর্যটকদের গান শুনিয়েও আয় করছে)
এই দেশে একাধিক বার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে,পত্রিকায় প্রতিবেদন হয়েছে এমন কিছু হকারের যারা স্মার্ট পোশাক পরে হকার হিসেবে ব্যবসা করছে। এটা একটা পজিটিভ দিক। সাধারণত হকার শ্রেণীর মানুষেরা খুব সাধারণ পোশাক পরে। কেউ যদি এই ধারার বাইরে গিয়ে একই পেশায় নিয়োজিত হয় তবে অন্যদের তুলনায় সে অধিক লাভবান হয় বা অধিক কাস্টমার পায়। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত শুধু ঘুরে বেড়ানোর জন্যই সুন্দর নয় বরং ছোট ছোট ব্যবসার জন্যও দারুন একটি স্থান। ঘরে বসে হতাশ না হয়ে আমার কথা মত এখানে এসে একবার ভাগ্যপরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আশা করি সুফল পাবেন।
লজ্জার কিছু নেই।
খোদ আমেরিকার তৎকালিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মেয়ে মালিয়া নিজেও তার অবসর সময়ে লাইব্রেরীতে,রেস্টুরেন্টে কাজ করে আয় করতো,অভিজ্ঞতা অর্জন করতো। সেই তুলনায় আমার আপনার বাবা প্রেসিডেন্টতো দূরের কথা ওয়ার্ড কাউন্সিলরও না। অবশ্য অন্য দেশের প্রেসিডেন্টের তুলনায় আমার দেশের ওয়ার্ড কাউন্সিলররা বেশি সাবলম্বি। এর আগে কোনো এক দেশের প্রধানমন্ত্রী তার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন বেতনের টাকায় সংসার চলছে না এই অভিযোগে। সারা বিশ্বেই যা নিউজ হয়েছিল। আমাদের দেশে অবশ্য সেই সুযোগ নেই। ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও এতো টাকার মালিক যে আলিশান বাড়ি,দামী গাড়ি তাদের কাছে নস্যি ব্যপার। যাই হোক অল দ্য বেস্ট। আমি কিন্তু এখনো উপার্জনের দ্বিতীয়,তৃতীয় এমনকি চতুর্থ কোনো ওয়ে থাকলে সেটাও গ্রহণ করতে চেষ্টা করি,যদি সেটা সৎ পথ হয়। এমনকি এই যে আমি ভালো বাংলা টাইপ করতে পারি উপযুক্ত সম্মানি পেলে আমি যে কারো বাংলা টাইপ করে দিতেও রাজি আছি। বসে বসে বেহুদা ফেসবুকে সময় নষ্ট করার বদলে যদি কারো বাংলা টাইপ করে এক দুশো টাকা পাওয়া যায় সেওবা মন্দ কী? আমার অবশ্য এই অভিজ্ঞতা বেশ পূরোনো।শুধু একটি প্রথম শ্রেণীর পত্রিকার জন্য খেটে খুটে কিছু কাজ করে দিই কোনো রকম সম্মানি ছাড়াই। তাদের উচিত ছিলো কিছু সম্মানি দেওয়া। সম্পাদককে ভালোবাসি এবং প্রিয় বিষয়ে কাজ বলেই বিনা পয়সায় ওটুকু করি। ৫ বছর ধরে করে দিচ্ছি। সবার সুন্দর আগামী প্রত্যাশা করছি। পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করুক।
-জাজাফী
৯ জুন ২০২২

