”একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার, 

সারাবিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার।”

শিল্পীর কন্ঠে বিশ্বের বিস্ময় হিসেবে যে বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেটিকে বলেছেন ” আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”। সেই সোনার বাংলাকে সত্যিকারের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন,সংগ্রাম করেছেন যে মানুষটি তিনি বাঙ্গালী জাতির সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ নেতা, স্বাধীন বাংলার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিবিসি বাংলার জরিপে তাই আপামর জনসাধারণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করতে কালক্ষেপন করেন নি। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা,বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর মানুষের প্রতি তার যে অগাধ ভালোবাসা ছিলো তার জন্যই তিনি পেরেছেন। এখনো পৃথিবীতে যেখানেই নির্যাতন নিপীড়ন চলে আর স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেয় সেই সব ঘটনার কথা তুলে ধরতে গেলে অবধারিত ভাবেই বঙ্গবন্ধুর নাম চলে আসে। সবাই আক্ষেপ করে বলে ফিলিস্তিনে একজন ইয়াসির আরাফাত ছিলেন কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছিলেন না। কাশ্মীরের মত আরও যারা স্বাধীনতার জন্য প্রতিনিয়ত জীবন দিচ্ছে তাদের সব আছে শুধু বঙ্গবন্ধু নেই। একজন বঙ্গবন্ধু থাকলে স্বাধীনতার স্বাদ পেতে তাদের এতো বছর লাগতো না।

একটি সুন্দর আগামী বিনির্মাণের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন তা ক্ষণে ক্ষণে ব্যহত হয়েছে কিছু স্বার্থান্বেষিদের চক্রান্তে। ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে কখনো কখনো এই দেশে ক্ষমতায় এসেছে পাকিস্থানীদের দোষর। যার ফলে তারা নানা কূটকৌশলে বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা মুছে দিতে চেয়েছে। কিন্তু তারা বোধ হয় কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের লেখা কবিতার লাইন দুটো  জানতো না! কবি লিখেছেন 

”যত দূর যাও পাখি দেখা হবে ফের

স্বাধীন ঐ  আকাশটা শেখ মুজিবের”।

মুজিব এমন একটি নাম যা মুছে দেওয়া যায় না। সেই যে আওয়াজ উঠতো এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে। বাস্তবে তার প্রয়োজন নেই বরং বঙ্গবন্ধু স্বয়ং উপস্থিত আছেন মানুষের হৃদয়ে,দেশের মাটি ও জলে। পাকিস্তানি দোষরেরা যারা পচাত্তরের পনেরই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নির্মুলে নেমেছিল তারা জানতো না বীরের রক্ত ও ঘাম যে জমিনে পড়েছে সেই জমিন তাদের মুক্তি দিবে না। এরই ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে তার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আলো জ্বেলে এগিয়ে যাচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের পথে আমাদের অর্জন কি কি সেটা বলার আগে আমাদের জানতে হবে বঙ্গবন্ধু কি কি স্বপ্ন দেখেছিলেন? তিনি চেয়েছিলেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল অব্দি বিদ্যুতের আলো পৌছাক,কাচা পথগুলো পাকা হোক। কৃষকেরা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পাক আবার নানা সময়ে তারা সাহায্য সহযোগিতা পাক। তিনি চেয়েছিলেন রাজধানী ঢাকার সাথে সড়ক,আকাশ এবং রেলপথে অন্যান্য জায়গার সাথে সুন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হোক।প্রান্তিক পর্যায়ে যারা আছে তারা তাদের অধিকার ফিরে পাক।তিনি চেয়েছিলেন সমাজ থেকে সব রকম অন্যায় দূর করে একটি আদর্শ সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করতে। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন এদেশের একদল ঘাতকদের নির্মমতার কারণে যথাসময়ে তিনি নিজ হাতে সত্যি করে যেতে না পারলেও তিনি রেখে গিয়েছেন তার সুযোগ্য কন্যাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বারে তিনি সব কিছু গুছিয়ে নিতে পারেননি কারণ তখন পুর্ববর্তী সরকার দেশের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক যে দূরাবস্থা তৈরি করে রেখেছিল তা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই সময় পেরিয়ে গিয়েছিল। তবে তার মনের মধ্যে পিতার অপূরণীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটি লক্ষ্যমাত্রা ছিলো যা নতুন মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের সাথে সাথে তিনি বাস্তবায়ন করতে শুরু করেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা আমরা দেখতে পাচ্ছি তা বর্ণনা করে শেষ হবে না। তার পরও আমরা কিছু গুরুত্বপুর্ন অর্জন তুলে ধরতে চেষ্টা করছি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারঃ

