Friday, March 29, 2024
Homeবিবিধএকটি অনাকাঙ্খিত এসএমএস

একটি অনাকাঙ্খিত এসএমএস

সকালের নাস্তা সেরে সবে মাত্র পত্রিকাটা হাতে নিয়েছি। টুংটাং শব্দ করে মোবাইলে একটা মেসেজ এলো। ফোন কোম্পানীর বিরক্তিকর মেসেজ ইদানিং এতো বেড়ে গেছে যে বলে বুঝানো যাবে না। তবুও মোবাইলটা হাতে নিয়ে কী মেসেজ এসেছে চেক করতে গিয়ে ভিমরি খাওয়ার দশা! আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি ভিমরতিতে ধরছে বুঝে উঠতে কয়েক মিনিট সময় লেগে গেলো। গায়ে চিমটি কেটে দেখতে চেষ্টা করলাম এটা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন। বুঝলাম স্বপ্ন নয় বরং সত্যি! মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি..সরকারের তরফ থেকে আমার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। আমার মন খুশিতে ভরে গেল। ঘর থেকে বের হলাম আর চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে বললাম,সবাই শোনো, দিন বদলে গেছে, আমার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা এসে গেছে।রুম থেকে বউ বেরিয়ে বললো, অত খুশির কি আছে, আমার এ্যাকাউন্টেও ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে। এই যে মেসেজ দেখ।একটু অবাক হলাম, ভাবলাম আশেপাশে সবাইকে গিয়ে মহা খুশির এই ঘটনাটা বলি। আমার বাড়ির পাশের বাড়িতে  থাকে দলিল উদ্দিন।সামনে পেতেই তাকে ঘটনাটা বললাম। তিনি আমায় বললেন, বেশি উত্তেজিত হয়ো না, আমাদের এ্যাকাউন্টেও ৫০ লাখ জমা হয়েছে।

আমার খুশি সব উড়ে গেল। ভাবলাম যাই, বাজারে গিয়ে মহিতোষের দোকান থেকে কিছু মিষ্টি নিয়ে আসি।বাজারে গিয়ে দেখলাম, দোকান বন্ধ। পাশের একজনকে জিজ্ঞেস করলাম,ও ভাই এই মিষ্টির দোকান বন্ধ কেন?সে বললো,মিষ্টি দোকানদারের আর দোকানদারি করার কি দরকার। তার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ এসে গেছে। মিষ্টি যেহেতু কিনতেই পারলাম না তাই ভাবলাম একটু নিউ মার্কেটে যাই, সেখান থেকে কিছু নিয়ে আসি। সেকি! কোনো দোকান পাট খোলা নেই।ওনাদের এ্যাকাউন্টেও নাকি ৫০ লাখ এসে গেছে…..।প্রচন্ড খিদে পেয়েছে ভাবলাম এখানে তো দোকান পাট বন্ধ। সামনের দিকে যাই, ভালো কোন হোটেলে তৃপ্তি করে খাওয়া যাবে।সামনে যতই যাই সবই দেখি ফাঁকা। হোটেলের বাইরে দাড়িয়ে থাকা স্বাগত জানানোর সেই লোকও নেই, যে কাস্টমার দেখলেই সালাম ঠুকে ওয়েলকাম করেন, শপিং মলের সিকিউরিটিও নেই। সবার এ্যাকাউন্টেই ৫০ লাখ এসে গেছে। মার্কেটে কেউ নেই।সবজি ওয়ালা, চা ওয়ালা, শরবত ওয়ালা,ফাস্টফুড ওয়ালা কেউ নেই। সব কিছুই বন্ধ।সকলের ঠিকানা এখন ব্যাঙ্কে ৫০ লাখ টাকা তোলার জন্যে। কেননা এখন আর কারো কাজ করার দরকার নেই, সবার কাছেই ৫০ লাখ আছে।