একটি পান্ডুলিপি ও একজন অলেখক

0
বুঝলেন টাকা পয়সার কোন কমতি নেই আমার। সারা জীবনতো আর কম কামাই করিনি। ইংরেজরা এই দেশ থেকে সারা জীবন যতটা লুটেছে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি আমার একার উপার্জন। জীবনে অনেক ইচ্ছেও পুরণ করেছি টাকার বিনিময়ে।
রাতে খাবার খেতে বসে গিন্নি বললো তুমিতো আমার সব স্বপ্নই পুরণ করেছ একটা অন্যরকম ইচ্ছে পুরণ করবে? আমার না অনেক দিনের ইচ্ছে আমি লেখকের স্ত্রী হবো। বউয়ের কথা শুনে আমিতো থ!! কোটি কোটি টাকা তার হাতে তুলে দিয়েছি দেদারসে খরচ করার জন্য আর এখন সেই কী না লেখকের বউ হতে চায়!! শেষ বয়সে আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়! আমি বললাম তোমার কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে যে তুমি এই বয়সে লেখককে বিয়ে করবা আর আমাকে ডিভোর্স দিবা!
আমার কথা শুনে বউ বললো তওবা তওবা এ কী কথা বললে তুমি? আমি কোন দুঃখে তোমাকে তালাক দেবো আর সাহিত্যিককে বিয়ে করবো। জীবনে কোন দিন এতো প্যাচের কথা শুনিনি আজ বউয়ের প্যাচলাগানো কথায় আমি নিজেই ঢাকা শহরের বিদ্যুতের পিলারের প্যাচলাগা তারের মত প্যাচ খাচ্ছি। একবার সে বলছে লেখকের স্ত্রী হওয়ার সখ আবার বলছে কোন দুঃখে সে লেখককে বিয়ে করবে। আমি বললাম তাহলে তোমার লেখকের স্ত্রী হওয়ার সখ কীভাবে পুরণ হবে? বউ হেসে দিয়ে বললো আরে টাকা হলে হরিণের চোখ মেলে। শোনো প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির ৩০ তারিখে প্লুটোতে একটা মেলা হয়। সেখানে কবিতা,গল্প,উপন্যাসের পান্ডুলিপি বিক্রি হয়। বেশ অল্প দামেই কেনা যায়। লেখকরা বই লিখে সেটা প্রকাশকদের কাছে নিয়ে গেলে খুব কমজনই তা ছাপে। আর নিজের টাকায় বই ছেপে দেউলিয়া হওয়ার মত লেখকও কম। অন্যদিকে অনেকেরই টাকার অভাব নেই কিন্তু লেখক হওয়ার স্বপ্ন বা ইচ্ছে থাকলেও ক লিখতে কলম ভাঙে। এই দুই শ্রেণীর সুবিধার কথা বিবেচনা করে প্রতিবছর এই মেলাটা হয়। লেখকরা তাদের পান্ডুলিপি নিয়ে বসে থাকে আর যাদের লেখক হওয়ার সখ কিন্তু লিখতে পারেনা তারা আসে পান্ডুলিপি কিনতে।
বউয়ের কথা শুনে খুব মজা পেলাম। এমন মেলাও হয় নাকি!! আশ্চর্য আগে জানতাম নাতো। বউকে বললাম বিস্তারিত বলো। বউ বললো মেলায় পান্ডুলিপি নিয়ে লেখকরা বসে থাকে বিক্রির আশায়। অনেকটা লাউ কদু বিক্রির মত। ক্রেতারা গিয়ে লেখকের সামনে দাড়ায় এবং লেখক নিজের পান্ডুলিপির গল্পের সংক্ষিপ্তরুপ মুখে বলে। প্লট পছন্দ হলে পান্ডুলিপির দরদাম হয়। তোমার কোন গল্প পছন্দ না হলে অন্য লেখকদের গল্প শুনে পছন্দ করতে পারো। একটা পান্ডুলিপি দশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকাও বিক্রি হতে পারে। লেখক তার পান্ডুলিপি বিক্রি করার পর সেটা যে তার লেখা কোথাও কোনদিন প্রকাশ করে না ফলে ক্রেতা সহজেই সেই পান্ডুলিপি কিনে নিয়ে নিজের নামে ছাপতে পারে আর হয়ে যায় লেখক।
বউয়ের মুখে সব শুনে আমিতো ভীষণ অবাক।তাহলেতো যেতেই হবে একটা পান্ডুলিপি কিনতে। ঢাকায় তিনটা বাড়ি কিনেছি,গাড়ি কিনেছি,পুর্বাচলে জমি কিনেছি,একটা শপিংমল কিনেছি। কানাডাতেও বাড়ি কিনেছি। সুইচ ব্যাংকে টাকা রেখেছি। কোন কিছুর কমতি নেই শুধু ওই ঘরের শোকেসে নিজের লেখা মানে নিজের নাম লেখা কোন বই নেই। বউয়ের বুদ্ধিতে এবার সেটাও হবে। ব্যক্তি জীবনে আমি পুরোপুরি সফল একজন মানুষ হবো। বউকে বললাম তুমিও চলো না হয় আমার সাথে। দেখে শুনে পছন্দ করা যাবে। আর চাইলে তোমার জন্যও একটা দুটো পান্ডুলিপি না হয় কিনে আনবো। বউ সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলো। দুজন দু কাপ চা খেয়ে তবেই বের হবো ভেবে জমিলার মাকে বললাম চা দিতে। জমিলার মা চা দিতে দিতে বললো খালুজান একখান কতা কইবার চাই। আমি বললাম বলো জমিলার মা কী কথা বলতে চাও? জমিলার মা তার পান খাওয়া গাল নাড়াতে নাড়াতে বললো খালুজান এইবার আমারে ঈদবুনাস দেওন লাগবো না। যদি পারেন আমার লাইগাও একখান ফান্ডুলিপি কিন্না আইয়েন। আমারও খুব সখ! জমিলার মাকে কী বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না । আমার স্ত্রী্ই তাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিলো।
দুজন মিলে অবশেষে ফেব্রুয়ারির ৩০ তারিখে প্লুটোতে পান্ডুলিপির মেলায় গিয়ে বাছাই করে কয়েকটা পান্ডুলিপি কিনলাম। বার বার আসা একটু ঝামেলা তাই একবারে কিনে নিলাম যেন এক এক বছর এক একটা বের করা যায়। হজ্ব করেছিলাম তাই সবাই নামের আগে হাজী জুড়ে দিয়েছিল। দান করেছিলাম তাই দাতা জুড়ে দিয়েছিল। কিছু সমাজ সেবা করেছিলাম শেষে লোকে সমাজসেবক তকমাও দিয়েছিল। এবার সবাইকে জানিয়ে দিলাম আগামী মেলায় আমার নতুন বই বের হচ্ছে সবাই কিন্তু কিনবেন। সবাই এবার আমার নামের আগে লেখক কথাটাও জুড়ে দিলো। কাউকে ভুলেও বলিনি আমার লেখা বই বরং বলেছি আমার বই প্রকাশ হচ্ছে। লেখক শব্দটি জুড়ে দেওয়ার পর নামটা বেশ সুন্দর লাগছে। আমার কিছু অনুরাগী পোষ্টার ছেপেছে সেখানে লিখেছে বিশিষ্ট সমাজ সেবক,জনদরদী নেতা,গরীবের বন্ধু,শিক্ষাবিদ লেখক আল হাজ্ব জাজাফী সাহেবের প্রথম বই ” ফেব্রুয়ারির ৩০ তারিখ” আগামী বই মেলায় প্রকাশ পাচ্ছে। পোষ্টার দেখে বেশ শান্তি শান্তি লাগছে।