স্বাধীনতার বিপক্ষে যারা কাজ করে এদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নকে মুছে দিতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় তাদের বিচার হয়েছে এবং দেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। সেদিন এই সব দেশদ্রোহীরা  আমাদের সুর্যসন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা না করলে আজকের বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হতে পারতো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সোনার বাংলা নির্মানের পথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি অন্যতম অর্জন।

নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণঃ

একটি স্বাধীন দেশের নিজস্ব একটি বা একাধিক স্যাটেলাইট থাকা অত্যন্ত জরুরী। টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থার অভুতপুর্ব উন্নয়ন সাধনের জন্য স্যাটেলাইটের কোন বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়াবে। স্বাধীনতার পর একটি নাজুক,ভঙ্গুর অর্থনীতি সামলে উঠতে না উঠতেই ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুর প্রাণ কেড়ে নেওয়ায় তিনি সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন নি। তার পর কত সরকার এসেছে একটিবারও এসব ভেবে দেখেনি।অবশেষে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য পুত্র এবং তার উপদেষ্টা,ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের কান্ডারি সজিব ওয়াজেদ জয়ের হাত ধরে আমরা নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়েছি। আজ তাই যে অল্প সংখ্যক দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। বঙ্গবন্ধু তনয়ার হাত ধরে একটি বড় স্বপ্ন আমরা পুরণ করতে পেরেছি এটি বাংলাদেশের বড় অর্জন গুলোর একটি। এর মাধ্যমে আকাশে লাল সবুজের পতাকা শোভা পাচ্ছে এবং বঙ্গবন্ধুর নামও মহাকাশে পৌছে গেছে।

সমুদ্রসীমা জয়ঃ

বছরের পর বছর ধরে সমুদ্র সীমা নিয়ে মায়ানমারের সাথে যে দ্বৈরথ চলছিলো তা সমাধানে বঙ্গবন্ধু পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই তাকে চলে যেতে হয়েছিল।সেই সমস্যার সমাধান করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয় বরং আমরা তাঁর হাত ধরে সমুদ্র সীমা জয় করেছি।

১৪ মার্চ ২০১২ মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পর ৭ জুলাই ২০১৪ নিষ্পত্তি হয় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ। বঙ্গোপসাগরে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চলা সমুদ্রসীমা নিয়ে এ বিরোধের অবসান ঘটায় বাংলাদেশ এখন লাভ করেছে একটি স্থায়ী সমুদ্রসীমা, যার আয়তন ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার। 

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এক মহড়ার সময় বঙ্গবন্ধু বায়নোকুলার দিয়ে বিস্তীর্ণ সমুদ্র ঘুরেফিরে দেখছিলেন। তারপর বলেছিলেন, সমুদ্র নিয়ে ভারতের সঙ্গে মিটমাট হচ্ছে না। আমি যা চেয়েছি আমাকে তা পেতে হবে। তিনি বলেছিলেন, এ সাগর থেকেই আরেকটি বাংলাদেশ পাব। পানি বিশেষজ্ঞ এবিএম আব্বাস বলেছিলেন, He (Mujib) had decided not to compromise on the water question.’ কথাটি ছিল সমুদ্রসীমা ও ফারাক্কা নিয়ে। এর আগেই ১৯৭৩ সালে হল্যান্ডের পানি বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বঙ্গবন্ধু তাদের বলেছিলেন, আপনাদের দেশ তো সমুদ্রের নিচে। আমি চাই সমুদ্রে ক্রসড্যাম করে আরেকটি বাংলাদেশ। সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি অগ্রসর হয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই জে. এন দীক্ষিত তার বইতে লিখেছেন, ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা ওঠে। তিনি বলেছেন, তার ধারণায় বাংলাদেশ সমুদ্র থেকে তেল নেবে এবং তার বিনিময়ে ভারত নেবে প্রাকৃতিক গ্যাস। কিন্তু বঙ্গবন্ধু রাজি হননি।

বঙ্গবন্ধুর সমগ্র অস্তিত্বজুড়ে ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সবুজ মাঠ, বহমান জলরাশি, নদীগুলোর উথাল-পাতাল, ভাঙাগড়া আর দক্ষিণে বিস্তীর্ণ সমুদ্রের উত্তাল গর্জন এবং সবুজ নিসর্গ এই নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু যেমন জানতেন, বাংলাদেশের স্থলভাগের কোথায় কী আছে, তেমনি বঙ্গোপসাগরের তলদেশে রয়েছে গ্যাস, তেল, খনিজ ও প্রাণিজ সম্পদের অফুরান সম্ভাবনা। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে সংবিধান রচনা করার সময় এ লক্ষ্যে ১৪৩ অনুচ্ছেদের ২ উপধারায় লিখে দিয়েছেন। ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানা এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জলসীমা ও মহীসোপানের সীমানা নির্ধারণের বিধান করতে হবে।’

বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন তার সুযোগ্য কন্যার হাত ধরে বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা একই সাথে ভারত এবং মায়ানমারের সাথে বিরোধ থাকা সমুদ্রসীমা জয় করতে পেরেছি যার পরিমান আরও একটি বাংলাদেশের সমান।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নঃ

বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপুর্ব উন্নয়ন হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা একাধিক আর্ন্তজাতিক মানের বিমানবন্দর নির্মান করেছি পাশাপাশি দেশের নানা প্রান্তে যোগাযোগের জন্য বিমানবন্দর নির্মান করেছি। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন যমুনার ডাকা বুকে সেতু হবে যেন রাজশাহী এবং আসেপাশের জেলার মানুষ অনায়াসে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সেটা বাস্তবায়িত হয়েছে। যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে ১৯৯৮ সালের ২৩ ই জুন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের মনে সুখের সুবাতাস বইতে থাকে। রাজধানীর সাথে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হয় ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। এটি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বির্নিমাণের পথে আমাদের একটি অন্যতম অর্জন। এর পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পদ্মা নদীর উপর সেতু করবো কেননা খুলন ও তার আসেপাশের এলাকার মানুষকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে সীমাহীন দুর্ভোগ সহ্য করে ফেরী পার হতে হয় ফলে ছুটি কাটাতে ঘরমুখী মানুষের গুরুত্বপুর্ন অনেকটা সময় পথেই শেষ হয়। বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শ রূপরেখা দাড় করিয়েছিলেন যে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা কেমন হবে। সেই স্বপ্নের পালে হাওয়া লাগিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আজ পদ্মাসেতু দিয়ে রেল এবং গাড়ি চলাচল সময়ের ব্যাপার মাত্র। অনেকটুকু কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। বিশাল বাজেটের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্ব ব্যাংক সহ অন্যান্য আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলো যখন এদেশীয় অনেকের চক্রান্তের কাছে নতি স্বীকার করে ভেটো দিয়েছিল তখন এদেশের কিছু মানুষ ভেবেছিল পদ্মা সেতু আমরা নির্মান করতে পারবো না। কিন্তু তারা জানতো না যার শরীরে বঙ্গবন্ধুর রক্ত বহমান তিনি দমে যাবার পাত্রী নন। পিতার যোগ্য কন্যা হিসেবে অত্যন্ত সাহসের সাথে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হবে। এটা শোনার পর যারা অট্টহাসি হেসেছিল এবং যারা একদিন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি মনে করতো তারা অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছে। তাদের মুখে কুলুপ এটে দিয়েছে এবং তারা বাকহীন। তারা ভাবতেই পারেনি বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুনে আমরা অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারছি। যা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের পথে এক একটি বড় সাফল্য হিসেবে ধরা দিচ্ছে।

এখন দেশের অধিকাংশ জেলার সাথে আমরা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি এবং যে সব জেলায় এখনো রেলপথ হয়নি তা আমাদের কর্মপরিকল্পনার মধ্যেই  রয়েছে। আমরা 2041 সালের মধ্যে একটি আধুনিক সুন্দর এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি তা বাস্তবায়নে আমাদের পথচলা ক্রমাগত ভাবে স্পষ্ট হচ্ছে। আমরা রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে মেট্রোরেল নির্মান কাজ শুরু করে অনেকটা এগিয়ে নিতে পেরেছি। এর ফলে রাজধানী ঢাকার মানুষের যাতায়াতের যে দুর্ভোগ তা অনেকাংশে কমে যাবে। আমরা যানজট নিরসনের লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকা সহ চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য জায়গায় ফ্লাইওভার নির্মান করেছি যা আমাদের অর্জনের খাতাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

আমরা আধুনিক নৌ বন্দর স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি পাশাপাশি আমাদের নৌ বহরে নতুন নতুন জাহাজ সংযোজন করতে পেরেছি।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নঃ