আমার এক বন্ধু ফোন করে বললো,আমি জব ছেড়ে দিয়েছি, আমার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা আছে। আমার এক বড় ভাই ফোন করে বললো,আমার আর্ট স্কুল অফ করে দিয়েছি! আমার আশেপাশের ছোট বোন আর স্কুলে যাচ্ছে না। আমার বন্ধু মুবাশ্বের টিউশন পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে। নিপা নামের মেয়েটিও আর কলেজে যায় না,ইভান আর জব খু্ঁজে না,শ্রমিকরা আর কারখানায় যায় না, কলকারখানা সব বন্ধ।সবার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা জমা আছে। সবাই এখন বড়লোক। সবাই সুর তুলছে, গান করছে, নৃত্য করছে…..বিকেলে হাটতে হাটতে মাঠের দিকে গেলাম, কৃষকরা সবাই কাজ ছেড়ে বাড়িতে। কেউ নেই জমিতে। এখন তাদের রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করার আর দরকার নেই। তারা সবাই বড়লোক হয়ে গেছে। সবার এ্যাকাউন্টেই ৫০ লাখ টাকা।৭ দিন পর দেখা গেল খিদের জ্বালায় লোক কাঁদছে। কেননা, জমি থেকে কেউ ফসল তুলছে না, সমস্ত দোকানপাট বন্ধ, হোটেল, মেডিক্যাল সব বন্ধ। অসুস্থ হয়ে মানুষ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কেননা, খাবার নেই, ডাক্তার নেই। পশুরাও না খেতে পেয়ে মরছে। জমিতে সবুজ ঘাস নেই, সোনালী ফসল নেই। শিশুরা খিদের জ্বালায় কাঁদছে, গোয়ালা দুধ দিচ্ছে না বলে।মানুষ এখন ছুটছে মুঠো মুঠো টাকা নিয়ে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে পকেটে টাকা নিয়ে।কাঁদছে মানুষ লক্ষ টাকা হাতে নিয়ে আর বলছে,এই ভাই নাও ১০ হাজার টাকা, আমাকে ২০০ গ্রাম দুধ দাও। দুদিন বাচ্চাটা না খেয়ে আছে।১০ দিন বাদে মানুষ না খেতে পেয়ে মরছে। কিছু কিছু লোক টাকার ব্যাগ নিয়ে ঘুরছে রাস্তায়। এই নাও ভাই ৫ লাখ টাকা, আমাকে ৫ কেজি চাল দাও। ১০ দিন থেকে না খেয়ে আছি।

সব বাজার হাট বন্ধ হয়ে গেছে। শাক সবজি খাবার দাবার কারো কাছেই নেই। সবদিকে শুধু মৃত্যুর ছবি দেখা যাচ্ছে।আমিও আমার ৫০ লাখ টাকা নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি, নাও ভাই নাও ৫০ লাখ নিয়ে নাও,তবুও কিছু খাবার দাও।কে কার টাকা নেবে, খাবার কারো কাছেই নেই। মানুষ মানুষের দিকে তেড়ে আসছে হিংস্র সিংহের মত। মনে হচ্ছে, মানুষ মানুষকে খাবে।অচেনা একলোক তাড়া করেছে আমাকে, চিবিয়ে খাবে বলে। ছুটছি আমি। আমি ক্ষুধার্ত মানুষ, কতটা আর ছুটব?পড়ে গেলাম হোঁচট খেয়ে. ..মা গো করে চিৎকার করে উঠলাম…..বউ তখন ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে কি হলো তোমার ? সকাল হয়ে গেছে, ঘুম থেকে উঠো, চোখে মুখে পানি দিয়ে আসো। এই তুমি বাচাঁও বাঁচাও বলে চেঁচাচ্ছিলে কেন? কোন খারাপ স্বপ্ন দেখছিলে নাকি ?আমি বললাম, না, খারাপ নয়, ভালো দিনের স্বপ্ন। গরিব আমরা, কিন্তু ঘরে দুমুঠো খাবার তো আছে,তৃষ্ণার পানি তো আছে,শিশুরা খেলছে,পশুরা মাঠে ঘাস খাচ্ছে,দোকানে ভিড় আছে,যানবাহন চলছে তো চলছে,মানুষের সমাগম চলছে,বাগানে ফুল ফুটছে,প্রকৃতি হাসছে…..। অনেকে ভাবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কেন ধনী গরীব সুষ্টি করছে ?সবাইকেতো চাইলে ধন সম্পদ দিতে পারতো।সবাইকে সুখ শান্তি দিতে পারতো।বাস্তবতা হল ধনী গরীব বৈষম্য আছে বিধায় এখনও পৃথিবী টিকে আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে।সবাই ধনী হলে কি হতো দেখেছেনত।

৯ জানুয়ারি ২০১৯

উত্তরা,ঢাকা, বাংলাদেশ।

Most Popular