একটা পোষ্টার ড্রয়িংরুমে লাগিয়ে রাখলাম। প্রকাশকের সাথে কথাবার্তা হলো তিনি আহ্লাদে গদগদ। আমাকে বললেন কী অসাধারণ লিখেছেন। বিগত দশ বছরেও এতো অসাধারণ বই আমি করতে পারিনি। তবে স্যার ভালো প্রচ্ছদের জন্য আর ভালো কাগজের জন্য খরচাটা একটু বেশি হবে। আমি বললাম কত খরচ হবে? প্রকাশক বললেন এই ধরুন ৪০ হাজার মত। আমি হেসে উঠে বললাম প্রকাশক সাহেব মশকরা করেন আমার সাথে? প্রকাশক জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললেন স্যার কী যে বলেন আপনার সাথে মশকরা করবো কেন?আপনি হলেন সম্মানিত লেখক আর আমি প্রকাশক। যদি টাকার পরিমান বেশি মনে হয় তবে কিছু কমিয়ে ৩৫ হাজার দিয়েন। আমি জানতাম না যে বই প্রকাশে এতো অল্প টাকা লাগে আর পান্ডুলিপি এতো সহজে কেনা যায়। জানলে এতো দিনে অন্তত দুই তিনশো বইয়ের লেখক হয়ে যেতাম।
প্রকাশকের কাঁধে হাত রেখে বললাম প্রকাশক সাহেব চিন্তা করবেন না আমি আপনাকে দেড় লাখ টাকা দিচ্ছি নগদে। আপনি আরাম করে নিজের মত করে ছাপেন। প্রকাশক ভীষণ খুশি। বই মেলা শুরু হওয়ার আগেই মিষ্টির প্যাকেট সহ আমার বাসায় এসে হাজির। সাথে র‌্যাপিং পেপারে মোড়া কোন উপহার হবে হয়তো। আমাকে জোর করে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে বললেন স্যার র‌্যাপিং খুলে দেখুন। আমি খুলে দেখি আমার বই!! একদম আমার নামে ছাপা। প্রচ্ছদটাও অসাধারণ হয়েছে। এই প্রকাশক সত্যিই কর্মঠ। পাঁচ কপি বই নিয়ে এসেছে। একটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলাম কেমন ওজনদার হয়েছে বইটা। নাহ পছন্দ হয়েছে। যখন প্রকাশকের সাথে বই নিয়ে গল্প করছিলাম তখন আমার বড় ছেলে ভার্সিটি থেকে ফিরছে। ওকে ডেকে বললাম এই নে খোকা আমার বই বেরিয়েছে পড়ে দেখিস কেমন লাগলো। ছেলে বললো বাবা তোমার বইটা কি তুমি পড়ে দেখেছ একবারও?
ছেলের এহেন কথা শুনে প্রকাশক অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমি আজীবন ম্যানেজ করা মানুষ সহজেই ম্যানেজ করে নিলাম। বললাম ছেলে বলছে বই আকারে প্রকাশের পর বইটা পড়েছি কি না! প্রকাশক বললেন ও আচ্ছা বুঝেছি। নির্ধারিত দিনে বই স্টলে চলে আসলো। কিন্তু ক্রেতারা কেউ আর আমার বইটা ছুয়ে দেখে না। কী করা যায়? আমার এক চামচা আইডিয়া দিলো। বললো,স্যার আরও কিছু টাকা খরচা করেন দেখবেন বই মেলায় বেষ্ট সেলার হবে। আমি জানতে চাইলাম কী সেই বুদ্ধি। চামচা বললো সভা সমাবেশে যেমন মানুষ ভাড়া পাওয়া যায় বই কেনার জন্যও ভাড়া পাওয়া যায়। তারা মেলায় গিয়ে লম্বা লাইন ধরে আপনার বই কিনবে। শুধু তাই নয় আপনার অটোগ্রাফ নিবে,আপনার সাথে সেলফী তুলবে। সাংবাদিকরাও দেখবে আপনার বই সবথেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে।
ওর আইডিয়াটা পছন্দ হলো। জানতে চাইলাম কতজনকে ভাড়া করবা আর খরচ কেমন হবে? আমার এই চামচা না চামচা বলা ঠিক হচ্ছেনা কারণ আমিতো এখন লেখক তাই আমার ভাষা হবে মার্জিত। ওকে তাই চামচা না বলে বলতে হবে আমার সহকারী। আমার সহকারী বললো স্যার প্রতিদিন তিনশোজন করে হিসেব করলে তা ধরুন দশ হাজার মানুষকে আমরা হায়ার করবো। সব মিলিয়ে পাঁচ লাখ টাকা বাজেট হলেই হবে। আমি বুঝলাম আমার এই সহকারী এই টাকা থেকেও মারবে। অবশ্য ওর আর দোষ কোথায়? শিষ্য হিসেবে সে গুরুর কাছ থেকেইতো সব শিখেছে।
মেলার দ্বিতীয় দিনে সকাল সকাল স্টলে গিয়ে বসলাম অটোগ্রাফ দেবো বলে। পরিকল্পনা অনুযায়ি সহকারী ছেলেটা সত্যি সত্যিই লাইন লাগিয়ে দিয়েছে। তারা এক এক করে আসছে আর আমার দিকে বই এগিয়ে দিচ্ছে আমি অটোগ্রাফ দিচ্ছি। সারা মাসে কত হাজার মানুষকে অটোগ্রাফ দিয়েছি তার হিসেব নেই। বইতো বেষ্ট সেলার এটা কনফার্ম। আমার সহকারিকে ধন্যবাদ দিলাম এমন আইডিয়া দেওয়ার জন্য। মেলা শেষে প্রকাশকের সাথে বসলাম বিক্রিবাট্টা কেমন হয়েছে জানার জন্য। তিনি হিসেব করে বললেন আপনার বই ৩০০ কপি ছেপেছিলাম তার থেকে আপনাকে প্রথম দিন উপহার হিসেবে ৫ কপি দিয়েছিলাম আর মেলায় বিক্রি হয়েছে ৫ কপি। বাকি২৯০ কপি গোডাউনে আছে। আপনি যখন বলবেন পাঠিয়ে দেবো।
প্রকাশকের কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম। বললাম ভাই পাগল হয়ে গেছেন? দ্বিতীয় দিন থেকে শেষ দিন অব্দি রোজ আমি যে শত শত মানুষকে অটোগ্রাফ দিলাম সেগুলোর হিসেব কোথায়? প্রকাশক বললেন স্যার আপনি ভুল করছেন। আপনি অটোগ্রাফ দিয়েছেন সেটা আমিও স্বীকার করছি তবে অন্য লেখকের বইয়ে অটোগ্রাফ দিয়েছেন। আমার কাছে সিসিক্যামেরার ফুটেজ আছে নিজেই দেখুন। আমি চেক করে দেখলাম সত্যি সত্যিই অটোগ্রাফ দিয়েছি অন্য লেখকের বইয়ে! আসলে ভুলে ওখানে অন্য লেখকের বই রাখা হয়েছিল। ক্রেতা এসে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ওই বইটা দিন স্যারের অটোগ্রাফ সহ আমরা তাই করেছি। ওখানে আসলে আপনার বই থাকার কথা ছিলো কোন কারনে মিস হয়েছে। আমি বললাম আচ্ছা অসুবিধা নেই আগামী মেলায় আরও নতুন বই আনবো। প্রকাশক বললো স্যার কোন চিন্তা করবেন না আপনার লেখা সেরাদের সেরা। বেষ্ট সেলার হবেই হবে। পাশ থেকে আমার সহকারি বললেন স্যার প্রকাশক সাহেব ঠিকই বলেছেন। আগামী বার দরকার হলে প্রতিদিনের জন্য এক হাজার ক্রেতা ভাড়া করবো। আমি বললাম ঠিক আছে ব্যাপার না। লেখক হয়েছি এটাইতো অনেক। এখন আমার ড্রয়িংরুমে আমার নামে বই আছে এটাইবা কম কিসে।
-জাজাফী
১ জানুয়ারি ২০২১