কিছুদিন আগেও এই দেশের মানুষ কল্পনাও করতে পারতো না আমাদের দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান করা সম্ভব হবে কিন্তু আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্য নিয়ে “শেখ হাসিনার উদ্যোগ,ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” শ্লোগানকে সামনে রেখে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিতে সক্ষম হয়েছি। ফলে এর মাধ্যমে আমরা দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশেও বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে পারবো।শুধু তাই নয় যে সব এলাকায় আমার বিদ্যুৎ সুবিধা পৌছাতে পারিনি সেই সব এলাকায় আমরা সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে জনগণের পাশে থেকেছি।

পরিবেশগত উন্নয়নঃ

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হবে আধুনিক এবং ডিজিটাল সেই লক্ষ্য নিয়ে ঢাকার রাজপথের দুই দিকে বৃক্ষরোপন ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়েছে। স্থানে স্থানে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মান করা হয়েছে,আধুনিক যাত্রী ছাউনী নির্মান করা হয়েছে। আমরা ট্যানারি শিল্পকে ঢাকার বাইরে নিতে সক্ষম হয়েছি এবং রাজধানীর উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে রাজধানীকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে তার উন্নয়ন আরও গতিশীল করেছি। খাল খনন,অবৈধ নদী দখলমুক্ত করতে চেষ্টা করেছি এবং পরিকল্পনা করে সমুদ্রের মাছ আহরণের ব্যাপারে বিধিনিষেধ জারির মাধ্যমে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি করেছি।

খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নঃ

খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নে আমাদের অর্জন উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ এখন ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই সমীহ জাগানো দল।আমাদের দেশ থেকে সাকিব আল হাসান তিন ধরনের ক্রিকেটে একই সময়ে বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার নির্বাচিত হয়ে দেশের পতাকাকে তুলে ধরেছে। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে গর্বের সাথে পা রাখতে পেরেছি,গণিত অলিম্পিয়াডে গোল্ড মেডেল পেয়েছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আর্ন্তজাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে এবং বাংলা একাডেমীতে প্রতি বছর আর্ন্তজাতিক মানের সাহিত্য সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে। এদেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর চলচ্চিত্র নির্মানে যেমন অনুদান দিচ্ছে তেমনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সবাইকে সম্মানিত করছে।

শিক্ষা ব্যবস্থা ও অন্যান্য বিষয়ে উন্নয়নঃ

সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। একটি জাতি শিক্ষিত হলে তবেই উন্নয়ন আরও গতিময়তা পায়। সে লক্ষ্য নিয়ে দেশে অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে,মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। গবেষণাগার নির্মান করা হয়েছে। মেয়েরা যেন সমান ভাবে অবদান রাখতে পারে তাই নারী শিক্ষার জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রাইমারি স্কুলগুলোতে ছেলে মেয়ে সবাইকে উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। বিনামুল্যে বই বিরতণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণতহবিলের মাধ্যমে অসহায়দের সহায়তাকরা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।

আর্ন্তজাতিক প্রশংসাঃ

জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কোথাও আশ্রয় না পেয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা গ্রহণ করেছেন। মাতৃ স্নেহে তাদের লালন করার পাশাপাশি তাদের হারানো অধিকার ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করে আর্ন্তজাতিক প্রশংসা পাচ্ছেন। আর এ কারণেই বিশ্বের অনেক দেশ এখন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রোল মডেল মনে করেন।তাকে বিশ্ব নেতারা উপাধী দিয়েছে মাদার অব হিউম্যানিটি।

শেষ কথাঃ

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বির্নিমাণের পথে আমাদের যত অর্জন তা 2000 শব্দের একটি প্রবন্ধে লিখে শেষ করা যাবে না। সাম্য,মৈত্রী,ভ্রাতিত্ব,যোগাযোগ ব্যবস্থা,অবকাঠামোগত উন্নয়ন,শিক্ষা,শান্তি,প্রগতি,ন্যায় বিচার এবং দুস্থদের কল্যাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের অবদান বলে শেষ হবে না। আগষ্ট শোকের মাস। এ মাসেই আমরা হারিয়েছি সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি আকাশের ওপার থেকে নিশ্চই তার কন্যার এই সাফল্য দেখে আনন্দিত হচ্ছেন। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং গোটা বাঙ্গালী জাতিকে মহাদেব সাহার সেই কবিতার লাইনটুকু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই-

” নত হও, কাঁদো তুমি, 

আজ শোক, আজ বর্ষা মাস 

কী করে ভূলব বলো কলঙ্কের সেই ইতিহাস? 

বাংলার নদনদী ভরে ওঠো, 

রাখো ভরে দুচোখের জল 

ধোয়াও চোখের জলে রক্তমাখা তাঁর।”