জুলাই মাসে লেখা কবিতাগুচ্ছ

0

১.

 

ঐ যে দূরে ছোট্ট নদীটি যার নাম অমরাবতী

ওখানে কখনো সেতু হবে না

সব নদীতে সেতু হলে কোথায় বৈঠা বাইবে মাঝি?

 

২.

 

কী বিচিত্র জীবন তোমার

কখনো কাকের মত না জেনে নিজের মনে করে

আজীবন অন্য কারো ডিমে তা দিয়ে গেলে।

কখনো মালির মত

হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে গোলাপ ফুটিয়ে

অন্য কারো হাতে তুলে দিলে সৌরভ নিতে!

চোখের সামনে কত চায়ের কাপে ধোয়া ওঠা থেমে গেল

কারো ঠোটের স্পর্শ ছাড়াই।

 

৩.

 

হাতের কাছে থাকা মোমবাতি জ্বেলে অনায়াসেই অন্ধকার তাড়ানো যেতো

তবুও সে কত রাত অন্ধকারে জানালা খুলে কাটিয়ে দিল

চাঁদের জোছনার অপেক্ষায়।

 

৪.

 

আকাশচুম্বী অট্টালিকা বুকে রাজধানী উপাধি নিয়ে

আমার সামনে এক ব্যর্থ শহর দাঁড়িয়ে

মরিচিকা জেনেও আমরা ছুটছি এই শহরের টানে।

 

হে দাম্ভিক শহর!

কী নিয়ে গর্ব করো তুমি?

রাজধানী হয়েছ বলে তোমার গর্ব করার কিছু নেই

আমি দেখেছি তোমার বুকে আকাশচুম্বী অট্টালিকা থাকা সত্ত্বেও

বেওয়ারিশ কুকুরের মত অসংখ্য মানুষ রাস্তায় ঘুমায়।

 

তোমার ঘরে থরে থরে সাজানো রঙ্গীন কাপড় থাকা সত্ত্বেও

খালি গায়ে ঘোরে নাম না জানা কত মানব সন্তান

হে ব্যর্থ শহর! তবে কোন মুখে গর্ব করো তুমি?

 

৫.

 

যদি ভোর রাতে জেগে উঠে দেখো

কুয়াশার চাদর ছিড়ে মৃদু পায়ে কেউ এসে দাড়ায়

 

৬.

 

তুমি এখন আর নেই

কোথাও দূর পাহাড়ের দেশে হারিয়ে গেছ

তুমি না থাকলেও মনে করার মত অনেক স্মৃতি দিয়ে গেছ

সেই সব স্মৃতিগুলোর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।

 

৭.

এক সমুদ্র জল নিয়ে বসে আছি আগুন নেভাবো বলে

কোথাও কি আগুন লাগেনি কারো মনে?

কী করে লাগবে আগুন দিয়াশলাইয়ের কাঠিতো এখানে

দিয়াশলাই ছাড়া কি আর সহজে আগুন জ্বলে?

 

৮.

 

তোমাকে ওরা খুঁজতে এসে শুণ্য হাতে ফিরে গেছে

তন্নতন্ন করে খুঁজেও তোমাকে পায়নি

হায়! ওরা যদি একবার আমার হৃদয়ে খোঁজ নিতো

তোমাকে পেতো।

 

৯.

হে ভূমিহীন কৃষক!

তোমার চোখের সামনে এতো বৃষ্টি নামলো

অথচ একফোঁটা জল জমিন স্পর্শ করলো না কখনো

কোথায় তোমার সেই খাস জমি?

কোথায় তোমার সেই ফসলের মাঠ?

যেখানে দুফোঁটা বৃষ্টির জল ফসল ফলিয়ে দেবে।

 

আর কতকাল ভূমিহীন কৃষক হয়ে থাকবে তুমি?

তোমার আকাশে শরতের মেঘ জমতে আরতো বেশি দেরি নেই!

 

১০.

আকাশ জুড়ে তারার মেলা বসুক,জোছনায় মাখামাখি চাঁদ

ওদিকে তাকালে কি মিটবে কখনো তোমাকে দেখার সাঁধ।

 

১১.

ঘরের আলো নিভিয়ে লাভ কী

অন্ধকারে এ দুটি হাত কারে ছোঁবে?

 

১২.

 

হে প্রত্নত্ত্ববিদ!

তেত্রিশ বছর অনুসন্ধান করেও

খনন করার মত পুরার্কীতির সন্ধান পাওনি

তবুও কোন আশা বুকে নিয়ে আজও তুমি অনুসন্ধান করে চলেছ?

 

১৩.

 

ধরিনি কখনো তারে,ছুঁয়েও দেখিনি কভু

শুধু একবার তাকিয়েছি তারপর তাকাইনি আর

এতেই নাকি উপক্রম মা হবার।

 

১৪.

 

ডিম আমার খুবই প্রিয়

আমার ভালো লাগে ডাবল ডিমের চপ

ডিম ভর্তাও পছন্দ করি আমি

কখনো কখনো দুটো ডিম অমলেট করতে ইচ্ছে করে

মুরগীর ডিমে হবে না, এতো ছোট যে কুসুমটাও দেখা যায় না

আমি বরং রাজহাঁসের ডিম চাই

দুটো বড় উটপাখির ডিম হলেও চলবে

এতো বড় ডিম যে দুই হাতে ধরে রাখা যাবে না

অনেক যত্নে খোলসবন্দী কুসুম বের করে আনবো

ভেতরটা কেমন সাদা আর হলুদে ভরপুর।

 

১৫.

 

কত র্তীথের কাক চাতকের মত চেয়ে থাকে

দেখা মেলেনা তার

কারো বা অভাব নেই

বিপরীতে কারো না পাওয়ার হাহাকার।

 

১৬.

 

মাঠের পর মাঠ সূর্যমুখী ফুটে আছে

তবুও কিছু মৌমাছি সারা জীবন কাঁটিয়ে দেয় ফুলের সন্ধানে

তার বসার মত একটি সূর্যমুখীও খালি নেই,বেদখল হয়ে গেছে

সুতরাং অন্যদের মত রোজ সন্ধ্যায় চাকে ফেরার তাড়া থাকে না তার।

 

একটি ফুলের দেখা পাবার অপূরণীয় আশা বুকে নিয়ে

তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে সে দিগন্তের শেষ সীমানা ছোঁয়।

 

পৃথিবীতে একই ভাবে বহু ফুল ফোঁটে, আপন সৌরভ ছড়ায়

কিন্তু সেই সৌরভ পৌঁছেনা কোনো মৌমাছির কাছে

কিছু কিছু ফুলের মধুও শুকিয়ে যায় মৌমাছির অপেক্ষায়।

 

১৭.

 

ভালোবাসার বিনিময়ে এক টুকরো জমি কিনবো

যেখানে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নামতেই

ঝাউবন ঘেরা উপত্যকার দেখা মিলবে

পাহাড় আর উপত্যকার মাঝে থাকবে ছোট্ট একটি পুকুর

জলহীন পুকুরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবো।

 

১৮.

ঐ যে দূরে দুটো পর্বতশৃঙ্গ কেওকেরাডাং আর তাজিংডং

সুযোগ পেলে এক শীতে আমি দুটোই জয় করতে চাই

পাহাড় জয় করে হাকালুকি হাওড়ে নেমে সাঁতার কাটবো

চলন বিল যখন ডাকবে সেখানেও চলে যাবো।

 

১৯.

 

ডিমে তা দিতে দিতে ঘুমিয়ে থাকা পাখিটিও

মাঝে মাঝে জেগে ওঠে

কিছুক্ষণ জেগে থেকে আবার ঘুমায়।

 

২০.

 

ভালোবাসার উষ্ণতায় মোমের মত হৃদয় আমার গলে গেলে

সে দোষ একা আমার নয়।

 

২১.

 

একটি মাছ একুরিয়ামের বাইরে পানির অভাবে

ছটফট করতে করতে

মুখে ফেনা তুলে চোখের সামনে নিস্তেজ হয়ে গেল।

 

২২.

মোমের মত নরম হৃদয়ের কাছে এসে

কেন ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়ালে

তোমার ভালোবাসার উষ্ণতায় গলিয়ে দিলে হৃদয় আমার

তোমার স্পর্শ পেলে সুপ্ত আগ্নেয়গিরিও লাভা ছড়াবে।

 

২৩.

 

দূর আকাশের আলোকিত চাঁদ

আমাকে অন্ধকারে রেখে

তুমি কার ঘর আলোকিত করবে বলে অপেক্ষায় আছো?

 

২৪.

 

দূর আকাশের আলোকিত চাঁদ

তোমাকে ছোঁয়ার সাধ্য আমার নেই

যখন খুশি তুমিতো এসে আমায় ছুঁয়ে দিতে পারো

আমিতো তোমার কাছে অধরা নই।

 

ইচ্ছে হলেই আমার এই অন্ধকার ঘর মুহুর্ত নিমিষেই

তোমার একরাশ জোছনায় আলোকিত করে দিতে পারো।

দূর আকাশের আলোকিত চাঁদ

আমাকে অন্ধকারে রেখে

তুমি কার ঘর আলোকিত করবে বলে অপেক্ষায় আছো?

 

২৫.

 

হৃদয়টা ভেঙ্গে দিতে পারো,ভেঙ্গে দিতে পারো আয়না

ভালোবাসা কী করে ভাংবে বলো?

ভালোবাসা ভাঙা যায় না।

 

২৬.

 

বৃষ্টিতে ভিজে যাবো ভেবে কারো কাছে ছাতা চাই না

তার চেয়ে বরং এমন কাউকে চাই

যে আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হবে।

 

২৭.

 

সূর্যের পিছু নিয়েছি, আমাকেতো জ্বলতেই হবে

কয়লাকে পুড়ে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই

তার জন্মই হয়েছে অন্যের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই হবে বলে।

২৮.

 

তোমাকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা গ্রহগুলোর মাঝে আমিও ছিলাম

তারপর একদিন প্লুটোর মত না জানি কোন অপরাধে গ্রহত্ব হারালাম

প্লুটো এখন আর সৌরজগতের কেউ নয়,আমিও নই

সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা প্লুটো জানে গ্রহত্ব হারানোর বেদনা।

 

২৯.

 

মাত্র পাঁচ মিনিটের স্বাধীনতা নিয়ে জন্মেছিলাম আমি

সেই সময়ে আমার কোনো নাম ছিলো না

তবুও আমি ভালোবাসা পেয়েছি

আমার পরনে কোনো কাপড় ছিলো না

তবুও আমি নিষ্পাপ ছিলাম।

 

কোথাও যাবার তাড়া ছিলো না আমার

ইচ্ছে হলেই হেসেছি আবার কেঁদেছি।

সেই সময়ে আমার কান্নার শব্দ অনেকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে

মাত্র পাঁচ মিনিটের স্বাধীনতা নিয়ে জন্মেছিলাম আমি।

 

পাঁচমিনিট পেরিয়ে যাবার পর আমি পরাধীন হয়ে গেলাম

ওরা নিজেদের মত করে আমার নাম ঠিক করে দিল

আমার মতামত ছাড়াই ওরা আমাকে

শেখ,মোল্লা,পাল,সেন কিংবা চট্টোপাধ্যয় উপাধী ধিল।

 

পরাধীনতার সেই শিঁকল আর কোনোদিন ছিঁড়তে পারিনি আমি

আজও তাই প্রতিনিয়ত সেই সব বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছি

যা আমি নিজ থেকে পছন্দ করিনি

ওরাই আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছে।

মাত্র পাঁচ মিনিটের স্বাধীনতা নিয়ে জন্মেছিলাম আমি।

 

একদিন আবার আমি স্বাধীন হবো

সেদিনও আমার কোনো নাম থাকবে না,পদবী থাকবে না

স্বাধীনতা দিয়ে ওরা আমায় অচেনা জগতে পাঠিয়ে দেবে

যেখানে আমার পূর্বসুরীরা অপেক্ষা করছে।

 

৩০.

 

এতো অভিমান কী করে ভাঙাই প্রিয়তম ফুল

ভুলতো করোনি তুমি

যা কিছু হয়েছে আমার তা ভুল।

৩১.

মায়াবী আলো জ্বেলে ডেকেছ আমায়

ছুটেছি তোমার পিছে

গিয়ে দেখি মরিচিকা তুমি,যা দেখেছি সবটুকু মিছে।

 

৩২.

 

ফুল হয়ে সৌরভ ছড়াও, চাঁদ হয়ে ছড়িয়ে দাও আলো

তাইতো তোমাকে আমি এতো বাসি ভালো।

 

৩৩.

 

আমার হৃদয় খুন করে আজও নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ায় খুনী

তবুও তার জেল হয় না,ফাঁসী হয় না

তাকে আরও বহুবার খুনের সুযোগ করে দেওয়া হয়।

 

তার হৃদয় হরণ করা খুনী চোখের আগুনে

কত প্রেমিক হৃদয় অঙ্গার হয়েছে

তবুও সে অপরাধী নয়! সে প্রেমিকা

যার প্রেমের অনলে পুড়ে গেছে তেত্রিশ কোটি প্রেমিক হৃদয়

চুরি করে নিয়ে গেছে সবগুলো মন।

 

৩৪.

 

তুমি ফুল হলেও অন্তত ছুঁয়ে দেখা যেত

সুবাশ নেওয়া যেত

তুমি হয়েছ আকাশের চাঁদ, যাকে ছোঁয়া যায় না

দূর থেকে তাকিয়ে মুগ্ধ হতে হয়

জোছনায় মাখামাখি হতে হয়।

 

৩৫.

পৃথিবীর তিনভাগ জলে ডুবিনি আমি

ডুবেছি তোমার প্রেমে।

 

৩৬.

 

সুদক্ষ নাবিক সে

আটলান্টিক পাড়ি দিতে গিয়েও ডুবেনি কখনো

ডুবেছে তোমার প্রেমে।

 

৩৭.

তুমি ছাড়া যখন কথা বলার মত দ্বিতীয় কাউকে পেলাম না

তখন আমি নিরুপায় হয়ে নিজেই নিজের সাথে কথা বলি

আজও তোমাকে কেন্দ্র করে

এক কাল্পনিক ভারসাম্যে আমার সবকিছু ঘুরপাক খায়

কবিতার ছন্দগুলো আজ প্রকম্পিত বিস্ফোরণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে

তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা।

 

৩৮.

যদিও আমার তুমি ঘৃণা করো তবু আমি খুশি

তোমার অজান্তেই তোমার মনে আমার আমিকে পুষি।

 

৩৯.

ঝরে পড়া ফুল

তোমার হাতের স্পর্শে মালা হয়ে শুকিয়ে যায় কারো অপেক্ষায়

তবুও তুমি রোজই মালা গাথো

সে আর আসে না।

 

৪০.

 

বয়ে চলা নদীর মত অজস্র জনপদ ঘুরে

আমিও ফিরে যেতে চাই তোমার পানে।

 

৪১.

 

কার জন্য তুমি আকাশের তারা হয়ে জ্বলো?

আমিতো এখানে,নেমে এসো মাটির পৃথিবীতে।

 

৪২.

 

আকাশের তারা হয়ে কতকাল জ্বলবে?

এরচেয়ে খসে পড়ো

নেমে এসো মাটির পৃথিবীতে।

 

৪৩.

 

ভালোবাসার কাঙ্গাল এক ভিখারী তোমার দুয়ারে দাঁড়িয়ে

তাড়িয়ে দিওনা তারে

যাবার সময় হলে চলে যাবে,ফেরানো যাবে না আর।

 

৪৪.

 

আজও পর্বতারোহীর অপেক্ষায় সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে

মাউন্ট মেনোলিস আর মাউন্ট এরদুভাস

একদিন পর্বতারোহী এসে অজেয় থাকা পাহাড় জয় করে

ধীরে ধীরে নেমে আসবে পাহাড়ের পাদদেশে

যেখানে ঝাউবনে ঘেরা ছোট্ট শান্ত দিঘিতে সাঁতার কেটে

সমস্ত অবসাদ দূর করবে।

 

এ এমন পাহাড় যার চূড়া স্পর্শ করেনি কোনো পবর্তারোহী

এ এমন দিঘি, যে দিঘির জল স্পর্শ করেনি পৃথিবীর আর কোনো সাতারু

কী করে পারবে বলো সূর্যের আলোই কখনো পৌঁছাতে পারেনি সেখানে।

 

৪৫.

 

কোথাও হারিয়ে যেতে চাই

দিগন্তের ওপারে জোছনায় মাখামাখি সড়ক ধরে

অজানায়।

 

৪৬.

 

এক কোটি বছর আগে যাত্রা করে কিছু আলো

মাত্র সেদিন তোমাকে ছুঁয়ে গেল

আমার সাধ্য কী এক জীবনে তোমাকে ছোঁয়ার।

 

৪৭.

 

আমি অপেক্ষায় থাকি সেই সূর্যের

যা আজও উদিত হয়নি আমার আকাশে

হ্যালির ধুমকেতুর মত কোনো একদিন হয়তো সে উদিত হবে।

 

৪৮.

 

একটি ফুল বিছানায় ফুটবে আমার জন্য

কেবল তারই অপেক্ষায় আমি।

 

৪৯.

 

নাম না জানা সুগন্ধী ফুল

তোমার সৌরভে মুগ্ধ হয়ে পাপড়ী গুলোয় হাত বুলাতে বুলাতে

পৃথিবীর সব কিছু ভুলে যেতে চাই।

 

৫০.

বছর ঘুরে তবু ঈদের চাঁদ এলো

প্রিয় কেউ তবু এলো না

ভালোবাসাটুকু জমা রয়ে গেল

এবারও তা কেউ পেলো না।

 

৫১.

 

কুরবানি হয়ে যাক হৃদয়ের পশু

মিটে যাক অহমিকা,অভিমান,ক্রোধ

হৃদয়টা ভরে থাক ভালোবাসা মমতায়

ধুলোয় মিশে যাক অহমিক বোধ।

 

৫২.

 

আমাকে সুগন্ধী বিলাবে বলে যদি ফুটেছিলে গোলাপ

ঝরে গেলে কেন?

তবে কি ধরে নেবো আমার জন্য নয়

তুমি ফুটেছিলে ঝরে যাবার জন্য।

চাঁদকে জায়গা করে দিতে যেমন সূর্যকে ডুবে যেতেই হয়।

 

৫৩.

তুমিতো গোলাপ নও

তবুও তোমায় ছুঁতে গিয়ে

কন্টকযুক্ত শাখা প্রশাখায় ক্ষতবিক্ষত হই

তোমাকে আর ছোঁয়া হয় না।

 

৫৪.

 

দোহাই তোমার একবার চোখ খোলো

দেখো আঁধার নামিবার আগে।

 

৫৫.

 

তোমার ভূবনজোড়া হাসি ভালোবাসি

দিঘল কালো চুলে রাখি হাত

তোমার চাঁদ মুখ দেখে কেটে যায় রাত।

 

৫৬.

 

একটা পুরো আকাশ আমার নক্ষত্রহীন

চাঁদ হয়ে সে আকাশে কেউ আলো  ছড়ায়নি কোনো দিন।

একবার ধুমকেতুর মত এসেছিল কেউ

চোখ তুলে তাকাবার আগেই চলে গেছে সেও।

তারপর কত বিনিদ্র রজনী কেটে গেছে একা

তবু কোনো অপ্সরা আফ্রোদিতির পাইনিকো দেখা।

 

৫৭.

 

পদ্মা সেতু পদ্মা সেতু তোমার কাছে শুধাই

মানুষ কেন তোমার উপর ছবি তুলছে হুদাই।

ছবিতেকি তোমায় ওরা ধরতে পারে কভু?

তাও কেন যে ওরা সবাই ছবি তুলছে তবু।

 

৫৮.

 

এতো সহজে কী করে তাকে ছেড়ে দেই বলো

কৈশোরে যার ঠোটে ঠোট রেখে চুমু খেয়েছি

ভালোবেসে নিঃশ্বাসের সাথে মিশে গেছে সে

তাকে কি এতো সহজে ছাড়া যায়?

 

৫৯.

প্লেগ আক্রান্ত মৃতদেহকে যেমন অবহেলায় ছুঁড়ে ফেলা হয়

কেউ কেউ তার চেয়েও অবহেলায় পাশকাটিয়ে চলে যায়।

 

যদি সুখ আর দুঃখ দুটোর স্বাদই নিতে চাও একসাথে

তবে কাউকে ভালোবেসে দেখো।

ভালোবাসা কাউকে খালিহাতে ফেরায় না

তার আছে অগনিত সুখ আর দুঃখের নদী

হাসি কান্নায় জীবন ভরিয়ে দেবে।

 

৬০.

 

ভুল করে বসন্ত ভেবে

বর্ষায় ডেকে ওঠা কোকিলের মত দুঃখী আর কেউ নেই।

 

৬১.

 

ভেবো না সুখ আর কোনোদিন আসবে না

সময় হলেই আবার বসন্ত আসবে

কষ্টগুলো ঝরা পাতার মত ঝরে যাবে

তখন আকাশ জুড়ে তারার মেলা বসবে

বাগানে ফুটে থাকবে সুগন্ধী গোলাপ।

৬২.

হে আকাশেল চাঁদ!

তোমার দিকে তাকাবার সময় কোথায়?

অপেক্ষা করো অথবা ডুবে যাও

পৃথিবীর জমিনে থাকা সাড়ে চারশো কোটি চাঁদের আলো

এখনো দেখা হয়নি

সেখানে তোমাকে দেখার সময় কোথায়?

 

৬৩.

 

পৃথিবীর সাড়ে চারশো কোটি চাঁদ ফেলে তোমরা যারা

আকাশের একমাত্র চাঁদের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হও

তোমাদের দেখে আমি অবাক হই।

 

উপরের সবগুলো জুলাই -২০২২ মাসে লেখা।